Skip to main content

আমাদের মওকা


মওকা মওকার লেবুটা শিলনোড়ায় বেটে সুপার-ছিবড়ে করে ফেলা গেছে। বর্ডারের দু'দিকেই ম্যাচ নিয়ে যে সব ভিডিও ও বিজ্ঞাপন তৈরি হচ্ছে তা'তে হিউমর ও রুচি দু'টোরই ঘামাচি-আক্রমণে মৃত্যু হওয়া উচিৎ।

এই "আমি তোর বাপ" স্তরের কথায় নাকি দুর্দান্ত চালাকি রয়েছে। পাকিস্তান যদি বাংলাদেশের বাবা হওয়ার দাবী করে, তা'হলে কানে কী বিশ্রীই না ঠেকবে, তাই না? আর ভারতবর্ষ আরও প্রাচীন বলে অহংকার? আরো সুগভীর তার চরিত্র ও ইতিহাস? গর্ব তো ভালোই, কিন্তু সে'টা এ'ভাবে ফাটা মাইক বাজিয়ে অন্যের গায়ে 'আমি তোর বাপ' মার্কা জলবেলুন ছুঁড়ে না বললে প্রকাশ করা যায়না? হরপ্পা মহেঞ্জোদারোর মালিকানা ফলিয়ে পাকিস্তানও দাদাগিরি (থুড়ি...বাবাগিরি) ফলাবে বোধ হয় এ'বার। ওরা অভিনন্দনের চায়ের কাপ তুলে কথা বলেছে তাই আমরাও অভিনন্দনের দাড়িগোঁফ ওদের মুখে চাপিয়ে প্রতিশোধ নিয়েছি; এতে কি অভিনন্দনের প্রতি বেশ জমকালো কুর্নিশ জানানো হল আদৌ? ক্লাস ওয়ানের ঝগড়াতেও এর চেয়ে বেশি গভীরে গিয়ে কথা চালাচালি হয়।

'বিশ্বকাপ হারলে হারুক, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জিতলেই হল'; এ'তে হিউমর নেই, দেশের প্রতি ভক্তি নেই আর নেই ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা। পাকিস্তান ম্যাচ এলেই আমাদের পেঁদিয়ে-হাতের-সুখ-করা-মব্ মানসিকতা টুক করে বেরিয়ে আসে (আমি নিশ্চিত পাকিস্তানেও ব্যাপারটা অন্যরকম নয়)।একদিকে আমাদের দেশের ক্যাপ্টেন গ্যালারির দিকে তাকিয়ে আবেদন করছেন যাতে ভারতীয় দর্শকরা স্টিভ স্মিথকে গালিগালাজ বন্ধ করে অভিবাদন জানায়। আর অন্যদিকে আমরা বড়মুখ করে বলছি 'আমরা পাকিস্তানের বাপ, তাই আমরাই জিতব'!

এ'সব ছেলেমানুষি এবং সোশ্যালমিডিয়া মাস্তানি বন্ধ করে পাকিস্তান ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের ব্যাপারে মনে সমীহ আনলে খেলাটা আরো উপভোগ্য হবে; এ সহজ ব্যাপারটা কবে যে আমি ও আমরা ঠাহর করতে পারব। বাবর আজমের একটা ভালো শটকে 'তোফা' বলা মানে পাকিস্তানের যাবতীয় অন্ধকারকে সমর্থন জানানো নয়; এই সরল সিধে সত্যটা স্বীকার করে নিতে যে আমাদের কী আপত্তি!

পুনশ্চঃ
নিজের দেশের/নিজেদের দোষ বেশি করে দেখব; বেশ করব। কারণ নিজের দেশের ভালো-মন্দ, শিষ্টাচার, পাগলামোতে আমার যোগাযোগটা সোজাসাপটা। স্টার স্পোর্টসের মত নামীদামী ব্রডকাস্টারকেও যখন এমন সস্তা বিজ্ঞাপন বানাতে হয়, তখন সে বিজ্ঞাপনের 'মার্কেট' সম্বন্ধে চিন্তিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে বইকি।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু