Skip to main content

ক্যাপ্টেন কোহলি


হুব্বারত্ন সমর্থক আমি। ঝোঁকের মাথায় হইহল্লা করে আর র‍্যান্ডম সমস্ত কুসংস্কার আঁকড়ে থেকে খেলা দেখি। ভারত জিতলে মাইনের বাড়ার আনন্দ আর হারলে পিএফে ইন্টারেস্ট কমে যাওয়ার হাহাকার অনুভব করি। গভীর অ্যানালিসিসের চেয়ে চটকদার হেডলাইন আমায় সহজে গলিয়ে ফেলে, পরিসংখ্যানের চেয়েও বেশি প্রিয় হয়ে দাঁড়ায় গপ্পগুজব এবং ব্যাক্তিগত বায়াস (bias)। বিভিন্ন পরিসংখ্যানের খাপছাড়া টুকরোকে সুবিধেমত ব্যবহার করে থাকি শুধু নিজের বায়াসকে প্রমাণ করার স্বার্থে।

কালেভদ্রে কেউ কেউ অবিশ্যি মনের মধ্যে ঢুকে যাবতীয় বায়াসের জঞ্জাল ঝেঁটিয়ে সাফ করে, যুক্তির ফিনাইল ঢেলে মনটা ধুইয়ে দেন। যেমনটা করেছেন ক্যাপ্টেন কোহলি।

ব্যাটসম্যান হিসেবে তাঁকে হাজার-স্যালুট জানিয়েও ক্যাপ্টেন কোহলির প্রতি খুঁতখুঁত বহুদিন পুষে রেখেছি৷ হাজার হোক, একসময় কোহলি বলতেই একটা বখাটে মুুখ ভেসে উঠত (যুক্তি বা তুলনায় যাবেন না প্লীজ, ব্যাপারটা বায়াস)। তাছাড়া ধোনির মত ঠাণ্ডা মেজাজ নেই; মাঠের মধ্যে হাত-পা ছুঁড়ে একাকার কাণ্ড, আগ্রাসনে মাত্রাবোধ নেই মোটে; কোহলির কেরিয়ারের শুরুতে এমন ধারণাটাই বদ্ধমূল ছিল। এমন কি কোহলি-কুম্বলে-বিবাদ পর্ব পর্যন্ত মনে হয়েছে 'এর বাড়াবাড়ির সীমা নেই'। মনে হবে নাই বা কেন? কুম্বলে আমার ছেলেবেলার ক্রিকেট দেখার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে, আর কোহলি তো এই সেদিনের ছোকরা। আর ওই, হুব্বারত্ন হলেও মাঝেমধ্যে নিজেকে ইয়ান চ্যাপেল বলে মনে হবেই; নয়ত ক্রিকেট-ভক্ত হব কী করে। মনে হত কোহলির লম্ফঝম্প যতটা, ওর ক্যাপ্টেন্সি-মস্তিষ্ক কি আদৌ ততটা ক্ষুরধার?

কিন্তু এই সমস্ত বায়াসকে আঁশবটিতে কুচিয়ে ডুবোতেলে ভেজে চিলি সস মাখিয়ে চিবিয়ে খেয়েছেন বিরাটবাবু। নিজে জিনিয়াস-স্তরে একটানা ব্যাটিং করে চলেছেন শুধু তাই নয়।কোহলির হাঁটাচলা-চাউনি-হাবভাব; সমস্ত দেখলেই মনে হয় সেনাপ্রধান শত্রুপক্ষের কামানের সামনে দাঁড়িয়ে সৈন্য পরিচালনা করছেন। অথচ, সেই প্যাশন থাকলেও বাড়াবাড়ি আগ্রাসন নেই। আগে যাও বা ছিল, এখন যে ক্যাপ্টেন কোহলিকে দেখি তাঁর যাবতীয় আগ্রাসন নিজের এবং নিজেদের খেলা নিয়ে, বিপক্ষকে ছোট করতে নয়। কেন মনে হয় সে'টা? উদাহরণ প্রচুর। এই যেমন রাবাদার 'কোহলি ইম্যাচুয়র্ড' মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর পরিশীলিত মেজাজে বলা কথাগুলো। এ'রকম ভাবে এক নতুন বিরাট বারবার মাথা তুলে দাঁড়িয়েছেন। আরসিবির মত একটা হেরো দলের হয়ে সীজন কাটিয়েছেন, তাঁর কথাবার্তায় মাঝেমধ্যেই ফুটে উঠেছে রাগ ও হতাশা; কিন্তু কখনই নেগেটিভ মেজাজ প্রকাশ পায়নি। যত দিন যাচ্ছে তত বিরাটের কথা থেকে 'আমি' কমে 'আমরা' সেন্টিমেন্টটা বড় হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

আর নিজের সমর্থকদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে বিপক্ষের ( স্টিভ স্মিথের) কাঁধে হাত রাখা; এই উদাহরণ নিশ্চিতভাবেই ক্রিকেটে বেশ বিরল। "ক্রিকেট ইস আ জেন্টলম্যানস গেম" ; তলিয়ে দেখলে এই মিথটা দুরমুশ হয়ে যেতে বাধ্য। তবে বিরাটরা যতবার এমন কাজ করবেন, ততবার সমর্থক এবং ক্রিকেট-ভক্ত হিসেবে আমাদের বুক গর্বে ফুলে উঠবে; তেমনটাই তো হওয়া উচিৎ।

এত কিছু ফেনিয়ে বলার একটাই উদ্দেশ্য; ব্যাটসম্যান, অধিনায়ক এবং ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিরাট কোহলি নিজেকে যে'ভাবে শানিয়ে তুলেছেন; সে'টা ভেবে সত্যিই গর্ব বোধ করি।

কোহলি ইজ মাই ক্যাপ্টেন; এ'টা ভাবতে আজকাল কী ভালোই না লাগছে।
(ছবিটা বিসিসিআইয়ের ট্যুইটার হ্যান্ডেল থেকে সংগৃহীত)

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু