Skip to main content

অলোকবাবুর ব্যবসা

- আরে, অলোকবাবু! এনেছেন কিছু?
- নয়ত এই ভরদুপুরে দেড় ঘণ্টা মিনিবাস ঠেঙিয়ে আসি? বাপরেবাপ। আজ বোধ হয় আটত্রিশ ডিগ্রি চলছে।
- দামী জিনিস পকেটে নিয়ে মিনিবাসে এলেন?
- দেখুন মিস্টার মিত্র। ট্যাক্সি এক অতি লাটসাহেবি ব্যাপার। আমার গুরুদেব মাঝেমধ্যেই বলেন, ট্যাক্সি ধরার অভ্যাস মানুষকে বখিয়ে দেয়।
- সেই তারাপীঠের ভদ্রলোক?
- সিদ্ধপুরুষ মশাই।
- কই?
- কী কই?
- বের করুন! মালটা।
- ওহ্। এক মিনিট। এই যে।
- এ'টা?
- আজ্ঞে।
- এই নস্যির ডিবেটা?
- এ'টাই।
- এ'তো রূপোর মাল। সস্তা।
- হ্যাঁ, কোনো গবেটের কাছে এর দাম হাজার খানেকের বেশি না। কিন্তু সমঝদারের কাছে, এ জিনিস অমূল্য।
- এই, আপনি ইয়ার্কি করছেন?
- বাইশ বছর এই লাইনে আছি। মিরজাফরের লুঙ্গি টু নেতাজীর চশমার খাপ; কী না যোগাড় করে দিয়েছি। বার্ডোয়ান রোডের সেই শেঠ আমার কাছে চেয়েছিলেন গান্ধীর এক্সকুইসিট কিছু। গান্ধীর তিনবার দাড়ি কামানো ব্লেড আমি তাকে জোগাড় করে দিইনি? আমি ইয়ার্কি-ঠাট্টার লোক হলে এ'সব হত?
- কিন্তু রবীন্দ্রনাথ নস্যি নিতেন? ধুস, কোথাও পড়িনি..।
- গোপন নেশা। বোলপুরের বেস্ট কেপ্ট সিক্রেট।
- না অলোকবাবু, মন সরছে না। আমার সেক্রেটারি দেবুকে একটু রিসার্চ করতে বলি।

***

মন খারাপ করে মিলেনিয়াম পার্কের বেঞ্চিটায় গোটা বিকেলটা কাটিয়ে দিলেন অলোক চট্টরাজ। মিত্রবাবুর সেক্রেটারি দেবু বিট্রে করলে; নস্যির কৌটের ওপর তিরিশ পার্সেন্ট কমিশন চেয়েছিল, অলোকবাবুর কুড়ির বেশি দিতে চাননি। সেই রাগে দেবু ব্যাটাচ্ছেলে মিত্রবাবুকে রিপোর্ট দিলে যে রবীন্দ্রনাথের নস্যির কেসটা স্রেফ বুজরুকি ।হাজার পঞ্চাশের দাঁও গেল ঝুলে। আগ্রওয়ালের কাছে একবার যেতে হবে, একটা পুরনো মাদুলি হাতে এসেছে; সে'টার যদি কিছু হিল্লে হয়।

এমন সময় বেঞ্চিতে ঝুপ করে এসে নামলেন গুরুদেব। স্ট্রেট ফ্রম তারাপীঠের শ্মশান; বোঝাই যাচ্ছে।

- সিগারেট দিবি রে একটা?
- আপনি গোপন বিদ্যা ব্যবহার করে তারাপীঠ টু কলকাতা এলেন সিগারেট চাইতে?
- আছে কি?
- আসুন।
- লাইটার দে।
- দিব্যপুরুষ, লাইটার ছাড়া বিড়ি ধরাতে পারেন না?
- ওরে, তন্ত্র দিয়ে এই গঙ্গার পেটে আলসার গুঁজে দিতে পারি। কিন্তু সিগারেটে লাইটার চাই বাপ। দে দে।
- এই যে দেশলাই। আর এই আপনার নস্যির কৌটো।
- এ কী! মিত্তির কিনলে না?
- ডাহা ঢপের একটা লিমিট থাকে তো?
- আহ্, চটছিস কেন। সুভাষবাবুর এঁটো টুথপিক বেচে দিলি, নস্যিরকৌটোটাও ভেবেছিলাম...।
- কোন দিন মারধোর খাওয়াবেন মাইরি।
- কী যে বলিস্। তা বাবা অলোক, একটা ব্লেন্ডার্স প্রাইড কিনে দিবি? নিপ।
- পারলাম না।
- বড্ড টান পড়েছে রে। আজকাল আর শ্মশানের ছাই বেচে আয় হচ্ছে না। রামদেবদা চ্যবনপ্রাশ বিক্রি শুরু করতেই মার্কেটে এক্সপেকটেশন পালটে গেছে।
- গুরুদেব, আমি তারাপীঠ যাব। সন্ন্যাস ।
- বিজনেস কী হবে?
- এ'খানেও ছাই বেচি। ও'খানেও তাই।
- সাধনা করতে পারবি?
- কেন পারব না?
- তা অবিশ্যি ঠিক। ক্যালক্যাটা সামলে নিলে, তারাপীঠের শ্মশান তো ছেলেখেলা।
- আপনি কি আমায় ওই জাদু দিয়ে হুশ করে এ বেঞ্চি থেকে তারাপীঠ নিয়ে যেতে পারবেন? নাকি আমি ট্রেন ধরব?
- এখনই? উঠলো বাই তো কটক যাই? ব্যাগ গোছাবি না?
- সঞ্জীব বলেছেন সংসার ছাড়তে হলে পুরনো ব্যান্ডেডের মত নিজেকে উপড়ে ফেলতে হবে, স্যাট করে।
- ভেবে দেখ।
- যাবই।

***

মিনিট দুয়েক ঝিম লেগেছিল, জ্ঞান ফিরল ট্রেনের কামরায়৷ সামনে এক শৌখিন দাড়িওয়ালা লোক দামী সিল্কের পাঞ্জাবি আর লুঙ্গি পরে বসে। গোটা কামরায় আর কেউ নেই। ট্রেনের ভিতরে কেমন মায়াবী নীল  আলো, আর ধুনোর গন্ধ।

- কী? তা'হলে জ্ঞান ফিরল ভায়া? অবিশ্যি প্রথমবার এমন ঝিমুনি হবেই।
- এ'টা কোন ট্রেন?
- তন্ত্রলোকাল। রোজ তারাপীঠ পৌঁছয় সন্ধ্যে সাতটা দশে। রামশঙ্কর তান্ত্রিক তোমায় মিলেনিয়াম পার্ক থেকে আমাদের কামরায় তুলে দিলে। তোমার প্রথম তন্ত্রযাত্রা। সবে বিবাগী হয়েছ নাকি।
- এ কামরায় শুধু আমরা দু'জন, তাই না?
- না, আর একজন আছে। তিনি সামান্য আড়ালে রয়েছেন। ওহ, আমার পরিচয় দিয়ে নিই, আমি মিরজাফর।
-  ওহ্, তাই তো। এ লুঙ্গির কোয়ালিটি আমার চেনা। আর একজন কে আছেন কামরায়?
- রবীন্দ্রনাথ, বাথরুমে লুকিয়ে নস্যি নিচ্ছেন। আমায় যদিও বলেছে ওর নস্যি নেওয়ার অভ্যাস নিয়ে নতুন লোকের সঙ্গে বেশি কথা না বলতে। আমিও কথা দিয়েছিলাম বটে। তবে জানোই তো ভায়া অলোক, বিশ্বাসভঙ্গ করাটা বেশ মজাদারই বটে। কী বলো, হ্যাঁ?

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু