Skip to main content

হুজুগিস্টস

- কী খবর রে ?
- আর বলিস না ভাই, ব্রাজিল সেমিফাইনালের আগেই হেরে গেল, বিশ্বকাপটাই কেমন যেন ম্যাড়মেড়ে হয়ে গেল।
- তুই ফুটবল নিয়ে বড় বড় কথা বলছিস? তুই?
- না না, এ কী। বড় বড় কথা কই, খারাপ লেগেছে তাই বলছিলাম...। আড়াইশো টাকার চকোলেট বোম কিনেছিলাম ভাই..। পরশু মেজদা ফলস দাঁতটা লেগে যাবে, সে'দিনই সেগুলো ফাটাবো না হয়।
- তোদের কথাবার্তা শুনলে গা জ্বলে যায় মাইরি।
- ও মা! কেন? তুই বুঝি বেলজিয়ামের ভক্ত?
- শোন শোন, আমি ফুটবলের ভক্ত। তোদের মত চার বছরে একবার হুজুগ বেচে খাওয়া পাবলিক নই।
- তা বটে, ওয়ার্ল্ড কাপ ছাড়া ফুটবল আর তেমন দেখি কই...তবে...।
- যত দ্যাখনাই ফুটবল কেত। ক'টা প্লেয়ারের নাম জানতিস রে বিশ্বকাপ শুরুর আগে? মেসি মেসি করে দেখলাম সে'দিন ফেসবুকে হাউহাউ করে কাঁদলি। লজ্জা করল না রে? বার্সার ক'টা ম্যাচ দেখেছিস গত বছর?
- আসলে ওয়ার্ল্ডকাপের ম্যাচগুলো খুব মনে দিয়ে দেখি কিন্তু...।
- থাম থাম। প্রেমিয়ার লিগের খবর রাখিস? জাপানিদের ফুটবল সেট-আপ কতটা কম্পিটিটিভ, সে'টা জানিস? খালি আজেবাজে বাতেলা।
- তা বটে রে। তবে বড় ভালো লাগছে খেলাগুলো..।
- তা স্রেফ তুই হাড়হাভাতে বলে..। যত্তসব উজবুকদের হুজুগ।
- যাকগে, গতকাল দেখলি? টিট্যুয়েন্টি সিরিজে ইংল্যান্ড কেমন কামব্যাক করলে?
- এই শুরু হল...।
- কেন? ক্রিকেটে কী দোষ?
- রঞ্জি আর কাউন্টি কতটা ট্র‍্যাক করিস যে তোর থেকে টিট্যুয়েন্টি জ্ঞান শুনতে হবে?
- যাহ শালা, জ্ঞান কোথায় দিলাম?
- ওই হল, সবেতেই বেশি এন্থু। তোদের মত লোককে বিষেন সিং বেদী কী বলে জানিস?
- আহ, থাক। জেনে কাজ নেই। তার চেয়ে বরং চ', ভালো দেখে একটা সিনেমা দেখে আসি। ঘরে বসে গা'টা কেমন ম্যাজম্যাজ করছে?
- ভালো দেখে একটা সিনেমা? রিয়েলি?
- এ'বার কী হল?
- কী বুঝিস তুই ভালো সিনেমার? একট সিনেমার ভালো খারাপ তুই কী বুঝিস বল দেখি? ক্যামেরা অ্যাঙ্গেল নিয়ে সামান্য পড়াশোনা করেছিস? ত্রুফোর দোষত্রুটি নিয়ে কোনোদিন মাথা ঘামিয়েছিস? সত্যজিতের পাতি টেম্পলেটে ফেলা চারটে সিনেমা দেখে নিজেকে আঁতেল ভাবিস, তুই চিনবি ভালো সিনেমা?
- চিনব না?
- অবভিয়াসলি না।
- মানে, যদি ভালো লাগে...।
- ভুল ভালো লাগে। তোরা চিরকাল পাতি আর ইরিটেটিংই থেকে যাবি। ডিসগাস্টিং হুজুগেস।
- ইয়ে সিনেমাটা বরং বাদ থাক। মা জব্বর আলুর দম করেছে, এক বাটি নিয়ে আসি, টেস্ট কর।
- কাকীমার রান্না করা? আলুরদম? মেগা-ডেলিশাস তো। ক্যুইক, ট্যু বাটিস প্লীজ।
- অবশ্য, ইয়ে; নাহ্, আলুরদমটা বাদ থাক রে।
- সে কী! হোয়াই?
- আলুরদমের জেনেসিস বা আলুর চাষের টেকনিক, এ'সব কিছুই আমার মা ঠিক জানে না রে। কাজেই, মায়ের রান্না আলুরদম খাওয়াটা ঠিক হবে ভাই?

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু