Wednesday, July 27, 2016

ঘিলুপাড়ার পোস্টমাস্টার

-          পোস্টমাস্টারদা। ও পোস্টমাস্টারদা। শুনছেন? বলি ও...।
-          ধ্যাত্তেরি। দুপুরের বেলায় অল্প জিরিয়ে নেবো তারও উপায় নেই। কী চাই?
-          আমি হৃদয়পুর থেকে আসছি।
-          অ। হৃদয়পুর থেকে আসা হয়েছে? তবে তো ভারি কাণ্ড করলে দেখছি। বলি মাথায় কুলো ঠেকিয়ে বরণ করতে হবে নাকি? মুড়ি বাতাসা জল দিয়ে দাওয়ায় বসাতে হবে?
-          আহ! চটছেন কেন! এই দুপুর রোদে কেই বা সাধ করে বারো মাইল পথ ঠেঙিয়ে ঘিলুপাড়া পোস্টাপিসে আসতে চেয়েছিল। নেহাত বড়বাবু পাঠালেন, জরুরী তার। এখুনি না করলেই নয়।
-          তার? টেলিগ্রাম?
-          আর্জেন্ট।
-          অ। তা নর্মাল আর্জেন্ট না সুপার আর্জেন্ট?
-          সুপার। যত তাড়াতাড়ি যায় আর কী।
-          ডবল দাম লাগবে।  সত্যি না সাজানো?
-          আজ্ঞে?
-          বলছি তারের বয়ান সত্যি না সাজানো?
-          সাজানো।
-          বটে? চারগুণ দাম লাগবে।
-          চারগুণ?
-          চারগুণ। আর ইয়ে, সাজানো বয়ান লেখা আছে না কি আমায় সত্যি থেকে বদলে সাজিয়ে নিতে হবে?
-          আমি চিরকুটে সত্যিটা লিখে এনেছি। আপনি একটু সাজিয়ে দেবেন’খন।
-          সাজিয়ে দেওয়া? পাঁচগুণ দাম।
-          পোস্টাপিস না কালু ডাকাতের ডেরা গো?
-          না পোষালে সত্যি টেলিগ্রাম পাঠিয়ে দাও। ল্যাঠা চুকে যায়।
-          ও বাবা! বাবু পইপই করে বলে দিয়েছেন, যত দাম লাগে লাগুক। সাজানো তার পাঠানো চাই, আর্জেন্ট। সত্যি তার গেছে কী চিত্তির।
-          অ। কই দেখি।
-          কী?
-          বয়ানটা! সত্যি বয়ান। যে’টা পালটে সাজিয়ে তার হবে। কী মুশকিল।
-          ওহ্‌। এই যে!
-          দেখি। “যাও মত, টিকিট ক্যান্সেল কর লো! বাবু! যাস না! প্লীজ। কেউ না দেখুক, তুই তো জানিস! আমি খতম হয়ে যাই। কেউ দেখতে পায় না। আমি খতম হয়ে যাই। টিকিট ক্যান্সেল কর লো। মত যাও”। এই হচ্ছে অরিজিনাল বয়ান, তাই তো?
-          আজ্ঞে। এ’টা সত্যি। এবারে সাজিয়ে দিন।
-          বেশ। অরিজিনাল বয়ান ছিল “যাও মত, টিকিট ক্যান্সেল কর লো! বাবু! যাস না! প্লীজ। কেউ না দেখুক, তুই জানিস! আমি খতম হয়ে যাই। কেউ দেখতে পায় না। আমি খতম হয়ে যাই। টিকিট ক্যান্সেল কর লো। মত যাও”। এ’টা সাজিয়ে যে’টা দাঁড়ালো, সে’টা হল; “রিটার্ন টিকিট পরশুর তো? বেশ। সাবধানে যাস। পৌঁছে কল করিস। না ধরতে পারলে জানবি অফিসে ব্যস্ত আছি। টেক্সট ড্রপ করে দিস”। ঠিক আছে? গড়বড় লাগছে না তো কানে?
-          ঘিলুপাড়ার পোস্টমাস্টারের কলমে কি ভুলে থাকতে আছে? দিব্যি হয়েছে। এবার সুপার আর্জেন্ট করে পাঠিয়ে দিন।
-          পাঠিয়ে দেব? পাঁচগুণ দাম লাগবে কিন্তু।
-          অ।
-          সাজানো আর আর্জেন্ট না হলে স্রেফ দীর্ঘশ্বাসে হয়ে যেত। এখন তার ওপরে লাগবে চোখ কটকট, নাকে অল্প সর্দি, বুকের হুশহাশ আর পেটে মোচড়। চলবে?
-          অগত্যা। পাঠিয়ে দিন।
-          দিলাম।

**

-          গুডনাইট বাবু।
-          গুডনাইট।
-          কী রে, আরও কিছু বলার ছিল?
-          আমি? কই?
-          কিছু বলবি বাবু?
-          উঁ...রিটার্ন টিকিট পরশুর তো? বেশ। সাবধানে যাস। পৌঁছে কল করিস। না ধরতে পারলে জানবি অফিসে ব্যস্ত আছি। টেক্সট ড্রপ করে দিস। 

No comments: