Skip to main content

ঘিলুপাড়ার পোস্টমাস্টার

-          পোস্টমাস্টারদা। ও পোস্টমাস্টারদা। শুনছেন? বলি ও...।
-          ধ্যাত্তেরি। দুপুরের বেলায় অল্প জিরিয়ে নেবো তারও উপায় নেই। কী চাই?
-          আমি হৃদয়পুর থেকে আসছি।
-          অ। হৃদয়পুর থেকে আসা হয়েছে? তবে তো ভারি কাণ্ড করলে দেখছি। বলি মাথায় কুলো ঠেকিয়ে বরণ করতে হবে নাকি? মুড়ি বাতাসা জল দিয়ে দাওয়ায় বসাতে হবে?
-          আহ! চটছেন কেন! এই দুপুর রোদে কেই বা সাধ করে বারো মাইল পথ ঠেঙিয়ে ঘিলুপাড়া পোস্টাপিসে আসতে চেয়েছিল। নেহাত বড়বাবু পাঠালেন, জরুরী তার। এখুনি না করলেই নয়।
-          তার? টেলিগ্রাম?
-          আর্জেন্ট।
-          অ। তা নর্মাল আর্জেন্ট না সুপার আর্জেন্ট?
-          সুপার। যত তাড়াতাড়ি যায় আর কী।
-          ডবল দাম লাগবে।  সত্যি না সাজানো?
-          আজ্ঞে?
-          বলছি তারের বয়ান সত্যি না সাজানো?
-          সাজানো।
-          বটে? চারগুণ দাম লাগবে।
-          চারগুণ?
-          চারগুণ। আর ইয়ে, সাজানো বয়ান লেখা আছে না কি আমায় সত্যি থেকে বদলে সাজিয়ে নিতে হবে?
-          আমি চিরকুটে সত্যিটা লিখে এনেছি। আপনি একটু সাজিয়ে দেবেন’খন।
-          সাজিয়ে দেওয়া? পাঁচগুণ দাম।
-          পোস্টাপিস না কালু ডাকাতের ডেরা গো?
-          না পোষালে সত্যি টেলিগ্রাম পাঠিয়ে দাও। ল্যাঠা চুকে যায়।
-          ও বাবা! বাবু পইপই করে বলে দিয়েছেন, যত দাম লাগে লাগুক। সাজানো তার পাঠানো চাই, আর্জেন্ট। সত্যি তার গেছে কী চিত্তির।
-          অ। কই দেখি।
-          কী?
-          বয়ানটা! সত্যি বয়ান। যে’টা পালটে সাজিয়ে তার হবে। কী মুশকিল।
-          ওহ্‌। এই যে!
-          দেখি। “যাও মত, টিকিট ক্যান্সেল কর লো! বাবু! যাস না! প্লীজ। কেউ না দেখুক, তুই তো জানিস! আমি খতম হয়ে যাই। কেউ দেখতে পায় না। আমি খতম হয়ে যাই। টিকিট ক্যান্সেল কর লো। মত যাও”। এই হচ্ছে অরিজিনাল বয়ান, তাই তো?
-          আজ্ঞে। এ’টা সত্যি। এবারে সাজিয়ে দিন।
-          বেশ। অরিজিনাল বয়ান ছিল “যাও মত, টিকিট ক্যান্সেল কর লো! বাবু! যাস না! প্লীজ। কেউ না দেখুক, তুই জানিস! আমি খতম হয়ে যাই। কেউ দেখতে পায় না। আমি খতম হয়ে যাই। টিকিট ক্যান্সেল কর লো। মত যাও”। এ’টা সাজিয়ে যে’টা দাঁড়ালো, সে’টা হল; “রিটার্ন টিকিট পরশুর তো? বেশ। সাবধানে যাস। পৌঁছে কল করিস। না ধরতে পারলে জানবি অফিসে ব্যস্ত আছি। টেক্সট ড্রপ করে দিস”। ঠিক আছে? গড়বড় লাগছে না তো কানে?
-          ঘিলুপাড়ার পোস্টমাস্টারের কলমে কি ভুলে থাকতে আছে? দিব্যি হয়েছে। এবার সুপার আর্জেন্ট করে পাঠিয়ে দিন।
-          পাঠিয়ে দেব? পাঁচগুণ দাম লাগবে কিন্তু।
-          অ।
-          সাজানো আর আর্জেন্ট না হলে স্রেফ দীর্ঘশ্বাসে হয়ে যেত। এখন তার ওপরে লাগবে চোখ কটকট, নাকে অল্প সর্দি, বুকের হুশহাশ আর পেটে মোচড়। চলবে?
-          অগত্যা। পাঠিয়ে দিন।
-          দিলাম।

**

-          গুডনাইট বাবু।
-          গুডনাইট।
-          কী রে, আরও কিছু বলার ছিল?
-          আমি? কই?
-          কিছু বলবি বাবু?
-          উঁ...রিটার্ন টিকিট পরশুর তো? বেশ। সাবধানে যাস। পৌঁছে কল করিস। না ধরতে পারলে জানবি অফিসে ব্যস্ত আছি। টেক্সট ড্রপ করে দিস। 

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু