Skip to main content

ফেরত


ভরদুপুরের গন্ধটা মনে করার চেষ্টা করছিল দীপু। কাজটা সহজ তো নয়। এখন রাত। ছাদে পাতা মাদুরে বছরের এ'সময়টা দানা দানা শিরশির জমতে শুরু করে। বাতাসে ইতিউতি ভাসে পাশের বাড়ির মুসুরির ডালের ফোঁড়ন আর নিচ থেকে উড়ে আসা রিক্সার ক্যাঁচরম্যাচর  পোঁপাঁ।

এ সময়ে এ মাদুরে গা এলিয়ে মনের মধ্যে দুপুর টেনে আনা চাট্টিখানি কথা নয়। তবু। দীপু চেষ্টা করছিল। ছোটমামার পাল্লায় পড়ে গত আড়াই মাস ধরে যোগব্যায়াম করছে দীপু। দিনে আধঘণ্টা করে। যোগার্জিত যাবতীয় কন্সেন্ট্রেশন মুঠো করে ধরে রাতের ছাদে দুপুর নামাতে চাইছিল দীপু।

রাতের ছাদের শীতমনস্কতা অনেকটা পাশ কাটিয়ে দিতে পেরেছিল সে। বিলুদের মেজানাইন ফ্লোরের ঘরটার রোদ্দুর পিঠ অনুভব টানতে চাইছিল দীপু।

আনন্দবাবু কেমিস্ট্রির মাস্টার হলেও, মিস্ট্রিতে তার মাস্টারি কম ছিলনা। তিনি বলেছিলেন "স্মৃতির বাজার! বুঝলে হে দীপুকুমার। বাপ মা বন্ধুরা সেখানে আনাজপাতির মত ঝুড়িতে ঝুড়িতে গিজগিজ করছে। এ মুহূর্ত হাঁকছে 'ইধর আইয়ে, ফ্রেশ হ্যায় সব কুছ"। তো ও মুহূর্ত স্মৃতির আনাজে জল ছিটিয়ে বলে "এদিকে আসেন কত্তা। দ্যাখেন! দ্যাখেন! টাটাকা কাকে বলে"। সে বাজারে। বুঝলে দীপুকুমার, সেই স্মৃতিবাজারে, সেরা বাজারের থলি হচ্ছে দুপুর"।

দীপু দুপুর টানছিলে। যোগবল অতি তাগড়াই জিনিস। এ রাতেও দুপুরে রোদের চিড়বিড় অনুভূত হতে শুরু হয়েছিল তার স্যান্ডো গেঞ্জি ভেদ করে।

ছাতের অবয়ব পালটে অন্যমনস্ক বারোয়ারী তলা ভেসে উঠছিল। দীপু ধুকপুক টের পাচ্ছিল। ছোটবেলা আর পরিপাটি শাড়ির কুচির অমিল চড়াত চড়াত করে ঝিলিক মারছিল গলা বুক দিয়ে। আজকের হঠাৎ দুপুর দিব্যি রাতের ছাদের প্ল্যাঞ্চেটে গোঁত্তা খাচ্ছিল।

বেমক্কা টেনে ধরা আঙুলের ডগায় অঙ্ক পরীক্ষার হলের বেয়াদপি সুবাস টের পাচ্ছিল দীপু।

"আমি এদ্দিন পর এলাম। এসেই দুপুর পালিয়ে দেখা করতে এলাম তোর সাথে। তুই খুশি হসনি বাবু?"।

দীপু অসহায় অর্জুনের মত নীল গোলাপি আঁচলের ফুরফুরের দিকে তাকিয়ে নতজানু বোধ করে।

হাওয়ায় তিরতির ভেসে যায়
"তুই খুশি হসনি বাবু?"
"তুই খুশি হসনি বাবু?"

অর্জুন না দেওয়া চিঠির গাণ্ডীবে মুখ ঢাকে, তার বলা হয়ে ওঠে না যে "এদ্দিন পরে আসা"র গাছ-আকাশ-পাখি তার দেখতে নেই। দীপার্জুনের শ্যেনচক্ষুতে রয়ে যায় শুধু অব্যক্ত  "রিটার্ন টিকিট কবে? রিটার্ন টিকিট কবে?"।

বাতাসে ওদিক  গামছা নরমে ভেসে বেড়ায়
"তুই খুশি হসনি বাবু?"
"তুই খুশি হসনি বাবু?"।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু