Wednesday, January 31, 2024

মেজমামার রিটায়্যারমেন্ট



আমার মেজমামা আজ রিটায়ার করল। অবসরগ্রহণ ব্যাপারটা ভারিক্কি শোনায়। রিটায়ার করাটাও অবশ্য তেমন মোলায়েম নয়৷ যা হোক; সে প্রসঙ্গ থাক।
আমার মেজমামার মত মিষ্টি মানুষ আর হয় না। কিন্তু মামাকে নিয়েও গল্প ফাঁদতে বসিনি৷

মামার স্কুল থেকে আজ একটা "ফেয়ারওয়েল" অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল৷ সে রীতিমতো স্টেজ-টেজ বেঁধে৷ স্কুলের সমস্ত ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক ও অন্যান্য কর্মীরা জড়ো হয়েছিলেন৷ এক্কেবারে প্রাণের উৎসব, মামাকে সবাই সত্যিই ভালোবাসে৷ নিজের মামা বলে বলছি না, ভদ্রলোকের মধ্যে মায়া ব্যাপারটা প্রচুর পরিমাণে রয়েছে৷ মামা ক্লাসে পড়াত না, কিন্তু তা সত্ত্বেও স্কুলের ছেলেমেয়েরা যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মামাকে ঘিরে ধরেছিল; দেখে বেশ গর্ব হলো৷ ছোট ছেলেমেয়েরা ভালোবাসার কাঙাল, আমার মামার মত দু'চারজন মানুষ যেন সব ইস্কুলেই থাকে। 

যা হোক। যা বলতে এই লেখা। মামা আজ রকমারি উপহার পেয়েছে৷ প্রতিটাই রিটায়ারমেন্ট ক্লিশে মেনে। আর উপহারের ছবিগুলো দেখে বারবার মনে হচ্ছিল যে ক্লিশে ব্যাপারটাকে আমরা যতই হ্যাটা করি বা ইন্টেলেক্ট ফলিয়ে ধূলিসাৎ করে দিই; আত্মার যোগ থাকলে সে ক্লিশেতেই প্রাণের আরাম। মামা কী কী পেয়েছে তার একটা লিস্ট করে রাখছি। এই ভালোবাসার ফর্দ আমার ব্লগে থাক।

১। একট রবীন্দ্রনাথের পোট্রেট, ফ্রেম করা।

২। একটা তেলরঙে আঁকা ছবি, ফ্রেম করা।

৩। ছাত্রদের আঁকা মামার পোর্ট্রেট; ফ্রেম না করা।

৪। টাইটান কোম্পানির বানানো হাত ঘড়ি, সোনালি রঙের।

৫। একটা ইলেক্ট্রনিক দেওয়াল ঘড়ি।

৬। কলম৷ 

৭। স্কেচপেনের সেট।

৮। নোটবই।

৯। বই, তিনটে। শ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত, শতরূপে সারদা, আর শ্রীমদভগবদগীতা। 

১০। একটা রেডিমেড জামা, সাদা রঙের।

১১। এক সেট জামা-প্যান্টের পিস।

১২। শংসাপত্র (ফ্রেম করা)। চমৎকার বাঙলায় ভণিতা না করে করে লেখা। আমি বার বার পড়েছি সে'টা।

১৩। সাদা শাল।

১৪। প্রচুর ফুল।

১৫। কিছু চকোলেট।

১৬। এক বাক্স সূর্য মোদকের জলভরা সন্দেশ। 

কোনোটাই তেমন আহামরি দামী কিছু নয়, অথচ প্রত্যেকটাই অমূল্য৷ আমার মামার মধ্যে কোথাও এতটুকুও জলমেশানো নেই, কাজেই ওই জলভরা সন্দেশের বাক্স আর যাবতীয় ভালোবাসাটুকু তার প্রাপ্যই বটে৷ 

No comments: