Skip to main content

শ্যামল সাহার পাগলামো

- এই, আপনি আমার সঙ্গে ইয়ার্কি করতে এসেছেন?
- সে কী ডাক্তারবাবু, আপনি পাড়ার একজন রেস্পেক্টেড মানুষ৷ আপনার সঙ্গে ঠাট্টা করব? তা'ছাড়া আমি এমন একটা ট্র্যাজিক সমস্যার কথা বললাম, সে'টাকে এ'ভাবে উড়িয়ে দিচ্ছেন কেন৷
- দেখুন শ্যামলবাবু৷ আপনার দরকার ওঝার৷ সে এসে ঝ্যাঁটাপেটা করলে তবে আপনার মাথা থেকে এই বিটকেল ভূতটা নামবে৷
- আপনার ধারণা আমি ভুলভাল বকছি?
- ধারণা? না৷ আমি শ্যিওর৷
- আমায় অমনভাবে ঠেলে সরিয়ে দেবেন না প্লীজ৷
- আমি আর একবার গুছিয়ে বলি? আপনি বেড়ালের ভাষা বুঝতে পারছেন, এ'টাই আপনার রোগ, তাই তো?
- স্পষ্ট৷ ক'দিন ধরেই হচ্ছে৷ এই যেমন স্বপন জোয়াদ্দারের খয়েরি রঙের বেড়ালটা কাল রাত্রে আমায় "মিচকে শয়তান" বলে টোন কাটলে৷ বিশ্বাস করুন, আমি স্পষ্ট শুনেছি৷ আবার ওই মোড়ের মাথায় যে বেঢপ সাইজের হুলোটা ঘুরঘুর করে, সে রীতিমত সদালাপী৷ আজ সকালে আমি রতনের দোকানে বসে চা খাচ্ছিলাম৷ আমার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় শুধোলে, "ক'টা বাজে কাকা"? আমি স্যাট করে বললাম "পৌনে আট"৷ বলেই বুক কেঁপে উঠল৷ বেড়ালের সঙ্গে গপ্প জুড়েছি? কিন্তু উত্তর দিয়ে ফেলেছি, তাই দু'চারটে কথা বলতেই হল৷ ওই, ওয়েদার, পলিটিক্স, ইত্যাদি৷ যাওয়ার আগে সে হুলো বলে গেল "রতনমামা বড্ড কেয়ারলেস৷ আমি যে দুধ চেটে গেলাম, সে'টা দিয়ে চা বানিয়ে খদ্দেরদের গেলাচ্ছে"। কী ডেঞ্জারাস ভাবুন ডাক্তারবাবু৷
- শ্যামলবাবু৷ এই, একটু চুপ করবেন? আপনার ফীজ আমার চাই না৷ এ'বারে আসুন দেখি৷
- ডাক্তারবাবু...।
- প্লীজ৷ আর না শ্যামলবাবু৷ আসুন এ'বারে।
- বেশ৷
***
"বেশ করেছেন ডাক্তারবাবু। শ্যামল সাহার পাগলামোটা দিনদিন মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে"।
মাথা নাড়লেন ডাক্তার, " শ্যামলবাবু সজ্জন মানুষ। তার এমন দূর্দশা, ইশ্...ভাবা যায় না"।
বলেই চমকে উঠতে হল৷ আরে, শ্যামলবাবু চেম্বার থেকে বেরোনোর পর তো আর কেউ ঢোকেনি ঘরে। চোখে ঝিমটি লেগে গেছিল কি? কণ্ঠস্বরটা কেমন যেন...।
"পরেরবার শ্যামল সাহা এলে সোজা বিদেয় করে দেবেন৷ ব্যাটা গুলবাজ"।
এ'বারে সোজা হয়ে বসলেন ডাক্তার৷ কে? কে কথা বলছে? কাউকে দেখা যাচ্ছে না অথচ..।
ঠিক তখুনি, একটা সাদার-ওপর-খয়েরি-ছোপ বেড়াল তড়াং করে ডাক্তারের টেবিলে উঠে পড়ল৷ ডাক্তার অবাক হয়ে শুনলেন, বেড়ালটা অবিকল শ্যামলবাবুর কণ্ঠস্বরে বলে উঠলে, "ওই শ্যামলকে বেশি পাত্তা না দিয়ে ভালোই করেছেন৷ ব্যাটা নুইসেন্স ক্রিয়েট করতে ওস্তাদ"৷ এই বলেই সে বেড়ালটা একলাফে প্রেশার মাপার যন্ত্র উলটে দিয়ে উত্তর দিকের জানালা দিয়ে গায়েব হয় গেল৷
আধঘণ্টা মত গুম হয়ে বসে থাকার পর ব্যাপারটা ডাক্তারবাবুর মগজে একটু স্পষ্ট হল৷ চট করে শ্যামলবাবুর মোবাইলে ফোন করলেন তিনি৷
- শ্যামলবাবু! আপনি কোথায়?
- এই বাড়িতে ঢুকলাম খানিকক্ষণ আগে৷ ইন ফ্যাক্ট আপনাকেই ফোন করতে যাচ্ছিলাম..।
- শুনুন। আপনার বেড়ালের কথা শোনার সমস্যাটা আচমকা কেটে গেছে, তাই না ? এ'টুকু সময়ের মধ্যেই..।
- কী আশ্চর্য! সে'টা বলতেই তো ফোন করার তাল করছিলাম৷ বাড়ি ঢোকার মুখে একটা মেনিকে দেখতে পেয়ে দরাজ গলায় শুধোলাম, "কেমন আছো মা"?৷ আমি ভাবলাম স্কুল-কলেজ কেমন চলছে সে'খবর দেবে৷ ও মা, সে বিড়ালটি বললে, " ম্যাঁও, মিঁউউউ"৷ কী আশ্চর্য ব্যাপার বলুন দেখি।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

ব্লগ-বাজ

আর চিন্তা নেই । বাঙালিকে আর রোখা যাবে না । আর সামান্য (সম্ভবত কিঞ্চিত গোলমেলে ) কবিতা ছাপাবার জন্যে সম্পাদক কে তোল্লাই দিতে হবে না । আর প্রেমে লটরপটর হয়ে ডায়েরি লিখে প্রাণপাত করতে হবে না। পলিটিক্স কে পাবলিক-জন্ডিস বলে গাল দেওয়ার জন্য আর “প্রিয় সম্পাদক” বলে আনন্দবাজারের ঠ্যাং ধরতে হবে না। কেন ?  হোয়াই? বাঙালি ব্লগিং শিখে গ্যাছে যে। ঘ্যাচাং ঘ্যাচাং করে শাণিত তলোয়ারের মত “ পোস্ট”-সমূহ জনতার ইন্টেলেক্ট এসপার-ওসপার করে দেবে ; হাতে-গরম গায়ে-কাঁটা। বাঙালি মননের নব্য জিস্পট ; ব্লগ-স্পট । কে বলে যে বাঙালি ব্রিগেডে বুক্তুনি দিয়ে আর ফুটবল মাঠে খেউড় করে খতম হয়ে গ্যাছে ? কে বলে যে বাঙালির ঘিলু কফি হাউসে ভাত ঘুমে মগ্ন ? বাঙালিকে একবার ব্লগখোর হতে দিন , সমস্ত অভিযোগ ভ্যানিশ হয়ে যাবে । পোপ থেকে পরশুরাম ; ডেঙ্গু থেকে মশাগ্রাম ; বং-ব্লগের দাপট রইবে সর্বত্র । বাঙালির সমস্ত আশা-ভরসা-জিজ্ঞাসা এইবারে ব্লগ মারফত্‍ পৌছে যাবে ট্যাংরা ট্যু টেক্সাস । তোপসে মাছের স্প্যানিশ ঝোলের রেসিপি কী ? বাঙাল-ঘটি মিল মহব্বত-হয়ে গেলে কি বাঙ্গালিয়ানা চটকে যাবে ? নেতাজী কি এখ

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু