Sunday, March 12, 2023

শ্যামল সাহার পাগলামো

- এই, আপনি আমার সঙ্গে ইয়ার্কি করতে এসেছেন?
- সে কী ডাক্তারবাবু, আপনি পাড়ার একজন রেস্পেক্টেড মানুষ৷ আপনার সঙ্গে ঠাট্টা করব? তা'ছাড়া আমি এমন একটা ট্র্যাজিক সমস্যার কথা বললাম, সে'টাকে এ'ভাবে উড়িয়ে দিচ্ছেন কেন৷
- দেখুন শ্যামলবাবু৷ আপনার দরকার ওঝার৷ সে এসে ঝ্যাঁটাপেটা করলে তবে আপনার মাথা থেকে এই বিটকেল ভূতটা নামবে৷
- আপনার ধারণা আমি ভুলভাল বকছি?
- ধারণা? না৷ আমি শ্যিওর৷
- আমায় অমনভাবে ঠেলে সরিয়ে দেবেন না প্লীজ৷
- আমি আর একবার গুছিয়ে বলি? আপনি বেড়ালের ভাষা বুঝতে পারছেন, এ'টাই আপনার রোগ, তাই তো?
- স্পষ্ট৷ ক'দিন ধরেই হচ্ছে৷ এই যেমন স্বপন জোয়াদ্দারের খয়েরি রঙের বেড়ালটা কাল রাত্রে আমায় "মিচকে শয়তান" বলে টোন কাটলে৷ বিশ্বাস করুন, আমি স্পষ্ট শুনেছি৷ আবার ওই মোড়ের মাথায় যে বেঢপ সাইজের হুলোটা ঘুরঘুর করে, সে রীতিমত সদালাপী৷ আজ সকালে আমি রতনের দোকানে বসে চা খাচ্ছিলাম৷ আমার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় শুধোলে, "ক'টা বাজে কাকা"? আমি স্যাট করে বললাম "পৌনে আট"৷ বলেই বুক কেঁপে উঠল৷ বেড়ালের সঙ্গে গপ্প জুড়েছি? কিন্তু উত্তর দিয়ে ফেলেছি, তাই দু'চারটে কথা বলতেই হল৷ ওই, ওয়েদার, পলিটিক্স, ইত্যাদি৷ যাওয়ার আগে সে হুলো বলে গেল "রতনমামা বড্ড কেয়ারলেস৷ আমি যে দুধ চেটে গেলাম, সে'টা দিয়ে চা বানিয়ে খদ্দেরদের গেলাচ্ছে"। কী ডেঞ্জারাস ভাবুন ডাক্তারবাবু৷
- শ্যামলবাবু৷ এই, একটু চুপ করবেন? আপনার ফীজ আমার চাই না৷ এ'বারে আসুন দেখি৷
- ডাক্তারবাবু...।
- প্লীজ৷ আর না শ্যামলবাবু৷ আসুন এ'বারে।
- বেশ৷
***
"বেশ করেছেন ডাক্তারবাবু। শ্যামল সাহার পাগলামোটা দিনদিন মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে"।
মাথা নাড়লেন ডাক্তার, " শ্যামলবাবু সজ্জন মানুষ। তার এমন দূর্দশা, ইশ্...ভাবা যায় না"।
বলেই চমকে উঠতে হল৷ আরে, শ্যামলবাবু চেম্বার থেকে বেরোনোর পর তো আর কেউ ঢোকেনি ঘরে। চোখে ঝিমটি লেগে গেছিল কি? কণ্ঠস্বরটা কেমন যেন...।
"পরেরবার শ্যামল সাহা এলে সোজা বিদেয় করে দেবেন৷ ব্যাটা গুলবাজ"।
এ'বারে সোজা হয়ে বসলেন ডাক্তার৷ কে? কে কথা বলছে? কাউকে দেখা যাচ্ছে না অথচ..।
ঠিক তখুনি, একটা সাদার-ওপর-খয়েরি-ছোপ বেড়াল তড়াং করে ডাক্তারের টেবিলে উঠে পড়ল৷ ডাক্তার অবাক হয়ে শুনলেন, বেড়ালটা অবিকল শ্যামলবাবুর কণ্ঠস্বরে বলে উঠলে, "ওই শ্যামলকে বেশি পাত্তা না দিয়ে ভালোই করেছেন৷ ব্যাটা নুইসেন্স ক্রিয়েট করতে ওস্তাদ"৷ এই বলেই সে বেড়ালটা একলাফে প্রেশার মাপার যন্ত্র উলটে দিয়ে উত্তর দিকের জানালা দিয়ে গায়েব হয় গেল৷
আধঘণ্টা মত গুম হয়ে বসে থাকার পর ব্যাপারটা ডাক্তারবাবুর মগজে একটু স্পষ্ট হল৷ চট করে শ্যামলবাবুর মোবাইলে ফোন করলেন তিনি৷
- শ্যামলবাবু! আপনি কোথায়?
- এই বাড়িতে ঢুকলাম খানিকক্ষণ আগে৷ ইন ফ্যাক্ট আপনাকেই ফোন করতে যাচ্ছিলাম..।
- শুনুন। আপনার বেড়ালের কথা শোনার সমস্যাটা আচমকা কেটে গেছে, তাই না ? এ'টুকু সময়ের মধ্যেই..।
- কী আশ্চর্য! সে'টা বলতেই তো ফোন করার তাল করছিলাম৷ বাড়ি ঢোকার মুখে একটা মেনিকে দেখতে পেয়ে দরাজ গলায় শুধোলাম, "কেমন আছো মা"?৷ আমি ভাবলাম স্কুল-কলেজ কেমন চলছে সে'খবর দেবে৷ ও মা, সে বিড়ালটি বললে, " ম্যাঁও, মিঁউউউ"৷ কী আশ্চর্য ব্যাপার বলুন দেখি।

No comments: