Skip to main content

অফিসঝড়, ইয়ারদোস্ত ও উপেন্দ্রকিশোর



হপ্তা দুই ঝড়ের মত গেল৷ অফিসের কাজে বিস্তর ছোটাছুটি, শহর ছেড়ে কিছুদিন দেশের অন্যপ্রান্তে পড়ে থাকতে হল; 'অফিস টীম' সে'খানে তাঁবু খাটিয়ে পড়ে রইলে৷ চাকুরেদের জীবনে যা আকচারই হচ্ছে৷ কিন্তু মাঝেমধ্যে সে প্রজেক্ট-প্রজেক্ট হাওয়া ছাপিয়ে স্পষ্ট হয়ে পড়ে যুদ্ধ-যুদ্ধ ভাব৷ গেরিলা সৈন্যদলের মত 'টাইমলাইন'রা ফস্কে যেতে চাইবে; চাকুরেদের দায় সে'সব মিসড-ডেডলাইনের ল্যান্ডমাইন পাশ কাটিয়ে কাজ হাসিল করা৷
এই হুড়মুড়ের মধ্যে একটা জবরদস্ত ব্যাপার; বিদেশবিভুঁইয়ে সহকর্মীদের মধ্যে ইয়ারদোস্ত খুঁজে পাওয়া৷ যে সহকর্মীর সঙ্গে বহুবছরের "ইয়েস, নো, ওকে, ফাইন, গুডমর্নিং, গুডনাইট" সম্পর্ক, পরিচিত কিউবিকলগুলোর বাইরে এসে সে মানুষটাই রাতবিরেতে "আর ভায়া, আমি আছি তো" বলে কাজের ভার লাঘব করে দিচ্ছে৷ যে 'সিনিয়র' বাবুটিকে চিরকালই চিরতা-পিসেমশাই বলে দেখে এসেছি, সেই হয়ত সবার নার্ভাসনেস কাটাতে তস্য খাজা চুটকি বলে নিজেই নিজের তলপেট খামচে বিকট হাসির সুরে গড়াগড়ি খেয়ে চলেছে৷ যে মানুষটাকে চিরকাল স্প্রেডশিট উইজার্ড ছাড়া অন্য কোনো ভাবে চিনিনি, সে হোটেল-রুমের সরঞ্জাম ব্যবহার করে যে কফি তৈরি করছে সে'টাকে অনায়াসে জাদুপানীয় বলা যেতে পারে। মোদ্দা কথা হল, অফিসের সাদাকালো টীমগুলোই যখম হাড়জ্বালানে প্রজেক্টের পাল্লায় অফিসের বাইরে গিয়ে পড়ে, তাদের মধ্যে পাড়ার-ক্লাব-আলো-করা ইয়ারদোস্তদের ফ্লেভার এসে পড়ে৷ লিঙ্কডইন যাই বলুক, সে ফ্লেভারের গুণেই কেঠো কাজের জন্যও প্রাণপাত করা যায়, ক্লান্ত হয়েও শ্যামল মিত্র গুনগুন করা যায়৷
তা, যাবতীয় হুড়মুড় সামাল দিয়ে, হাড়গোড় খোলনলচে ড্রাইওয়াশ হয়ে; ঘরের ছেলেমেয়েদের ঘরে ফেরত আসা। এমন ইস্তিরি-চালানো লম্বা অফিস-ট্যুরের পর বাড়ি ফিরে দরকার মন-মেজাজে মালিশ আর আত্মায় পালিশ৷ তার জন্য রয়েছেন উপেনজ্যেঠু, শনিবার সকালটা ভদ্রলোকের কোচিংয়ে প্রাণায়াম করে কেটেছে। দুপুরটা কাটবে টেস্টম্যাচ দেখে৷ শনিবার সন্ধ্যের মধ্যেই নিজেকে মনডে-ফিট ঘোষণা করতে পারব; এমনটাই আশা।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

ব্লগ-বাজ

আর চিন্তা নেই । বাঙালিকে আর রোখা যাবে না । আর সামান্য (সম্ভবত কিঞ্চিত গোলমেলে ) কবিতা ছাপাবার জন্যে সম্পাদক কে তোল্লাই দিতে হবে না । আর প্রেমে লটরপটর হয়ে ডায়েরি লিখে প্রাণপাত করতে হবে না। পলিটিক্স কে পাবলিক-জন্ডিস বলে গাল দেওয়ার জন্য আর “প্রিয় সম্পাদক” বলে আনন্দবাজারের ঠ্যাং ধরতে হবে না। কেন ?  হোয়াই? বাঙালি ব্লগিং শিখে গ্যাছে যে। ঘ্যাচাং ঘ্যাচাং করে শাণিত তলোয়ারের মত “ পোস্ট”-সমূহ জনতার ইন্টেলেক্ট এসপার-ওসপার করে দেবে ; হাতে-গরম গায়ে-কাঁটা। বাঙালি মননের নব্য জিস্পট ; ব্লগ-স্পট । কে বলে যে বাঙালি ব্রিগেডে বুক্তুনি দিয়ে আর ফুটবল মাঠে খেউড় করে খতম হয়ে গ্যাছে ? কে বলে যে বাঙালির ঘিলু কফি হাউসে ভাত ঘুমে মগ্ন ? বাঙালিকে একবার ব্লগখোর হতে দিন , সমস্ত অভিযোগ ভ্যানিশ হয়ে যাবে । পোপ থেকে পরশুরাম ; ডেঙ্গু থেকে মশাগ্রাম ; বং-ব্লগের দাপট রইবে সর্বত্র । বাঙালির সমস্ত আশা-ভরসা-জিজ্ঞাসা এইবারে ব্লগ মারফত্‍ পৌছে যাবে ট্যাংরা ট্যু টেক্সাস । তোপসে মাছের স্প্যানিশ ঝোলের রেসিপি কী ? বাঙাল-ঘটি মিল মহব্বত-হয়ে গেলে কি বাঙ্গালিয়ানা চটকে যাবে ? নেতাজী কি এখ

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু