Skip to main content

শিঙাড়া থেরাপি



অফিস টেবিলে কাগজপত্তর আর ফাইলের স্তুপ? সে'দিকে তাকালেই বুক-হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে পড়ছে? জানপ্রাণ লড়িয়ে দিয়েও মেমো-প্রপোজাল-হিজবিজবিজের গুরুভার লাঘব হচ্ছে না?একটা ফাইল ক্লীয়ার করলে চারটে আপদ এসে জুটছে? এই ক্রাইসিস চলতে দেওয়া যায়না৷
টেবিলের চেহারা যদি ভয়াবহ হয়, তবে বুকের ধুকপুকও বাড়তে থাকে। তা'তে মেজাজের ক্ষতি, মনের ক্ষয়। মনের রাখবেন, অফিস-টেবিলকে পোষ মানাতে না পারলে দুনিয়ার সমস্ত মোটিভেশনাল বই আর সুড়সুড়ি দেওয়া পাওয়ারপয়েন্ট জলে৷
তা, আপিসের টেবিলের পেন্ডিং-পাহাড় পাশ কাটিয়ে ভোরের নরম রোদ্দুর এনে ফেলবেন কী করে? ডাঁই করা ফাইলের ঘুপচি অন্ধকার সাফ করে প্রাণের তুলসীমঞ্চে প্রদীপ জ্বালবেন কী করে? খানিকক্ষণের জন্য যাবতীয় ডেডলাইনের ঝড়-ঝঞ্ঝা ভুলে টেবিলে বসন্ত টেনে আনবেন কী করে?
শুনুন, মন দিয়ে৷ পারলে টুকে রাখুন৷
একটা শিঙাড়াকে হীরের যত্নে টেবিলের ওপর রাখতে হবে৷ রেখেই তার ওপর হামলে পড়বেন না যেন; তা'তে উত্তম-হাসিতে ক্যাপ্টেন হ্যাডকের "ব্লিস্টারিং বার্নাকলস" মিশিয়ে দেওয়া হবে৷ অপেক্ষা করুন। সে দৃশ্য উপভোগ করুন৷ সে সুবাসকে টেবিলের চারপাশের বাতাসে মিশে যেতে দিন৷ সেই অপার্থিব দৃশ্যকল্প আর জাদু-সুবাসের মেট্রিক্স খানিকটা সময় জুড়ে স্টেডি না হলে চারপাশের নেগেটেভিটি শুষে নেওয়া হবে কী করে?
সেই হাইক্লাস সিচুয়েশনটাকে স্টেডি হতে দিন৷ মেডিটেট করুন, কীবোর্ডের খটখটটুকু মন দিয়ে শুনুন, আঙুলের ডগায় প্রতিটা কীবোর্ড-স্পর্শ যত্ন করে অনুভব করুন৷ শিঙাড়ার দিকে তাকিয়ে শ্বাস নিন, স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে শ্বাস ছাড়ুন৷ ব্রীদ ইন, ব্রীদ আউট৷ ব্রীদ ইন, ব্রীদ আউট৷ খানিকক্ষণের মধ্যেই দেখবেন মনের মধ্যে ফুরফুরে হাওয়া, কুঁচকে থাকা ভুরু নেতিয়ে পড়েছে, খিঁচিয়ে থাকা মুখে "সদ্য কবিতা লিখেছি" মার্কা হাসি৷
এরপর মিনিট পাঁচেকের জন্য স্ক্রিন স্লীপ-মোডে রেখে, কীবোর্ড সরিয়ে দিয়ে, ফোকাস করুন শিঙাড়ার ওপর৷ শিঙাড়া উড়িয়ে দিয়ে, স্ফুলিঙ্গের মত, বিপ্লবীর মেজাজে; ফিরে আসুন কাগজপত্রের দেশে৷ খুনে-অফিসটেবিল ততক্ষণে আপনার নেকুপুষুসুন্টুনিমুন্টুনি স্যুইটহার্টটি৷ গ্যারেন্টি রইল।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

ব্লগ-বাজ

আর চিন্তা নেই । বাঙালিকে আর রোখা যাবে না । আর সামান্য (সম্ভবত কিঞ্চিত গোলমেলে ) কবিতা ছাপাবার জন্যে সম্পাদক কে তোল্লাই দিতে হবে না । আর প্রেমে লটরপটর হয়ে ডায়েরি লিখে প্রাণপাত করতে হবে না। পলিটিক্স কে পাবলিক-জন্ডিস বলে গাল দেওয়ার জন্য আর “প্রিয় সম্পাদক” বলে আনন্দবাজারের ঠ্যাং ধরতে হবে না। কেন ?  হোয়াই? বাঙালি ব্লগিং শিখে গ্যাছে যে। ঘ্যাচাং ঘ্যাচাং করে শাণিত তলোয়ারের মত “ পোস্ট”-সমূহ জনতার ইন্টেলেক্ট এসপার-ওসপার করে দেবে ; হাতে-গরম গায়ে-কাঁটা। বাঙালি মননের নব্য জিস্পট ; ব্লগ-স্পট । কে বলে যে বাঙালি ব্রিগেডে বুক্তুনি দিয়ে আর ফুটবল মাঠে খেউড় করে খতম হয়ে গ্যাছে ? কে বলে যে বাঙালির ঘিলু কফি হাউসে ভাত ঘুমে মগ্ন ? বাঙালিকে একবার ব্লগখোর হতে দিন , সমস্ত অভিযোগ ভ্যানিশ হয়ে যাবে । পোপ থেকে পরশুরাম ; ডেঙ্গু থেকে মশাগ্রাম ; বং-ব্লগের দাপট রইবে সর্বত্র । বাঙালির সমস্ত আশা-ভরসা-জিজ্ঞাসা এইবারে ব্লগ মারফত্‍ পৌছে যাবে ট্যাংরা ট্যু টেক্সাস । তোপসে মাছের স্প্যানিশ ঝোলের রেসিপি কী ? বাঙাল-ঘটি মিল মহব্বত-হয়ে গেলে কি বাঙ্গালিয়ানা চটকে যাবে ? নেতাজী কি এখ

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু