Skip to main content

বংপেন-৭৫-য়ে ছিলেন যারা



আজ থেকে ছ'বছর আগে আমার কিছু লেখা নিয়ে একটা বই বেরোয়, পত্রভারতী থেকে। ত্রিদিববাবু একটা ব্লগারের লেখায় চট করে ওরকম 'কনফিডেন্স' দেখাবেন, সে'টা প্রথমে ভাবতে পারিনি। গোটা ব্যাপারটার জন্য বী-বুকসের এষাকে থ্যাঙ্কিউ বলতেই হয়। ত্রিদিববাবু কিশোরভারতীর সম্পাদক, পত্রভারতীর কর্ণধার; তার কাছে আমি "হে হে, স্যার, আমি ব্লগ লিখি" বলে বংপেন-ডট-নেটের লেখাপত্তর নিয়ে হাজির হব? মামারবাড়ি নাকি সূর্য মোদকের মিষ্টির দোকান? মোটের ওপর এষার জন্যই ব্যাপারটা ঘটেছিল। খানকয়েক লেখা পড়ে ত্রিদিববাবু বলেছিলেন, "ছাপব"। আমি মনে মনে বলেছিলাম, "যাচ্চলে, মাইরি"? ভদ্রলোক আমার লেখা পড়ে স্টাইল আর ভাষা নিয়ে দু'একটা জরুরী কথাও বলেছিলেন। আমার ধারণা সেই টিপসগুলো আমি ভুলে মেরে দিইনি।
রেয়া আহমেদ চমৎকার কিছু মোটিফ এঁকেছিল বইটার জন্য; ওঁর ব্যাপারে আগে সবিশেষ কিছু লিখেছি কিনা মনে নেই। তবে যে'টা মনে আছে, সে'টা বলি। আঁকার ব্যাপারে কিছু বলার আমি আর কে, ও যা এঁকেছিল, তা আমার দিব্যি লেগেছিল। তবে আঁকারও বাইরে, ওঁর প্রফেশনালিজমে মুগ্ধ হয়েছিলাম (বংপেনের জন্য ওর আঁকা একটা ছবি কমেন্টে রইল)। বইয়ের প্রচ্ছদ করেছিল রিম্বিক, সে'টা অবশ্য বই ছাপা হয়ে বেরোনোর পর আমি জানতে পারি। আমার ছবি আর কেউ অত যত্ন করে কোনোদিন আঁকেনি। আমার মারাত্মক ভালো লেগেছিল; বাড়তি মেদ ব্যাপারটা বেমালুম চেপে গেছে, উড়ুউড়ু শ্যাম্পু করা চুল আছে, কোলগেট হাসি; সব মিলে তোফা। ও জিনিস আমি মাঝেমধ্যেই প্রোফাইল ফটো হিসেবে ব্যবহার করে থাকি। তবে পরে অনেকবার মনে হয়েছে প্রচ্ছদের সাবজেক্ট হিসেবে অন্য কিছু থাকলেই ভালো হত। মানে বইটা কিছুতেই হাসির কাণ্ডকারখানা গোছের কিছু নয়; কিন্তু প্রচ্ছদ দেখে সে ভুল ধারণা হওয়ার একটা সুযোগ আছে বইকি। আর ইয়ে, শেষ ধুতি পরেছিলাম সম্ভবত বিয়েতে। পরেরবার রিম্বিককে বলতে হবে হাফ শার্ট, পাজামা পরিয়ে, হাতে ওই সাবেকী কলমের বদলে একটা রেনল্ডসের পেন ধরিয়ে দিতে।
আর বইতে অভিষেকদা (ক্রিকেট লিখিয়ে অভিষেক মুখার্জী) মুখবন্ধ লিখে দিয়েছিল, ওঁকে অবশ্য থ্যাঙ্কিউ বলার মানেই হয়না।
বইটায় গল্প রয়েছে, বিভিন্ন রকমের। প্রেম, মনকেমন, কলকাতা, খাওয়াদাওয়া, প্যারালাল পৃথিবী, আর ইয়ে, খুনখারাপি। আমি তো ব্লগার, গল্প কেন লিখি? ব্লগের তো জার্নাল হওয়ার কথা ছিল। অন্তত আমি ব্লগ শুরু করেছিলাম সে'কথা মাথায় রেখেই। ফার্স্ট পার্সনে যে একদম লিখিনা তা নয়, তবে একটা সময় দেখলাম আমার দরকার হয়ে পড়ল রকমারি চরিত্রের। আমি যেহেতু লেখক নই; পাঠকের ডিমান্ড মাথায় রেখে চরিত্র তৈরি করার ক্ষমতা বা সাহস - আমার কোনটাই নেই। আমি চরিত্র তৈরি করেছি নিজের স্বার্থে। কখনও হয়ত এমন একটা ফিচেল কথা মনে এলো, যে'টা স্মার্টলি সাজিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা তন্ময় মুখুজ্জের নেই। এমন একটা অবজার্ভেশন শেয়ার করার ইচ্ছে হল যে'টা আমার মত ন'টা-সাতটা চাকরীর মানুষের ব্যক্তিত্বের সঙ্গে খাপ খায়না। অথবা এমন একটা মতামত ব্যক্ত করতে চাইছি যে'টায় বিশ্বাস করতে মন চাইছে কিন্তু টেবিল চাপড়ে সেই ওপিনিওনটাকে ফলাও করে বলার কনফিডেন্স বংপেনের নেই। তাই দরকার পরে বিভিন্ন চরিত্রের; যারা আমার হয়ে সে কথাগুলো সপাটে বলতে পারবে। তাঁদের দিয়ে সে কথাগুলো বলিয়ে নেওয়ার মধ্যেই অসীম তৃপ্তি। আমার হিউমর বোধ কি আদৌ সরেস? নিশ্চিত নই। তাই আমার এমন ধারালো মানুষ আর মজাদার সিচুয়েশন তৈরি করে হিউমর দাঁড় করাতে হয়। এমন কী, মাঝেমধ্যে ভূত, পকেটমার, ক্রিমিনাল, ফচকে রোবট; সবার হয়েই দু'কথা বলে দিতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে, আমার আশেপাশে দেখা কিছু মানুষকে মিলিয়ে-মিশিয়ে একটা নতুন চরিত্র তৈরি করে আড্ডা দিতে। সেই চরিত্র সৃষ্টির ইচ্ছে থেকেই গল্প। তাই হয়ত আমার লেখায় বেশিরভাগটা জুড়েই কথোপকথন। আমার গল্পগুলো বায়োগ্রাফিকাল না হয়েও এক ধরণের জার্নাল।
সে'সব কিছু গল্প বাছাই করেই ছাপা হয় বংপেন ৭৫। ছাপার পরে যে
দু'চারজন শুভানুধ্যায়ী যে সে বই কিনেও ফেলবেন, সে'টাও ভাবতে পারিনি। যারা আস্কারা দিয়েছেন, মাঝেমধ্যে পিঠ চাপড়ে দিয়েছেন, বানান বা অন্যান্য ভুল বারবার শুধরে দিয়েছেন; তাঁদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। আর ইয়ে, এ'বারেও বইমেলায় পত্রভারতীর স্টলে থাকবে বইটা।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

ব্লগ-বাজ

আর চিন্তা নেই । বাঙালিকে আর রোখা যাবে না । আর সামান্য (সম্ভবত কিঞ্চিত গোলমেলে ) কবিতা ছাপাবার জন্যে সম্পাদক কে তোল্লাই দিতে হবে না । আর প্রেমে লটরপটর হয়ে ডায়েরি লিখে প্রাণপাত করতে হবে না। পলিটিক্স কে পাবলিক-জন্ডিস বলে গাল দেওয়ার জন্য আর “প্রিয় সম্পাদক” বলে আনন্দবাজারের ঠ্যাং ধরতে হবে না। কেন ?  হোয়াই? বাঙালি ব্লগিং শিখে গ্যাছে যে। ঘ্যাচাং ঘ্যাচাং করে শাণিত তলোয়ারের মত “ পোস্ট”-সমূহ জনতার ইন্টেলেক্ট এসপার-ওসপার করে দেবে ; হাতে-গরম গায়ে-কাঁটা। বাঙালি মননের নব্য জিস্পট ; ব্লগ-স্পট । কে বলে যে বাঙালি ব্রিগেডে বুক্তুনি দিয়ে আর ফুটবল মাঠে খেউড় করে খতম হয়ে গ্যাছে ? কে বলে যে বাঙালির ঘিলু কফি হাউসে ভাত ঘুমে মগ্ন ? বাঙালিকে একবার ব্লগখোর হতে দিন , সমস্ত অভিযোগ ভ্যানিশ হয়ে যাবে । পোপ থেকে পরশুরাম ; ডেঙ্গু থেকে মশাগ্রাম ; বং-ব্লগের দাপট রইবে সর্বত্র । বাঙালির সমস্ত আশা-ভরসা-জিজ্ঞাসা এইবারে ব্লগ মারফত্‍ পৌছে যাবে ট্যাংরা ট্যু টেক্সাস । তোপসে মাছের স্প্যানিশ ঝোলের রেসিপি কী ? বাঙাল-ঘটি মিল মহব্বত-হয়ে গেলে কি বাঙ্গালিয়ানা চটকে যাবে ? নেতাজী কি এখ

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু