Skip to main content

পুজোবার্ষিকী আর আইপিএল



বছর কুড়ি আগে আচমকা পুজোসংখ্যায় আগ্রহ কমে গেছিল। বছরভর অপেক্ষা করে থাকা, তারপর খান পাঁচেক বিভিন্ন পুজোসংখ্যা সংগ্রহ করে ধীরসুস্থে পড়ে ফেলা। মাস দুয়েক ধরে রসিয়ে প্রতিটা গল্প উপন্যাস কমিক্স উপভোগ করা। বেশ মনোগ্রাহী একটা প্রসেস ছিল সেই ছেলেবেলায়৷ প্রায় একটা বাৎসরিক উৎসব। কিন্তু হুট করে আগ্রহ কমে গেল৷ ভ্যাকিউম তৈরি হল।

এরপর এলো আইপিএল। এক্কেবারে জমজমাট প্যাকেজ, বছর বছর দিস্তেদিস্তে পুজোর লেখা পড়ার মতই একগাদা ক্রিকেট ম্যাচ, পরপর-প্রতিদিন, মাস দুয়েকের কার্নিভাল।  খেলার মাঠ থেকে ফিরে আনন্দমেলা, শুকতারা, কিশোরভারতীর ওপর উপুড় হয়ে পড়ার মতই রোজ অফিস ফেরতা ক্রিকেট দেখতে বসা। 

এই সাত-আট হপ্তায় খানিকটা ঘোর মিশে থাকে। কোন দল কেমন খেলছে; কারা চমকে দিচ্ছে, কারা ধ্যাড়াচ্ছে। ফ্যান্টাসি টীমে কাকে রেখে কাকে ভুলতে হবে। টুক করে অফিসের আড্ডায় তর্ক, বাসে-ট্রামে স্কোর আদানপ্রদান। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ মিস করা যাবে না, কাজেই দু'একটা সন্ধ্যের কাজ এড়িয়ে যাওয়ার জন্য মজবুত কাল্পনিক কৈফিয়ৎ তৈরি করে রাখা৷ আর দু'একটা হোয়্যাটস্যাপ গ্রুপে ঠিক এই মাসখানেক ধরে দেখা যায় 'হাইভোল্টেজ স্পার্ক''। আইপিএলের একটা মস্ত সুবিধে হল আমার মত গাম্বাট ক্রিকেট-মগজ মানুষেরও জোর গলায় মতামত দেওয়ার সাহস থাকে। ঠিক যেমন পুজোসংখ্যা পড়ে বলতে কচিবয়সেও ঘ্যাম নিয়ে বলে দিতাম, "খারাপ না। তবে এ'বার কিন্তু কাকাবাবু অতটা জমাতে পারেনি। জোজো জাস্ট বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে"। কাজেই সে'সব হোয়্যাটস্যাপ আইপিএল আড্ডা বেশ জমজমাট হয়ে ওঠে বইকি।

যা হোক। পুজোর মাসখানেক আগে থেকে পড়া শুরু হত। ওই লক্ষ্মীপুজো নাগাদ শেষ হত পুজোবার্ষিকী ম্যারাথন।  আর ছেলেবেলায় প্রায় প্রতিবারই আমি শীর্ষেন্দুর উপন্যাসটা রেখে দিতাম এক্কেবারে শেষবেলায় পড়ব বলে। সেই শেষ উপন্যাস শুরু করেই একটু মনকেমন হত। ছুটি শেষ, ছুটির দুপুর-সন্ধের গল্প-কমিক্স পড়া শেষ। সেই মন-ভালো-করা রুটিনে ফিরতে আবার বছরখানেকের অপেক্ষা। আইপিএলের ফাইনাল দেখতে বসেও প্রতিবার মনের মধ্যে ওই খুচরো একটা মাইনর-বিজয়া-লেভেল মনখারাপ তৈরি হয় বটে। দু'মাস ধরে তৈরি হওয়া একটা সিস্টেম উপড়ে ফেলতে হবে তো, সে এক যন্ত্রণা। আর একবছরের অপেক্ষা ছাড়া কোনও গতি নেই। 

আইপিএল এই ধেড়ে বয়সের পুজোসংখ্যাই বটে।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

ব্লগ-বাজ

আর চিন্তা নেই । বাঙালিকে আর রোখা যাবে না । আর সামান্য (সম্ভবত কিঞ্চিত গোলমেলে ) কবিতা ছাপাবার জন্যে সম্পাদক কে তোল্লাই দিতে হবে না । আর প্রেমে লটরপটর হয়ে ডায়েরি লিখে প্রাণপাত করতে হবে না। পলিটিক্স কে পাবলিক-জন্ডিস বলে গাল দেওয়ার জন্য আর “প্রিয় সম্পাদক” বলে আনন্দবাজারের ঠ্যাং ধরতে হবে না। কেন ?  হোয়াই? বাঙালি ব্লগিং শিখে গ্যাছে যে। ঘ্যাচাং ঘ্যাচাং করে শাণিত তলোয়ারের মত “ পোস্ট”-সমূহ জনতার ইন্টেলেক্ট এসপার-ওসপার করে দেবে ; হাতে-গরম গায়ে-কাঁটা। বাঙালি মননের নব্য জিস্পট ; ব্লগ-স্পট । কে বলে যে বাঙালি ব্রিগেডে বুক্তুনি দিয়ে আর ফুটবল মাঠে খেউড় করে খতম হয়ে গ্যাছে ? কে বলে যে বাঙালির ঘিলু কফি হাউসে ভাত ঘুমে মগ্ন ? বাঙালিকে একবার ব্লগখোর হতে দিন , সমস্ত অভিযোগ ভ্যানিশ হয়ে যাবে । পোপ থেকে পরশুরাম ; ডেঙ্গু থেকে মশাগ্রাম ; বং-ব্লগের দাপট রইবে সর্বত্র । বাঙালির সমস্ত আশা-ভরসা-জিজ্ঞাসা এইবারে ব্লগ মারফত্‍ পৌছে যাবে ট্যাংরা ট্যু টেক্সাস । তোপসে মাছের স্প্যানিশ ঝোলের রেসিপি কী ? বাঙাল-ঘটি মিল মহব্বত-হয়ে গেলে কি বাঙ্গালিয়ানা চটকে যাবে ? নেতাজী কি এখ

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু