Skip to main content

গুলচন্দ্র গোলন্দাজ বনাম গুলশাহেনশাহ গুলগুলি



'অন্দাজ অপনা অপনা'র সেই অনাবিল দৃশ্য। 
অমর আর প্রেম দু'জনেই এন্তার গুল দিচ্ছে, প্রাণপণে যাতা বলে চলেছে৷ গুলের গণ্ডার মরে কাঠ আর বাতলের ভাণ্ডার সাফসুতরো৷ সবচেয়ে বড় কথা দু'জনেই বুঝতে পারছে যে দু'জনেই গুলবাজ; "আমি যেমন গুলচন্দ্র গোলন্দাজ, অন্যজনটিও গুলশাহেনশাহ গুলগুলি"৷ সেই সিনেমারই ভাষায় বলতে গেলে, দু'জনের মনের মধ্যেই ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছে এক কাব্যিক উপলব্ধিঃ; "শালা! ম্যায় ভি ফেকু অউর ইয়ে ভি ফেকু"।

কিন্তু কেউই পিছু হটছে না৷ ক্লান্ত হচ্ছে না৷ লজ্জায় পিছিয়ে আসছে না৷ বরং গুলের তেজ উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে৷ ও'দিকে গল্পের গরু ইউক্যালিপটাস গাছ পেরিয়ে মনুমেন্টের ডগায় পৌঁছে জর্দা পান চিবোয়৷ এ'রকম পরিস্থিতি শুধু বলিউডি কমেডিতেই থাকে ভেবেছেন? আদৌ নয়৷ 

অফিস মিটিংয়ে ভোম্বলদার বস তার টীমমেম্বারদের মোটিভেট করতে চেয়ে ফস করে একটা খটমট জার্গন বলে ফেললেন। বলে ফেলেই মনে মনে জিভ কাটলেন এই ভেবে যে একটা ফালতু কথা বেরিয়ে গেল যার না আছে মাথা, না আছে মুণ্ডু৷ কিন্তু রণেভঙ্গ দেওয়া অ্যাটিচিউড নিয়ে টীমলীডার হওয়া যায়না৷ অতএব জান লড়িয়ে দিলেন বস, নিজের গুল-জারগনকে নব-জাগরণের সূত্র হিসেবস প্রমাণ করতে চেয়ে। ভোম্বলদাও মহাসেয়ানা। বসের স্লিপ অফ টাং দিব্যি ধরতে পেরেও চেপে গেল৷ প্রমোশনের মায়া বড় মায়া আর প্রমোশন দেনেওলাদের খোঁটা দেওয়া মানে নিজের মুখে দু'চামচ পেট্রোল ঢালার পর সিগারেট ধরানো। কাজেই বসের মুখ ফসকে বলা কর্পোরেট-গুলকে অমৃতবাণীর লেভেলে টেনে তুলতে জান কবুল করলেন ভোম্বলদা। 

ভোম্বলদার বস জানেন তিনি গুল দিয়ে ফেলেছেন৷ তিনি এও জানেন যে ভোম্বলদা সে গুল ধরে ফেলেছে৷ ভোম্বলদাও টের পাচ্ছে যে বস জানেন যে ভোম্বল দত্ত খচ্চরশ্রেষ্ঠ। কিন্তু দু'জনে আধঘণ্টা আলোচনা চালাবেন এমন ভাবে যেন বস হলেন রামকৃষ্ণ আর ভোম্বলদা আজ বিকেলেই শেয়ালদা থেকে শিকাগোর ট্রেন ধরবে৷ সে আলোচনায় যেমন ধার, তেমনি ঘ্যাম৷ 

বস বলছেন, "কেমন দিলাম হে ভোম্বল"? 
ভোম্বলদা বলছেন, " কী ভাবে পারেন এমন পার্লস অফ উইসডম এত কেয়ারলেসলি ছড়িয়ে দিতে"?
বস বলছেন, "ভাবতে পারো কী সাংঘাতিক ডেপথে গিয়ে বলেছি"?
ভোম্বলদা মাথা নাড়ছে, "গতকাল ইউটিউবে বিল গেটসের টেডটক শুনছিলাম৷  এ'রকমই বলতে চাইছিল৷ তবে আপনার মত ক্ল্যারিটি ছিল না"।

দিনের শেষে, যখন গুলগুলিস্তানের উৎসাহ স্তিমিত, তখন বসের মনে সামান্য সন্দেহ দানা বাঁধবে, " সত্যিই কি ভুল বলেছিলাম? না বোধ হয়৷ দামী কিছুই বলে ফেলেছি হয়ত। নয়ত ভোম্বল অত শার্প ছেলে, সে কিনা বলদের মত মাথা নেড়ে গেল"। আর লোকাল ট্রেনে ঝালমুড়িওলার ধাক্কা খেতে খেতে ভোম্বলদা হয়ত টের পাবে, "নাহ্, বস মানুষটার অতশত ডিগ্রী৷ কত হাজার বছরের এক্সপিরিয়েন্স৷ যা বলেছেন ভালোই বলেছেন নির্ঘাৎ।  আমারই বুঝে উঠতে সময় লাগছে"। 

ভাবছেন এ সিচুয়েশন শুধু অফিস আর সিনেমাতেই থাকবে? কভি নহি।

পকেট গড়ের মাঠ৷ এ'দিকে দ্যাবা বলছে সামনের মাসে পাহাড়, দেবী বলছে সমুদ্র৷ ধুন্ধুমার তর্ক৷ প্রায় রক্তারক্তি ব্যাপার৷ কেউই পিছু হঠবে না৷ দার্জিলিং বনাম পুরী; সে এক বিশ্রী আগুন৷ অথচ দু'জনেই জানে যে বসিরহাটে পিসির মেয়ের বিয়েতে যাওয়ার খরচটুকুও জোগাড় করা যাবে না৷ তবু তর্কের ঝাঁজ কমবে না৷ সেই ঝাঁজটুকুতেই বলভরসা। আবার ধরুন দু'জন ব্যর্থ ভালোবাসাবাসির মানুষ। তাদের আর পাশাপাশি এসে বসা হলো না৷ হাত টেনে ধরা হলো না৷ বিপদেআপদে 'আমি আছি তো' বলে জাপটে ধরা হলো না; কোনওদিন সে সুযোগ হবেও না৷ তবু, তাদের গল্পের আকাশকুসুম কমার নয়। আর সেই আকাশকুসুমটুকু থেকে যাবে বলেই হয়ত এই পৃথিবীটা নির্দ্বিধায় ঘুরে চলেছে। 

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

ব্লগ-বাজ

আর চিন্তা নেই । বাঙালিকে আর রোখা যাবে না । আর সামান্য (সম্ভবত কিঞ্চিত গোলমেলে ) কবিতা ছাপাবার জন্যে সম্পাদক কে তোল্লাই দিতে হবে না । আর প্রেমে লটরপটর হয়ে ডায়েরি লিখে প্রাণপাত করতে হবে না। পলিটিক্স কে পাবলিক-জন্ডিস বলে গাল দেওয়ার জন্য আর “প্রিয় সম্পাদক” বলে আনন্দবাজারের ঠ্যাং ধরতে হবে না। কেন ?  হোয়াই? বাঙালি ব্লগিং শিখে গ্যাছে যে। ঘ্যাচাং ঘ্যাচাং করে শাণিত তলোয়ারের মত “ পোস্ট”-সমূহ জনতার ইন্টেলেক্ট এসপার-ওসপার করে দেবে ; হাতে-গরম গায়ে-কাঁটা। বাঙালি মননের নব্য জিস্পট ; ব্লগ-স্পট । কে বলে যে বাঙালি ব্রিগেডে বুক্তুনি দিয়ে আর ফুটবল মাঠে খেউড় করে খতম হয়ে গ্যাছে ? কে বলে যে বাঙালির ঘিলু কফি হাউসে ভাত ঘুমে মগ্ন ? বাঙালিকে একবার ব্লগখোর হতে দিন , সমস্ত অভিযোগ ভ্যানিশ হয়ে যাবে । পোপ থেকে পরশুরাম ; ডেঙ্গু থেকে মশাগ্রাম ; বং-ব্লগের দাপট রইবে সর্বত্র । বাঙালির সমস্ত আশা-ভরসা-জিজ্ঞাসা এইবারে ব্লগ মারফত্‍ পৌছে যাবে ট্যাংরা ট্যু টেক্সাস । তোপসে মাছের স্প্যানিশ ঝোলের রেসিপি কী ? বাঙাল-ঘটি মিল মহব্বত-হয়ে গেলে কি বাঙ্গালিয়ানা চটকে যাবে ? নেতাজী কি এখ

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু