Skip to main content

মগজে নতুন চুটকি

কোনও জোক বা চুটকি যখন প্রথম মাথার মধ্যে এসে দাঁড়ায় তখন তাকে মনে হয় উত্তমকুমার। স্যুটবুট পরে, শর্মিলা ঝলসানো হাসি হেসে; সে কলম ঝাঁকিয়ে অটোগ্রাফ দেবে। অথবা মোটরবাইকে-সুচিত্রা-বইতে-পারা কনিফেডেন্স নিয়ে বিশ্বজয় করবে। মনে হয়; 
বাহ্, এই চুটকিটার জন্যই তো এদ্দিন বসেছিলাম। এই তো সেই জোক যা ইন্টেলেক্টে অঞ্জনবাবুর দাড়ি চুলকে দেবে,
অথচ শিব্রাম মার্কা ইম্প্যাক্টে চুটকি শুননে-ওয়ালারা হেসে গড়াগড়ি যাবে। এই তো সেই জোক যা শুনে একদিকে পাড়ার ফক্কর বন্ধু নিজের টিউশনির টাকা দিয়ে প্রেমিকাকে পারফিউম কিনে না দিয়ে আমায় ওল্ডমঙ্কের বোতল উপহার দেবে আর অন্যদিকে বাবা বাহবা জানিয়ে  বলবে "বারো ঘণ্টা পর যখন আমার হাসি থামবে, তখন বেরোব তোর জন্য মাটন আনতে"। সে চুটকি অ্যাইসা ভাইরাল হবে যে ডোনাল্ড ট্রাম্প মেক্সিকোকে বিবেকামুণ্ডম গোছের কিছু ধমক দেওয়ার আগে সে চুটকি 'ক্র‍্যাক' করবেন। আবার সে ঠাট্টা এতটাই লিটলম্যাগিও গভীর হবে যে তা নিয়ে ঝাড়া আড়াইমাস কফিহাউস সরগরম থাকবে। 

মোদ্দা কথা হল কোনও নতুন চুটকিটা যতক্ষণ নিজের মাথার ভিতর থাকে, মনে হয় " কেয়াবাত, গালিবদা! কেয়াবাত"।

কিন্তু মগজের মধ্য থেকে সে চুটকি যেই গুটিগুটি পায় বেরিয়ে আসে অমনি ফুলকো লুচির পেটে জলকামান। 

বুক হিম হয়ে আসে যখন বুঝতে পারি মাথার ভিতরে যে চুটকি উত্তমকুমারিও ঘ্যাম নিয়ে ঘুরছিল, আসরে নামার পর সে আদতে ঢ্যাঁড়সশ্রী। ইন্টেলেকচুয়ালরা সে চুটকি শুনলে মোগলাই পরোটায় ব্রকোলি মার্কা ওয়াক তুলবেন। আর সে চুটকি শুনে অনেকেই ফলিডল ফ্লেভারের লস্যি খুঁজে হন্যে হবেন; শিব্রামাইজড হাসি তো দূরের কথা। 

চুটকিটা বলার পর টের পাওয়া যায় মাখাসন্দেশ নামাতে গিয়ে ঝুলি থেকে এক ঠোঙা আরডিএক্স বের করে ফেলেছি; চারদিকে হাহাকার। বন্ধুরা সে জোক শুনলে যে ত্যাজ্যবন্ধু করতে পারে, সেই সম্ভাবনা জোকটা মুখ ফসকে বলে ফেলার পরেই মাথায় আসে, আগে নয়। আর সে চুটকি বাপের কানে উঠলে নিজের পিঠের চামড়া দিয়ে তৈরি ফোলিওব্যাগে নিজের প্রায়-ফেল-করা মার্কশিটগুলো ফাইল করে রাখতে হবে। 

মাথার ভিতরে উদয় হওয়া নতুন চুটকির হম্বিতম্বিতে সহজে বিশ্বাস করবেন না। জনসমক্ষে সে চুটকি আপনার নাকের কিমা-চচ্চড়ি তৈরি করবে না; এমন গ্যারেন্টি স্বয়ং ঈশ্বর কেন, গভর্নমেন্টও দিতে পারবেন না।

Comments

Abhishek said…
বিশেষণের ডাইরিটা দেবী সরস্বতীর পায়ে রেখে ঘুমোতে যান মনেহয়।

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু