Skip to main content

মনোজ দত্তর চিঠি



- চিঠি? আমার নামে?

- অনিল হালদার আপনি হলে, ইয়েস।

- তোমায় দেখে তো ঠিক ক্যুরিয়র কোম্পানির লোক মনে হয় না হে..।

- ও মা। না না, আমি পোস্টম্যান বা কুরিয়রের লোক নই।

- তা'হলে আমার অফিস বয়ে এলে যে...।

- শুধু তাই নয়, আগাম অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে আসিনি। তাই আপনার সেক্রেটারি ঝাড়া তিন ঘণ্টা বসিয়ে রেখেছিলেন।

- খামের গায়ে তো কিছুই...।

- লেখা নেই..। জানি।

- এ চিঠি কার লেখা? তুমি নিয়ে এসেছ কেন?

- এত মন দিয়ে লিখলাম চিঠিটা, তাই ভাবলাম আমিই নিয়ে যাই। ওহ, আমার নাম মনোজ দত্ত।

- সশরীরেই যখন এলে, তখন চিঠির কী দরকার ছিল..ব্যাপারটা কী...। আজকাল ছেলেছোকরাদের ব্যাপারস্যাপার বোঝা দায়। চাকরীর আবেদনটাবেদন নয় তো?

- লেফাফা খুলে দেখুন না স্যর। 

- তোমার হাবভাব কেমন সাসপিশাস মনে হচ্ছে, খামে গোলমেলে কিছু নেই তো?

- গুড নিউজই আছে স্যার। খুলেই দেখুন না।

- নিজেই লিখেছ যখন, বলেই দাও কী আছে এতে। বৃদ্ধ বয়সে এই অকারণ কায়দা বরদাস্ত হয় না।

- আপনি এত স্কেপ্টিক কেন বলুন তো অনিলবাবু?

- আমি? স্কেপ্টিক? শোন হে ছোকরা, বাতিকগ্রস্ত হলে কলকাতার বুকে এত বড় ব্যবসা ফেঁদে বসতে পারতাম না। রেন্টেড টেবিল দিয়ে শুরু বছর কুড়ি আগে। আজ আট হাজার স্কোয়্যার ফিটের অফিস।  গারমেন্ট ইম্পোর্টে গত দশ বছরে শহরের আর কোনো ফার্ম এত প্রগ্রেস করেনি। আর ব্যবসায় এগিয়ে যেতে হলে নির্ভয়ে ডিসিশন নিতে হয়। আমায় স্কেপ্টিক বললে ধর্মে সইবে না।

- তা'হলে খুলেই দেখুন ন। খামে কী আছে।

- তোমার নামটা কী বললে যেন হে?

- মনোজ। দত্ত। নামটা চেনা ঠেকছে কি?

***

- মনোজ দত্ত, নামটা মনে পড়েছে। ট্যু লেট। বাট মনে পড়েছে।

- অন্ধকারে ঘরে আপনার মাথাটা দিব্যি খোলতাই হয় যায় দেখছি অনিলবাবু।

- এ জায়গাটা কোথায়?

- খামের ভিতর। অফ কোর্স।

- ওহ, ম্যাজিশিয়ান মনোজ দত্ত। অফ কোর্স। আমার তোমায় চট করে চিনে ফেলা উচিত ছিল।

- সং সেজে টুপি থেকে খরগোশ বের করা খোকাভোলানো ইউজলেস ফেলো। আপনার দেওয়া লম্বা কমপ্লিমেন্ট ভুলিনি স্যর।

- তাই আমায় খামের ভিতর পুরে ফেলতে এত বছর পর ফিরে এসেছ! ইডিয়ট। এ'সব তুকতাক আর শয়তানি ছাড়া যে তোমার আর কোনো মুরোদ নেই তা আমি আগেই বুঝেছিলাম। রিভেঞ্জ নিতে এসেছ! রাস্কেল। মেঘার নখের যোগ্য তুমি ছিলে না।

- রিভেঞ্জ? না অনিলবাবু। আদৌ না। প্রতিহিংসার জন্য আপনাকে টুপিতে হাপিশ করে সহজেই খরগোশ করে বের করতে পারতাম। সে এলেম আমার আছে। আপনি এ আর্টকে নীচু চোখে দেখতেই পারেন, তা'তে আর্টের কিছু এসে যায়না। আমি আর্টিস্ট স্যর, আমি রিভেঞ্জের মানু্ষ নই। আমি সত্যিই আপনার মেয়েকে ভালোবেসেছিলাম জানেন, মেঘাও আমাকে ভালবেসেছিল।  আপনি ওকে বাধ্য করেছিলেন আমার থেকে দূরে সরে আসতে। তবে বিশ্বাস করুন, ওর আত্মহত্যার জন্য আমি আপনাকে দায়ী করিনি কোনোদিন।

- শাট আপ। ইডিয়ট। এত বছর পর এই ডার্ক ম্যাজিকে আমায় বিপদে ফেলবে ভেবেছ?

- না হালদারবাবু। আমি মেঘার ভালোবাসায় ফিরে এসেছি, আমি জানি আপনি বড় যন্ত্রণায় আছেন। আমারই মত। আমি আপনার জন্য এসেছি স্যর। থাকবেন আমার সঙ্গে এই জগতে? নাকি ফিরে যাবেন? ব্যবসায়, কলকাতায়, অফিসে, হেরে যাওয়া জগতে...। এ'খানে মেঘার সুবাস আছে; আমার ভালোবাসার জোরে তার সুবাস এখনও টিকিয়ে রেখেছি। থাকবেন এখানে? মেঘার সুবাস দু'জনে ভাগ করে কাটিয়ে নেব?

- কী হচ্ছে কী এ'সব!

- আপনি চাইলেই আমি আপনাকে খামের বাইরে ছেড়ে আসতে পারি। কিন্তু সে'খানে দেওয়ালে টাঙানো মেঘার ছবি আছে হালদারবাবু। মেঘা নেই। মেঘা এ'খানে আছে। আমার মধ্যে। থাকবেন প্লীজ?

- ফ্রড! এ'সব মিথ্যে!

**

ঝিমটি ভাঙতেই হালদারবাবু টের পেলেন টেবিলে কেউ বেনামী খাম রেখে গেছে। সেক্রেটারি কিছুই বলতে পারল না, এমন কী সিসিটিভিতেও কাউকে তাঁর ঘরে এ খাম নিয়ে আসতে দেখা যায়নি। ভোজবাজিই বটে।

হালদারবাবু মিচকি হেসে মাথা নাড়লেন; আজ মেঘার জন্মদিন। কতদিন মেয়েটার গায়ের মায়াবী গন্ধ এমন ভাবে নাকে এসে ঠেকেনি। কতদিন। মনোজ ছোকরাটার এলেম আছে। আর বেশি চিন্তা না করে উকিলকে ফোন করলেন অনিল হালদার; উইলের ব্যাপারটা ঠিকঠাক করে তারপর এ খাম খুলতে হবে। আজই।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু