Skip to main content

মুঝে ইয়াদ আতি হ্যায়



"...অপনে দেশ কি মিট্টি কি খুশবু
মুঝে ইয়াদ আতি হ্যায়
মুঝে ইয়াদ আতি হ্যায়
কভি বেহলাতি হ্যায়
কভি তড়পাতি হ্যায়
মুঝে ইয়াদ আতি হ্যায়"।

মাটির টান, দেশের টান, ফেলে আসা সময়ের টান; এ'সবের মিশেলে বোধ হয় এমন সুরই তৈরি হয়। আর গানের কথায় এত সহজে কী ভাবে যে মায়ের আদর আর সোঁদা গন্ধ মিশিয়ে দেওয়া যায়; তা জাভেদবাবুই জানেন। পতাকা, পার্লামেন্ট আর সিলেবাসের ইতিহাস; এ'সবের বাইরে যে দেশটুকু; এ গান একান্তভাবে সেই দেশের।

প্রত্যেকটা মানুষ নিজের মধ্যে যত্ন করে বয়ে নিয়ে চলে একটা দেশ; 'আমি-রিপাবলিক'-
কারুর কাছে সংবিধান বলতে মায়ের সাতপুরোনো গানের খাতা, আবার কারুর কাছে আয়নার এক কোণে সাঁটা লাল টিপ।
কারুর পতাকা বলতে শিব্রাম, কারুর দেরাজে যত্নে রাখা ফেরত-না-দেওয়া রুমাল।
কারুর মুক্তিযুদ্ধ লোকাল ট্রেনের মান্থলিতে, কারুর ইতিহাস জমাট বেঁধে আছে অজস্র পোস্ট না করা চিঠিতে।

খোদ ভারতবর্ষের বুকের মধ্যে ধুকপুক করে চলেছে একশো কোটিরও বেশি দেশ। এ গান তেমন যে কোনো দেশের জাতীয় সঙ্গীত হয়ে উঠতে পারে। এই গানের মধ্যে আছে সেই অগুনতি দেশের জার্নাল। আর আছে সেই সমস্ত দেশের  কাছে ফিরতে চাওয়ার কাঙালপনা।

আমার দেশের চেহারার সঙ্গে আপনার দেশের চেহারায়
ও চরিত্রে বিস্তর ফারাক। যেমন মিনিবাসের জানালায় কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে যে মেয়েটি গা এলিয়ে বসে; তাঁর দেশে হয়ত সদ্য ভাঙা প্রেমের অনাবৃষ্টি। আবার প্রায় অনাহারে বেড়ে ওঠা যে কিশোর তেরো বছর বয়সে প্রথম পাউরুটি চুরি করেছে, তার দেশ জুড়ে তখন ফরাসী বিপ্লব মিইয়ে দেওয়া অভ্যুত্থান।

অনবরত নিজের দেশের স্মৃতি হাতড়ে চলা আর ক্রমশ  সে দেশ থেকে দূরে সরে যাওয়া; হারিয়ে যাওয়া; এই দোলাচল রয়েছে এ গানের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। 'দেশ'য়ের রেসিপি একেকজনের কাছে এক এক রকম আর সঞ্চিত স্মৃতির হাত ধরে নিজের সে দেশকে চিনে নিতে পারাটা যে কী প্রবল ভাবে কলম্বাসিও! দেশকে চিনে নিতে পারার নিবিড় ভালোবাসা মেশানো সুরটুকু সবার বুকেই ইতিউতি বাজে; এ গান সেই সুরকে বড় মোক্ষম ভাবে ধরেছে।

এ'খানে সুরে বাজিমাত নেই, জলপটি আছে।
এ গানের কথায় বিদ্যুৎ নেই, আছে মায়ের কাঁধ;  যে'খানে থুতনি রাখলে সমস্ত জমাট বাঁধা অভিমান গলে জল হতে বাধ্য।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু