Skip to main content

খুনের গল্প


এক

অফিসের ক্যান্টিনে চারাপোনা বা ব্রয়লার কাহাতক সহ্য হয়। কাজেই সোমবারের তেতো ভাবটা কাটাতে আজ লাঞ্চের সময় বেরিয়ে তন্দুরি রুটি আর দু’বাটি মটন কষা খেয়ে ফিরছিলেন তাপসবাবু। মনোজের হাতে বানানো সরেস মিঠে পান একটা খেলে জিভে লেগে থাকা কষা মাংসের স্বাদের প্রতি যথাযথ স্যালুট জানানো হবে; অতএব তক্ষুনি অফিসে না ঢুকে মনোজের পান দোকানের দিকে এগিয়ে গেলেন তিনি। অফিসের লাগোয়া যে খান দুই পানের দোকান নেই তা নয়, কিন্তু পান বানানোর ব্যাপারে মনোজের পরিমিতিবোধটা শ্রদ্ধা করেন তাপস সাহা ; কাজেই সঠিক পানের জন্য বাড়তি হাফ কিলোমিটার অনায়াসে হেঁটে যান তিনি। মনোজের দোকানে পৌঁছনোর আগেই ভবদুলাল গাঁয়েন লেনের নিরিবিলিতে থমকে দাঁড়াতে হল তাপসবাবুকে।
“এই যে তাপসবাবু, ও মশাই! শুনছেন? এক মিনিট প্লীজ”।

ট্র্যাকস্যুট আর স্পোর্টসশ্যু পরা এক ভদ্রলোক তার দিকেই ছুটে আসছিলেন। বেয়াড়া দুপুরে এমন জগঝম্প মেজাজে জগিং করতে বেরিয়েছেন; ব্যাপারটা অস্বস্তিকরই বটে।

- আমায় ডাকছেন?
- এই গলিতে আর ক’টা তাপসবাবুকে জোটাতে পারব বলুন। উফ, সেই কখন থেকে আপনাকে ডাকছি মাইরি। শোনার নামই নেই।
- সরি, আমি শুনতে পাইনি।
- শুনতে পাবেন কী করে? মাংস রুটি হোক বা সন্ধ্যের শিঙাড়া জিলিপি। সকালের ডালকচুরি হোক বা রাত্রের কাতলা কালিয়া ও গুড়ের পায়েস; খাবার দেখলে আপনার হুঁশ থাকে নাকি! নোলা সড়াক করে বেরিয়ে আসে আর মগজ ঝপাৎ করে বন্ধ। ডাক শুনবেন কী করে?
- এক্সকিউজ মি? চিনি না জানি না, এমন ভাবে কথা বলছেন কেন?
- ও মা! চিন্তা করবেন না। আমি কিছু মনে করিনি। বেশ করেছেন আমার ডাক শুনতে পাননি। রিল্যাক্স।
- দেখুন, আমি বলছি যে বলা নেই কওয়া নেই আপনি আমার সঙ্গে এমন দেমাক নিয়ে কথা বলছেন কোন সাহসে?
- দেমাক? ও মা। ভূতের আবার দেমাক।
- আপনি ভূত?
- রীতিমত। স্পষ্ট।
- গাঁট্টা মেরে সিধে করে দেব, দিনদুপুরে সং সেজে ভূত। ইয়ার্কি হচ্ছে? আর আপনি আমায় ডেকে ডেকে সাড়া পাননা?
- পাই না তো। এই গত হপ্তায় প্রতিটা দিন আমি আপনাকে ভোর পৌনে ছ’টায় ডেকেছি। কিন্তু কী খতরনাক ঘুম মশাই আপনার তাপসবাবু। পৌনে আটটা নাগাদ বৌদির খ্যাঁকখ্যাঁক শুরু না হলে বিছানা থেকে আপনাকে হাফইঞ্চিও নড়ানো যায় না যে।
- তবে রে শালা। বৌ তুলে কথা? তিন তলার ঘরের দরজা এঁটে শুই। নীচে কোলাপিসবল গেট আর চারটে গোদরেজের তালা। ওপরের দরজায় ট্রিপল ছিটকিনি। আর তুই কিনা আমায় রোজ ভোরে ডাকতে আসিস? মামদোবাজি?
- শুধু কি ঘুমের সময় ডেকেছি তাপসবাবু? গতকাল সন্ধেবেলা যখন হরেনদার দোকান থেকে কুড়ি টাকার ফুলুরি আর বেগুনি কিনছিলেন, কত করে ডাকলাম। আপনার সাড়া মেলেনি।
- তবে রে ব্যাটাচ্ছেলে! আমার পিছনে স্পাই হয়ে ঘুরঘুর করা! তুই জানিস আমার পিসতুতো ভাই লালবাজারের বাঘা অফিসার? আমার ছেলেবেলার বন্ধু মন্টুর ভায়রা হল গিয়ে এমএলএ? বল, বল কে তোকে আমার পিছনে লাগিয়েছে।
- ভূতকে পুলিশ আর এমএলএ দেখিয়ে কী হবে তাপসদা। তবে যাক, আজ অন্তত শুনতে পেয়েছেন। গুডবাইটা বলে যেতে পারব।
- গুডবাই? আপনি কে? কে আপনি? চট করে বলুন নয়তো...।
- কতবার বলব! ভূতকে চমকিয়ে লাভ নেই তাপসবাবু। বললাম তো রিল্যাক্স। আর আপনি কি সত্যিই আমায় চিনতে পারেননি?
- আমার চেনা উচিৎ ছিল?
- আলবাত চেনা উচিৎ ছিল। খুন করবেন অথচ যাকে খুন করলেন তাকে বেমালুম ভুলে মেরে দেবেন?
- যত পাগল অপোগণ্ড জোটে আমারই কপালে। আমি খুনি? বলতে লজ্জা করে না? কে রে তুই?

- রিল্যাক্স। আমি আপনার নিউ ইয়ারের হেলথ রেজোলিউশন; নিয়মিত জগিং আর পরিমিত খাওয়াদাওয়ার রেজোলিউশন। আমায় চিনতে যে পারবেন না তা বেশ জানতাম; জানুয়ারির অর্ধেক পেরিয়ে গেছে যে।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু