Skip to main content

কাহারবা নয়


রাতের বাতাসে বেশ ডিসেম্বরের ছ্যাতছ্যাত। গায়ে চাদর জড়িয়ে বসে রেডিও শুনছিলাম, মনে বেশ বৈঠকি আমেজ। টকমিষ্টি চানাচুরের কয়েক পেগ মুখে পড়তেই মান্নাবাবুর গলাটা কানে আরো মিষ্টি হয়ে ঠেকল বোধ হয়।

সমস্তই ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু হঠাৎ কী যে হল; দুম করে 'কাহারবা নয় দাদরা' গেল মাঝপথে থেমে। রেডিও থামেনি, বিজ্ঞাপন বিরতিও নয়৷ মান্নাবাবু গান থামিয়ে দুম করে জিজ্ঞেস করলেন;.

- কী ব্যাপার? মতিগতি ঠিক আছে?

- ইয়ে, আমায় বলছেন? (আমি তো থ)

- আর কাকে বলব শশীবাবু? বলি হচ্ছে না যে। আসর ঝুলে যাচ্ছে।

- আজ্ঞে আমি আপনার তবলচি শশী নই৷ আমি তো স্রেফ শ্রোতা, তাও রেডিওর বাইরে বসে। ওই কাহারবা দাদরার ইস্যুটা আপনি আপনার তবলচিকে কনভে করুন, কেমন?

- চোপ। যত ভুল কি তবলায়? গান শোনার ব্যাপার কি এতটাই এলেবেলে? হচ্ছে না আপনার দ্বারা, এমন বিশ্রীভাবে গান শুনছেন যে মনে হচ্ছে রেডিও থেকে বেরিয়ে এসে কান মুলে দিই।

- সর্বনাশ! আমি কী করলাম? মন দিয়েই শুনছিলাম যে। ওই যে 'গোলাপজল দাও ছিটিয়ে,  গোলাপফুলের পাপড়ি ছড়াও'...বড্ড দরদ দিয়ে ধরেছেন স্যার...আহা। খামোখা থামতে গেলেন..।

- খামোখা? বটে? এ'দিকে আপনি যে ভুল তালে চানাচুর চিবোচ্ছিলেন, সে বেলা? 

- আজ্ঞে?

- গানের তাল একদিকে, আর আপনার চানাচুর চেবানোর মচমচ যে অন্য পানে বইছে। দুনিয়াকে রসাতলে পাঠাতে আপনার মত দু'চারজন বেপরোয়া চানাচুর-চিবিয়েই যথেষ্ট। 

- তালে তালে চানাচুর চেবাবো?

- চানাচুর তৈরিই হয়েছে গানের তালে তালে চেবানোর জন্য। তাতেই গানের মুক্তি, চানাচুরের উত্তরণ। 

- আর আমি বেসুরে চানাচুর চিবিয়ে গান মাটি করছি?

- আলবাত।  সুরের ওঠা নামা অনুভব করুন, মনপ্রাণ দিয়ে। আর চানাচুরের প্রতিটি কণা সেই অনুভবে এসে মিশবে। তা না পারলে বাড়ির ওই চার ডিবে চানাচুর গঙ্গায় ভাসিয়ে আসুন। অসুরের হাতে ইয়ারবাড আর বেসুরোর মুখে চানাচুর বেমানান।

***

আমার বার বার মনে হয় যে 'কাহারবা নয় দাদরা' শুনতে শুনতে আমি হয়ত আড়াই সেকেন্ডের জন্য ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। তবে এই চানাচুর চেবানোর সুর-তাল-লয় যে ধরে ফেলেছি, তা কি মান্নাবাবুর ধমক ছাড়া হত? সুগায়কের সহশিল্পীদের মধ্যে একজন চানাচুর-চিবিয়ে-শ্রোতার গুরুত্ব অপরিসীম, তা আজ বেশ বুঝেছি। আর বেহালা শিখতে না পারার আফসোসটা কেটে গেছে, স্পষ্ট বুঝছি যে এ দুনিয়ায় বেহালাবাদকের চেয়ে গুণী চানাচুর-চিবিয়ের সংখ্যাটা অনেক কম।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু