Thursday, January 3, 2019

কাহারবা নয়


রাতের বাতাসে বেশ ডিসেম্বরের ছ্যাতছ্যাত। গায়ে চাদর জড়িয়ে বসে রেডিও শুনছিলাম, মনে বেশ বৈঠকি আমেজ। টকমিষ্টি চানাচুরের কয়েক পেগ মুখে পড়তেই মান্নাবাবুর গলাটা কানে আরো মিষ্টি হয়ে ঠেকল বোধ হয়।

সমস্তই ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু হঠাৎ কী যে হল; দুম করে 'কাহারবা নয় দাদরা' গেল মাঝপথে থেমে। রেডিও থামেনি, বিজ্ঞাপন বিরতিও নয়৷ মান্নাবাবু গান থামিয়ে দুম করে জিজ্ঞেস করলেন;.

- কী ব্যাপার? মতিগতি ঠিক আছে?

- ইয়ে, আমায় বলছেন? (আমি তো থ)

- আর কাকে বলব শশীবাবু? বলি হচ্ছে না যে। আসর ঝুলে যাচ্ছে।

- আজ্ঞে আমি আপনার তবলচি শশী নই৷ আমি তো স্রেফ শ্রোতা, তাও রেডিওর বাইরে বসে। ওই কাহারবা দাদরার ইস্যুটা আপনি আপনার তবলচিকে কনভে করুন, কেমন?

- চোপ। যত ভুল কি তবলায়? গান শোনার ব্যাপার কি এতটাই এলেবেলে? হচ্ছে না আপনার দ্বারা, এমন বিশ্রীভাবে গান শুনছেন যে মনে হচ্ছে রেডিও থেকে বেরিয়ে এসে কান মুলে দিই।

- সর্বনাশ! আমি কী করলাম? মন দিয়েই শুনছিলাম যে। ওই যে 'গোলাপজল দাও ছিটিয়ে,  গোলাপফুলের পাপড়ি ছড়াও'...বড্ড দরদ দিয়ে ধরেছেন স্যার...আহা। খামোখা থামতে গেলেন..।

- খামোখা? বটে? এ'দিকে আপনি যে ভুল তালে চানাচুর চিবোচ্ছিলেন, সে বেলা? 

- আজ্ঞে?

- গানের তাল একদিকে, আর আপনার চানাচুর চেবানোর মচমচ যে অন্য পানে বইছে। দুনিয়াকে রসাতলে পাঠাতে আপনার মত দু'চারজন বেপরোয়া চানাচুর-চিবিয়েই যথেষ্ট। 

- তালে তালে চানাচুর চেবাবো?

- চানাচুর তৈরিই হয়েছে গানের তালে তালে চেবানোর জন্য। তাতেই গানের মুক্তি, চানাচুরের উত্তরণ। 

- আর আমি বেসুরে চানাচুর চিবিয়ে গান মাটি করছি?

- আলবাত।  সুরের ওঠা নামা অনুভব করুন, মনপ্রাণ দিয়ে। আর চানাচুরের প্রতিটি কণা সেই অনুভবে এসে মিশবে। তা না পারলে বাড়ির ওই চার ডিবে চানাচুর গঙ্গায় ভাসিয়ে আসুন। অসুরের হাতে ইয়ারবাড আর বেসুরোর মুখে চানাচুর বেমানান।

***

আমার বার বার মনে হয় যে 'কাহারবা নয় দাদরা' শুনতে শুনতে আমি হয়ত আড়াই সেকেন্ডের জন্য ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। তবে এই চানাচুর চেবানোর সুর-তাল-লয় যে ধরে ফেলেছি, তা কি মান্নাবাবুর ধমক ছাড়া হত? সুগায়কের সহশিল্পীদের মধ্যে একজন চানাচুর-চিবিয়ে-শ্রোতার গুরুত্ব অপরিসীম, তা আজ বেশ বুঝেছি। আর বেহালা শিখতে না পারার আফসোসটা কেটে গেছে, স্পষ্ট বুঝছি যে এ দুনিয়ায় বেহালাবাদকের চেয়ে গুণী চানাচুর-চিবিয়ের সংখ্যাটা অনেক কম।

No comments: