Skip to main content

রাজ্যপাট



- ভাই মন্ত্রী! ও মন্ত্রী!

- রাজাদা, ডাকছেন?

- আমার আর কে আছে ভাই?

- কেন? সিংহাসন আছে। এক ডিবে ইয়ারবাড আছে৷ মাইক্রোওয়েভে দেড়খন্ড পিৎজা আছে। আর আছে বালিশের ওয়াড়ে চায়ের ছোপ।

- তোমার আমি এত কদর করি ভাই মন্ত্রী,  অথচ তোমার যত চ্যাটাংচ্যাটাং কথা। নেহাত রাজ্যপাট সামলে রাখো। সকালে পোনামাছটা, বিকেলে সিগারেটটা এনে দাও; তাই বলে কি একটু মিঠে সুরে কথা বলতে নেই?

- আহ, রাজন। রাজপুরুষের অত নেকুপুষু হলে মানায় না।

- মনে বড় দুঃখ ভাই মন্ত্রী।

- দুঃখ? স্যাডনেস? ফ্যাঁচফোঁচ? হুহু?

- মান্নাদের গলা কাঁপুনির মত। সঞ্জীবের শেষ লাইনের মত। রোববার দুপুরের কলেজস্ট্রীটের মত।

- সরেস। রাজাদা, বড় বাজে বুকে। না?

- বড্ড বাজে। রীতিমত বাজে ভায়া। বুকে জমাট বেঁধে আসে। মনে হয় যদি ছাতে উঠে সাইকেল চালাতে পারতাম তা'হলে খানিকটা ভার লাঘব হত।

- আপনার দুঃখ ভল্যিউম উইদাউট ওয়েট নয় দেখছি৷

- হাই ডেন্সিটি মন্ত্রী।  হাই ডেন্সিটি।

- মায়ের কথা মনে পড়ছে?

- ছেলেবেলার দুপুরে মাকে জড়িয়ে শুতাম। বিকেলে তড়াং করে উঠে পড়তাম আমার প্রাণের বন্ধুর সাইকেলের কলিংবেলে। সব কন্ডেন্স করে গেছে ভাই।

- তা, এ দুঃখের গন্ধ কিছু টের পাচ্ছেন শাহেনশাহ?

- কনসেন্ট্রেট করলেই সে গন্ধ পাওয়া যায়। তবে ফ্লাকচুয়েট করে। কিছুক্ষণ আগেই ছিল পেট্রোলে শিউলি৷ এখন পাচ্ছি ফেনাভাতে টোস্টবিস্কুট।

- কী জানেন রাজাধিরাজ,  সুখ ব্যাটাচ্ছেলে বেশ কুকুরছানার মত চঞ্চল; এই হলুদ রবারের বল মুখ করে দৌড়ে বেড়াচ্ছে তো অমনি আপনার হাঁটু জড়িয়ে ল্যাপ্টালেপ্টি আর কুঁইকুঁই। দুঃখ বেড়াল, সহজে ধরা দেবে না। তাকে খেলিয়ে খেলিয়ে বুকে তুলে নিলে তবে সেই গ্যাঁট হয়ে বসে জিরোবে, গালে গাল ঠেকিয়ে মৌজ করবে। কাজেই ব্যস্ত হবেন না রাজাদা, দুঃখকে জার্মিনেট করতে দিন।

- দেব?

- আলবাত দেবেন। দুঃখগুলো বড় না হলে আপনাকে সামলে রাখবে কে? দুঃখগুলো জড়িয়ে না থাকলে বাঁদরামির ভাইরাসে বখে যাবেন যে!

- ভাইমন্ত্রী, তুমি ছিলে তাই এ যাত্রা রাজ্যপাট টিকিয়ে রাখতে পারলাম। নয়ত কবেই ভেসেটেসে যেতাম...।

- আমি রাখারই বা কে আর ভাসাবারই কে। নদী যার, ডোবানোর ফন্দি যার; দুঃখের খড়কুটোও তারই দেওয়া। তা মহারাজ, সাইকেল না থাক; মাদুর তো আছে। যাবেন নাকি? ছাতে?

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু