Skip to main content

আট জন

ব্রজমোহন
বিষ মাখানো ছুঁচের ডগাটা অনেক চেষ্টা করেও নিজের হাতে ফুটিয়ে দিতে পারলেন না ব্রজমোহন।
এত জ্বালা, এত যন্ত্রণা; তবু আত্মহত্যাটা এখনও করা হয়ে উঠলো না। এবারেও হল না। তবে আত্মহত্যা না হোক, সুইসাইডের একটা শেষ চেষ্টায়; ছুঁচটাকে পাশে সরিয়ে রাখলেন ব্রজমোহন।
সান্ত্বনা পুরষ্কারের মত, 
মুখ বেয়ে ওঠা শেষ রক্তধারার মত; 
উত্তেজিত ব্রজমোহনের ঠোঁটের পাশ দিয়ে পানের পিক গড়িয়ে পড়লো।


নির্মল 
মাথার ওপরের গাম্বাট মেঘের ড্যালাটার নাম কোনি দিলেন নির্মল চপওলা।
মুঠো শক্ত করে বলা "ফাইট কোনি ফাইট" যদি মেঘমল্লারের কাজ করে; এ'টুকুই আশা।


পহলাজ
একদিন হয়েছে কী, পহলাজবাবু ডাউন কাটোয়া লোকালের জানালার সিট নিজের রুমাল পেতে দখল নিয়েছেন। কিন্তু মুনমুনদেবী রুমাল রিজার্ভেশন পাত্তা না দিয়ে দিব্যি বসে পড়েছেন সে সিটে।
তাই দেখে পহলাজবাবু তেলেবেগুনে চিড়বিড় হয়ে চিৎকার করে উঠলেন;
"সেন সর, সেন সর, সেন সর, সেন সর"!!!!!


অরুন মার্ফি
চেনা কবিতায় নতুন শব্দরা আবছায়া খুঁজে নিলো।
নতুন কবিতাটা না পড়েই বসে পড়তে হল অরুন মিত্রকে।
কারণ ততক্ষণে;
ফ্লাইট থেকে নেমে কনভেয়ার বেল্টের দিকে হাঁটতে শুরু করেছেন মার্ফি।

বাল্মীকি 
প্রফেসর বাল্মীকি সুকুমার সমগ্রটা বগলদাবা করে টাইম মেশিনে ওয়াপিস যাত্রা শুরু করলেন।
পেজমার্কটা তখন লক্ষণের শক্তিশেলের পাতায় গুঁজে রাখা।


বনলতা
সে'বার।
ফর আ চেঞ্জ।
হাজার বছরের পথ হাঁটলেন সেন বনলতা।

আর হাঁটা শেষ হলে ফস্ করে লিখলেন;
"...থাকে শুধু অন্ধকার, 
মুখোমুখি বসিবার 
রায় সুকুমার"।


অনুপ
ভূতে বিশ্বাস প্র‍্যাক্টিস করছিলেন অনুপবাবু।
টেবিলে ছড়ানো ছিল কিছু ভূতুড়ে গল্পের বই, কিছু তান্ত্রিকপন্থার পুরোনো পুঁথিপত্র আর খান চারেক খুলি।

ঘণ্টা তিনেকের একনিষ্ঠ চেষ্টা করার পরেও যখন বুকে ভূত-বিশ্বাস দানা বাঁধতে শুরু করেনি, তখন একরাশ বিরক্তি নিয়ে টেবিল ছেড়ে উঠে এসে আয়নার সামনে দাঁড়ালেন অনুপবাবু।
আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব দেখতে না পেয়ে সামান্য ভূত-বিশ্বাস গোছের গন্ধ নাকে এসেছিল বটে; তবে তা টিকলো না।
উপায়ন্তর না দেখে এস-ও-এস হাঁকলেন অনুপবাবু; মিতাকে লেখা না-পোস্ট করা প্রেমের চিঠির গোছাটা তাক থেকে নামালেন তিনি। খান দুই গদগদ লাইন পড়েছেন কি পড়েননি; অমনি ভূতের ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপতে শুরু করলেন আদিসপ্তগ্রামের অনুপ গোস্বামী।

অমলকান্তি
একটা নরম অমলেট চেয়েছিলেন অমলকান্তি। রোদ রঙা, যার গায়ে অল্প লাল পেঁয়াজ কুচির ছোপ ছোপ।
**
সসপ্যানের বুকে গলগল করে ছড়িয়ে পড়া কুসুমে চিড়বিড় ভালোবাসেন অমলকান্তি।
**
ভেবে দেখলেন অমলকান্তি। শালপাতার দোনার স্পর্শে অমলেটে সুর যোগ হয়।
**
মাখন ভাতের তাপে অমলেটে লজ্জা আসে। আসে কবিতা। মনকলমের খসখসে সে অমলেটের বুকে গল্প জমা হয়।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু