Skip to main content

জাগ্রত

মানিব্যাগে টাকার হিসেব কখনও গড়বড় হয়না অনুপমের। পকেটের ভাঁড়ারে আটআনার হেরফেরও তার নজর এড়িয়ে যেতে পারে না।  অতিমাত্রায় হিসেবী বলে তার সামান্য বদনামও রয়েছে। অনুপম অবশ্য গায়ে মাখে না। এ যুগে হিসেবী না হলে পদে পদে ঠকতে হবে। আর ঠকার মধ্যে আর যাই হোক, বুদ্ধিমত্তা নেই।

কিন্তু আজ সামান্য গড়বড় দেখা দেওয়ায় মেজাজটা গেল বিগড়ে। বাসের ভাড়া মেটানোর পর মানিব্যাগে থাকা উচিৎ ছিলো একটা পাঁচশো টাকার নোট, তিনটে একশো টাকার নোট, দু'টো পঞ্চাশ টাকার নোট, একটা কুড়ি টাকার নোট আর আটটা দশ টাকার নোট। সাথে তেরো টাকার খুচরো কয়েন। সাকুল্যে থাকার কথা এক হাজার তেরো টাকা। কিন্তু রয়েছে এক হাজার সতেরো টাকা। অর্থাৎ দু'টো দু'টাকার কয়েন বাড়তি। বোঝো!

চার টাকা এলো কোথা থেকে? কথা চার টাকা নিয়ে নয়। কথা বেশি কম নিয়েও নয়। কথা হচ্ছে, এ'ভাবে হিসবে গড়বড় হবে কেন? নিজেকে চড় মারতে ইচ্ছে হচ্ছিল অনুপমের। আজ চার টাকা বেশি রয়েছে, কাল চারশো টাকা কম থাকবে অথচ সে টেরটিও পাবে না।

ডিনারের পর পড়ার টেবিলে লেটার প্যাড, ডটপেন আর ছোট ক্যালকুলেটর টেনে নিয়ে বসলে সে। এই গড়বড়ের শেষ দেখে ছাড়তে হবেই।

**

বিরক্তির সাথে যখন লেটার প্যাড আর কলম ছুঁড়ে ফেললে অনুপম তখন রাত পৌনে দু'টো। সিগারেট ধরাতেও ইচ্ছে হলো না, বিরক্তির স্বাদটা মুখে একটানা গোঁত্তা খেয়ে চলেছে। চার টাকা! এলো কোথা থেকে?
বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছিলো অনুপম। উপায়ন্তর না দেখে মানতই করে বসলো মনে মনে ,
"মা কালী, এ হেঁয়ালি কাটিয়ে দাও। আগামী কালই চার টাকা অফিসের পাশের মন্দিরের প্রণামীর বাক্সে ফেলে আসবো। লাঞ্চের সময়। মাইরি। বাঁচিয়ে দাও মা। এ সাসপেন্স না কাটলে ব্লাড শুগার বেড়ে যাবে। মা! মা গো!"।

**

ভোর চারটের সময় বাথরুমের যাওয়ার জন্য উঠেই এক ঝটকায় অনুপমের মাথার জট কেটে গেলো। আজ ক্যান্টিনে লাঞ্চ শেষে কী খেয়াল হলো একটা বাড়তি রসগোল্লা কিনে খেয়েছিলেন। পাঁচ টাকার।  কিন্তু ক্যাশে বিল করানোর সময় সে'টা বাদ গেছে।

প্রবলেম সল্ভ হয়েও হলো না। চার টাকার এক্সেস্‌ থেকে এক টাকার ডেফিসিট। মা তারা ফার্মেসির ক্যালেন্ডারের মা কালীর দিকে তাকিয়ে এক রাশ বিরক্তি ছুঁড়ে দিলে অনুপম।

**

তেঁতুলতলা কালীবাড়িতে অন্তত তিরিশ বছর ধরে পুরোহিতগিরি করছেন বিশ্বনাথবাবু। কিন্তু এমন বিদঘুটে কাণ্ড তিনি বাপের জন্মে দেখেননি। ভোরবেলা এসে মন্দিরে ঢুকতেই দেখেন প্রণামী বাক্সের তালা ভাঙা! অথচ সেখান থেকে টাকা পয়সা বিশেষ সরেছে বলে মনে হলো না। শুধু নজরে এলো একটা চিরকুট

"পুরোহিতমশাই,
মা কে জানাবেন এগ্রিমেন্ট মত এক টাকা নিয়ে গেলাম।  ডেফিসিট কম্পেনসেটেড। বুঝতেই পারছেন টাকাটা ইম্পরট্যান্ট নয়, ইম্পরট্যান্ট হলো ব্যাল্যান্স। আপনি বেশি চিন্তা করবেন না। মা জানেন। 
ইতি, জাগ্রত ভক্ত"।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু