Skip to main content

হরির কল

হরির কাজে মন নেই। গোটা দিন কল-কব্জার ঘ্যাঁচ-ঘোচ। প্রোডাকশন প্রোডাকশন করে দিনভর ধানাই-পানাই। জান বিলকুল কয়লা। দুনিয়াটাই ফালতু। ধুর।

শিপমেন্ট আসে, শিপমেন্ট যায়; বেওসা বেওসা করে হরির হাড়ে দূর্বা গজায়। তাও ম্যানুফ্যাকচারিং হলে হরির মনে হত যে কিছু একটা জব্বর কাজে আছে। তা নয়, স্রেফ প্রসেসিং। যে কাঁচা মাল ফ্যাক্টরি তে ঢুকল, তাকেই এক যন্ত্রে জীবাণু-মুক্ত করে নেওয়া, তারপর অন্য যন্ত্রে ঘষে-মেজে নেওয়া, অতঃপর সেই মান্ধাতা আমলের প্রসেসরে সেই কাঁচা মাল গুঁজে দিয়ে রি-ফরম্যাট করে নিষ্পাপ করে নেওয়া। অতি মামুলি কেস।।
এরপর সেই কাঁচা মালকে নতুন ছাঁচে ফেলে তার একটা হিল্লে করে দেওয়া; স্বর্গীয় ব্র্যান্ডিং যাকে বলে। এবং সব শেষে নতুন নতুন লটে ফিনিশড মাল ফিরতি চালান করে দেওয়া। যেখানে চালান দেওয়া; সেখানেই মালগুলো চটকে-টসকে ফিরে আসে কারখানায় কাঁচা মাল হিসেবে।

এই কারখানাতেই জিন্দেগী বয়ে গেল হরির; দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর।  হরির গেঁজে যাওয়া জীবনের একঘেয়েমি কেউ চিনল না, কেউ বুঝল না। দুনিয়া শুদ্ধু মানুষ হরির মত সাধা-সিধে মাল’কে সেলাম ঠুকেই কাটিয়ে গেলো। কেউ যে ডেকে দু-দণ্ড মনের কথা বলবে, একটু চা-বিড়ি নিয়ে কিছুক্ষণ আড্ডা দেবে; সে বেলায় লবডঙ্কা। অপদার্থের দল সব।

হরি বেশ জানে, এই বেওয়ারিশ মহাকালের কারখানাতেই তার আদি-অন্তহীন থাকা। বেঁচে থাকা কি তা সে আরে কোনোদিন বুঝবে না। শুধু পৃথিবী থেকে পাইকারি হারে আসা মৃতদের আত্মাগুলো কে তাঁর কারখানায় প্রসেস করে যাওয়া আর সেই প্রসেসড আত্মাগুলোকে দুনিয়াতে ফেরত পাঠানো; এই যন্ত্রণাময় কারখানা জীবন থেকে তাঁর মুক্তি নেই। থেকেই থেকেই দুনিয়ার মানুষ-গুলো যখন আদেখলার মত ঈশ্বর-ঈশ্বর বলে ধেই ধেই নাচে ; তখন হরির খুব কাঁচা খিস্তি করতে মন চায়। 

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু