গড়িয়াহাট থেকে চটপট উঠে পড়লাম ট্রামে। টিপ-টিপ বৃষ্টি এড়িয়ে রাসবিহারীর ওদিকে চলে যাবো সহজে। বেদম ভীড়। ফুটবোর্ড ছাড়িয়ে কোনও মতে দু পা এগিয়েই দাঁড়িয়ে থাকতে হলো। ক্ষতি নেই। কয় মিনিটের ব্যাপার। হ্যান্ডেল আঁকড়ে গৌরাঙ্গ হয়ে দু-তিন মিনিট। কী আর ক্ষতি।
গায়ে চেপ্টে কলকাতার রকমারি ঘাম। ঘাম-গন্ধ বিচার করে কি শার্লক জনৈকের মুদ্রাদোষ চিনতে পারতেন ? বোধ হয় না, লন্ডনে কি আর এমন প্যাচ-প্যাচে ঘামের হিসেব আছে ছাই। আমি ঘাড় নাড়তে পারছি না কিন্তু একজন জেলি-লজেন্স বিক্রেতা ভীড়
ম্যানেজ করে সুড়সুর করে ভেতরে চলে গেলেন।
শুধু ঘামের গন্ধ নয়, ভালো
করে নাক-ফোকাস করলে অনেক নাসিক-রসদ জুটে যায়; ট্রামের নিজেস্ব
গন্ধ, সহযাত্রীর ব্যাগ-বন্দী কাগজের ঠোঙ্গা আর তেলেভাজা মেশানো
গন্ধ, নারকোল তেলে চুপচুপ তেলের গন্ধ। অলফ্যাক্টরি সেল্স্স’য়ের এমন জিম আর হয় না।
তারপর রয়েছে শব্দ-বাহার। খোকার কান্না, কন্ডাক্টরের
হাঁক, রাস্তার হই-রই, ট্র্যামের ঘ্যাংচ-ঘোচ, “দাদা একটু সাইড দেখি নাববো”-গোছের রিকুয়েস্ট, “ঠ্যাং
সামলে মশাই” টাইপ হুমকি; কল্পতরু অব ইয়ার-ড্রামস।
স্পর্শ ব্যাপারটাতেও একটু মন দেওয়া দরকার বলে মনে হলো, সেটা অবজার্ভ করতে করতেই আসা করি সময় কেটে যাবে।
সহযাত্রীর কনুই, কোমর, নিতম্ব, পিঠ ও ঠ্যাং; সব’ই ভীষণ ভাবে সহজ-মনা
এবং স্বেচ্ছাচারী। সমস্ত ট্রাম-যাত্রীই
সে সুবাদে সামগ্রিক ভাবে একটি সায়ামিজ-দঙ্গল মাত্র।
স্পর্শ শব্দটা অতি-নমনীয়, বলা ভালো চটকানি; নাগরিক চটকানি। সবে এমন চমত্কর সব স্পর্শ-মুখী বড় বড় কথা ভাবছি এমন সময় স্পষ্ট টের পেলাম যে আমার পিছনের পকেট কেউ সযত্নে হাতড়ে চলেছে।
স্পর্শ শব্দটা অতি-নমনীয়, বলা ভালো চটকানি; নাগরিক চটকানি। সবে এমন চমত্কর সব স্পর্শ-মুখী বড় বড় কথা ভাবছি এমন সময় স্পষ্ট টের পেলাম যে আমার পিছনের পকেট কেউ সযত্নে হাতড়ে চলেছে।
“এইই শালা কে বে পকেটে হাত দেয়?” বলে চিত্কার জোড়ার
আগেই হাওয়া, আমার মানি-ব্যাগ
ছু-মন্তর।
সবে বিলাপ-প্ল্যান ফাইনালাইজ করছি এমন সময় হাড়-হিম করে দেওয়া চমক। ফের পকেট হাতড়ানি এবং রক্ত-জল হয়ে গ্যালো যখন বুঝতে পারলাম
যে আমার মানি-ব্যাগ আমার পকেটে ফেরত এসেছে। আমার মানিব্যাগে কি আর-ডি-এক্স প্ল্যাণ্ট
করলে কেউ ? এটা কি পৃথিবীতে প্রথম এমন ঘটনা
? গিনেস’কে বললে বিশ্বাস করবে ?
বিশেষ ভাবনা চিন্তা করতে পারলাম না। গন্তব্যে পৌছে গেছিলো ট্রাম। তড়িঘড়ি নামতে
হলো। নামার মুখেই কে যেন কানে ফিসফিস করে বললে “শুয়োরের বাচ্চা, বোলচাল বাতেলা-বাজের আর পকেটে তেরো টাকা ? লে, দু টাকা আমার তরফ থেকে টিপ্স”!
রাস্তায় নেমেই স্যাট করে মুখ ঘোরালাম, অবশ্যই
মালুম করতে পারলাম না কে বললে।
মানিব্যাগ খুলে দেখলাম, হাতে গরম পনেরো
টাকা।কি সুপার-লজ্জা। ভদ্রলোকের কাছে একবারটি যদি এপোলোযাইজ করতে পারতাম।
Comments