Skip to main content

স্মৃতি-গাঁট্টা

কফি-শপের কোনে চেয়ার টেনে নিয়ে বসতেই চমক

-   পচা না ?”

দেখি, মিতুস্কুলের সহপাঠী। অঙ্ক টিউশনের সহ-যোদ্ধা। স্কুলের গড়পড়তা বন্ধুত্বের মত স্কুলেই খতম যোগাযোগ। মাঝখানে বারোটা বছর, আজ ফের দ্যাখা

-   “তুই মিতু না ?”
-   “কফিশপে একা ?”
-   “অপেক্ষায়, তুই ?”
-   “অপেক্ষায়, তুই ঢোকার পর থেকেই আমি তোকে নীহারছিলাম
, চিনতে একটু দিক্কত্‍ হলো, কিন্তু ফাইনালি বুঝে গেলাম যে এটা তুই”

লে হালুয়ানীহারছিলামদিক্কত্‍এই মিতুর এক মুস্কিলবাঙালি, কিন্তু ঝাঢ়খন্ডে কাটিয়েছে ছোটবেলার বেশ কিছু বছরবাংলায় কোনও টান নেই কিন্তু বাঁশকাঠিতে অবাঞ্ছিত কাঁকড়ের মত মাঝে-সাঝেই ঠুসে দেয় এমন আধ-হিন্দী শব্দ 
আমার টেবিলেই চেয়ার টেনে বসলে মিতু

অজস্র ফালতু গপ্পকে কোথায় আছি, কি করছি, বিয়ের স্টেটাস, সিগারেট আমি কবে ধরেছি; মেয়েরা যে কি করে এত অনাবিল ফালতু বকতে পারে! আমি স্রেফ হুম-হুম ছুটিয়ে গেলাম, ও কথায় কথায় একাকার। যেন মাঝের বারোটা বছর ছিলই না।  
কত বেফালতু গপ্প মিতুর।

“ মনে আছে অমুক স্যারের কথা ?”
“জানিস মুনমুনের মেয়ে হয়েছে ?”
“দীপঙ্করকে মনে আছে ? এখন সে মস্ত বড় ডাক্তার, ক্যালিফোর্নিয়াতে আছে”
“তুই এখনো আবীর-সুমনদের সাথে এতটা ক্লোজ ? ইস, তোকে কি হিংসে হয় রে”
“ তুই এখনো থ্যাবড়া-ক্যাবলা হয়ে থাকিস কেন ?”
“ইয়াদ আছে আমায় গাবলু একটা  লাভ-লেটার লিখেছিলো ? বেনামে ? টাইপরাইটারে টাইপ করে? সেটা আবার তুই তহকিকাত করে জানতে পেরেছিলিস গাবলুর কাজ বলে ?উফ, প্রিন্সিপাল কে দিয়ে কি মারটাই না খাইয়েছিলাম বেচারা গাবলু কে বল! এখন ভাবলে খারাপ লাগে; চিঠিটা কিন্তু খুব সুন্দর ছিলোতাই না বল ?”

বলতে চেয়েও বলতে পারলাম না যে বেনামী লাভ-লেটারের কীর্তিটি আমারই ছিলো, পরে ঘাবড়ে গিয়ে গাবলুর নামে চালিয়ে দি। গাবলুর এতই সুনাম ছিলো প্রেম-পত্র লিখিয়ে হিসেবে যে কেউই অবিশ্বাস করেনি।

আজও কলজে কেঁপে উঠলো ব্যাপারটা খোলসা করতে।

_ “ আমার বন্ধুটি আজ হয়তো আর আসবে না রে, আমি উঠি”, বাহানা ঝুলিয়ে উঠে পড়লাম।
ছলাত্‍-ছল সুরে মিতু জানতে চাইলে “ উঠছিস ? তবে আবার কবে দ্যাখা করবি ?”
অগত্যা মোবাইল নাম্বার সমর্পণ করে বেরিয়ে এলাম কফি-শপ থেকে।  
আজই সন্ধ্যেবেলার মধ্যে নম্বর বদলে ফেলতে হবেটপ প্রায়োরিটি। 

Comments

rdb said…
palpitation !! :P

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু