Skip to main content

ডায়েরির ব্যাপার-স্যাপার


নিউ ইয়ার। সব চেয়ে বড় প্রাপ্তি হলো ডায়েরিএ সময় দু জাতের মানুষ জেগে ওঠেনএক ভাগ “একটা ডায়েরি প্লিজ দেবেন, ছেলের/অমুকের/তমুকের/নিজের প্রয়োজন” গোছের অন্য ভাগ “হাতে এলে অবশ্যই তোমায় দেবো, আসলে আজকাল ডায়েরি বড় কম পাই” ধরনের

ডায়েরি যারা চাইছেন, তার ডায়েরি আদৌ ব্যবহার করেন না, ডায়েরি জোগাড় করাই তাঁদের হবি
যারা দেবো বলে রোয়াব নিচ্ছেন; তারা ডায়েরি মুফত্‍য়ে পান কিন্তু বিলি করার সময় মনে হয় বুকের ভেতর হাত ঢুকিয়ে কলজে ছিড়ে বের করছেন।

ডায়েরি-দাতা'দের দ্বিধা-দ্বন্দ :

হাতে রয়েছে রকমারি ডায়েরি।
বড় ,চমত্কার চামড়ার বাঁধাই, সোনালী কালিতে ছাপা বছর সংখ্যা , এবং দামী : তাদের জন্যে যাদের তৈল-মর্দন অতি দরকারী। যেমন হবু শশুর, প্রমশনের মরশুমে বস, মালদার খরিদ্দার।
মাঝারি সাইজ, মাঝারি জাত,রেক্সিন বাঁধাই, গড়পড়তা পাতার কোয়ালিটি: তাদের জন্যে যাদের কে দিয়ে “কেমন দিলুম, না দিলে পেতে?” গোছের একটা হাসি দেওয়া চলতে পারে।
ছোটো-খাটো সস্তা ডায়েরি: উলু-খাগড়ার জন্যে। চ্যারীটি আর কী। ছেলের স্কুলের মাস্টার, বেকার ভাইপো, অফিসের পিয়ন; এদের মাঝে হরির লুটের ভঙ্গিতে ছড়িয়ে দেওয়া।

ডায়েরি-লাভ করেছে যে, তার মনের দোলাচল:

আহ: , ডায়েরি। প্রথমে হাতে পেয়েই চটপট নিজের নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর মায় নিজের ব্লাড-গ্রুপ পর্যন্ত টুকে রাখাতারপর মন দিয়ে দেখা দিল্লী, বোম্বে এবং চেন্নাই শহরের ম্যাপমস্তিএস-টি-কোড আই-এস-ডি কোড দেখে সময় কাটিয়ে দেওয়া কিছুক্ষণএরপর মননিবেশ এ বছর ও আগামী বছরের ক্যালেণ্ডারে; গেজেটেড হলিডে, শনি-রবি কী পরিমাণে রয়েছে; এসবের একটা হিসেব করে নেওয়া।
পকেটে হাওয়া খেললেও দেখে নেওয়া চাই ইনকাম ট্যাক্স স্ল্যাবের হিসেব কী বলছে।

তারপর আসে গুরুভারটা।
ডায়েরি তো এলো, এ নিয়ে করবো কী? কারোর হাতে অ্যাটম বোমার রিমোট দিলেও হয়তো সে এত চিন্তা করবে না; যতটা না সে ডায়েরির ব্যবহার নিয়ে ভাববে। মহা-কেলো
দিন-ডায়েরি লিখবো ? কতবার শুরু হয়েছে কিন্তু সে রোজনামচা ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত গড়ায়নি।
অফিসের কাজের নিয়মিত ফিরিস্তি রাখতে পারি।
ক্লাসের দেবু বলতো আমার মধ্যে অদ্ভুত ছন্দ সেন্স আছে, কবিতা লেখার চেষ্টা করতে পারি। বয়স কী একটা বড় ফ্যাক্টর ?
প্রবন্ধ লিখতে পারিচেষ্টা করলে কেন পারবো না
হাজার চিন্তায় ঘেমে নেয়ে একাকার।
এবং নিশ্চিত ভাবেই, জুলাই মাসে সেই ডায়েরির বিভিন্ন পাতা জুড়ে থাকে অন্য লেভেলের ব্যাপার-স্যাপার।
“ফুল প্যান্ট – ৫, ফুল শার্ট – ৪, হাফ শার্ট- ৩, শাড়ি-৪”
অথবা
“নুন -১ কিলো, ফরচুন সোয়াবিন তেল – ১ কিলো, মুসুরির ডাল (প্যাকেট করা’,লুজ নয়) হাফ কিলো, বাঁশকাঠি ৫ কিলো....ইত্যাদি ইত্যাদি”।

পুনশ্চ:

আমার স্থির বিশ্বাস, যারা আদত ডায়েরি-সমঝদার, তারা সময় মত, নিজে পছন্দ করে; ডায়েরী কেনেন, অগোচরে। এবং এও আমার বিশ্বাস যে সে সব গর্ভবতী-ডায়েরী, চিরকাল পড়ে থাকে লোক-চক্ষুর অন্তরালেই।   

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু