Skip to main content

সিংহ

মন দিয়ে কম্পিউটারে হিসেব করে চলেছিপৃথিবী ভ্যানিস হয়ে গ্যাছে চোখের সামনে থেকেশুধু মাইক্রোসফ্ট-এক্সেলের কারিকুরি আর কী-বোর্ডে আঙ্গুলের খট খটমুণ্ডু স্থির-শুধু চোখের এপাশ-ওপাশতিরিং-তিরিং করে এক স্প্রেডসীট থেকে অন্যতে ছুটে চলেছে কারসর, ফর্মুলার ভেলকি ছুটছে সমস্ত এক্সেলিও খোপেমগজ মনসংযোগের চোটে অবশ হয়ে আসছে। আমি অর্জুন, ওই এক্সেল ফাইল আমার পাখির চোখ! উত্তেজনা।

এ সব সময়ে,এই প্রবল নিরবিচ্ছিন্ন ফোকাস কে এদিক হতে দেওয়া যায় না।

চাপরাসি চা নিয়ে এলো – “ সাহাব, চায়”
আমি তো আগুন : “চায় চায় করে উদ্ধার করেগা ? দেখতা নাহি ব্যস্ত হ্যায় ? ভাগ”

পিওন ফাইল নিয়ে এলো – “ একটা সই দরকার ছিলো স্যার”
ডিসগাস্টিং। “ এইটাই তোমার সময় হলো ফাইল আনার ? ইউসলেস ফেলো কোথাকার!”

হেড-ক্লার্ক একটা প্রশ্ন নিয়ে এলো – “ মুখার্জীদা, এই স্টেটমেন্ট একটু আবার দেখুন তো...”
অসহ্য। গর্জে উঠতে হলো “ আচ্ছা আমি কী একটু যত্ন করে কাজ করতে পারবো না ?কিসের স্টেটমেন্ট ? নাউ ইজ নট দ্য টাইম!”

সহকর্মী এক গাল হেসে উঁকি দিয়ে গেলেন – “ কী ব্যাপার হে, ভারী ব্যস্তবিশেষ কিছু ?”
মাথায় বিস্ফোরণ; “ হ্যাঁ, বিশেষ কিছু বলতে আমার চোদ্দ পুরুষের শ্রাদ্ধ। আর কিছু?”

বউয়ের ফোন-ডাক বেজে উঠলো মোবাইলেবিরক্তি নিয়ে ফোন তুলে বললাম “ অফিসে আমি কতটা ব্যস্ত জানো ?এরকম সময়ে অসময়ে আমার বিরক্ত করতে কতবার বারণ করেছি হ্যাঁ? যত্তসব!”


কাজের হালুয়া পাকাতে এরপর এলেন অন্য কেউনীহারিকা, সদ্যাগতা সহকর্মীতন্বী, আধুনিকা, পশ্চিম পোশাকের উন্মুক্ত-তম মতবাদে বিশ্বাসী , মায়াবী স্কচ-মার্কা কণ্ঠস্বর; এক মুঠো সবুজ হাওয়া, এক পশলা বৃষ্টি
নীহারিকা কেরোসিনে-দেশলাই কন্ঠে বললে “ মিস্টার মুখার্জী, আপনি কী খুব ব্যস্ত ? আসলে আমার মোবাইলটা হাত থেকে পড়ে দিয়ে টেবিলের তলায় ঢুকে গ্যাছে, আমার স্কার্ট কী ভীষণ টাইট কী বলবো, কিছুতেই নিচু হতে পারছি না। পিওনটাও যে কোথায় গ্যালো দেখতে পারছি নাপ্লিজ আমার ফোন টা বের করতে হেল্প করুন না। করুন না। প্লিজ”

কম্পিউটার থেকে চোখ তুললামমাথায় হালকা ঝিম-ঝিম

মুখ দিয়ে সরাত্‍ ভাষা  বেরিয়ে এলো; “ ব্যস্ত ? আরে না না, একদম না। তা ছাড়া সব সময় কী অমন কাজ কাজ করে অবসেসড থাকলে চলে ? মোটেই নাপ্লিজ আপনি চিন্তা করবেন নাকই দেখি কোথায় গ্যালো আপনার বেলেল্লা মোবাইল”

বলে প্রায় হাফ-দৌড়ে নীহারিকার টেবিলের কাছে গিয়ে সটান সেধিয়ে গেলাম তার টেবিলের নীচে



Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু