Skip to main content

বলো দেখি কত দূরে যাবে



বসে বসে গাইছিলেনগানটা শেষ হতেই, গীটারটা কাঁধে ঝুলিয়ে দাঁড়ালেন। গীটারে একটা টুঙ দিয়েই মিচকি হাসি দিলেন। সম্ভবত গীটারটার প্রতিতারপর, সপাট চাইলেন সামনের অন্ধকারে ঢেকে থাকা দর্শক আসনের মুখগুলোর দিকে। ওই মুখগুলি দেখতে হয়তো সুমনের বাহির-বাতির দরকার তেমনটা হয় না।

মিচকি হাসিটা আলতো প্রসারিত করেই গলা ছাড়লেন : “ ছেড়েছো তো অনেক কিছু পুরনো অভ্যেস...”
ঠিক যেন এতক্ষন তাঁর আর দর্শকদের মধ্যে মুষ্টিযুদ্ধ চলছিলো; বহুক্ষণ সেটা চলায় তিনি ক্লান্ত হয়ে পকেট থেকে রিভলভার বার করে দড়াম করে ফায়ার করলেন।

মুখে গেয়ে চললেন, “অসুখ বিসুখ হওয়ার পরে জিলিপি সন্দেশ...”। দৃষ্টিতে তিনি খেলে ক্ষতমের ভাষায় বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন, “ কেমন, দেখলে তো ? তোমাদের সব কটা হৃদয়কে এক ধাক্কায় অবশ করে দেওয়া আমার বাঁয়ে হাত কা খেল ? দেখলে তো ?”

উপচে পড়লো পরিচিত গান;
“ছেড়েছো তো অনেক কিছুই পুরনো বোল-চাল
পুরনো ঘর পুরনো ঘর কুড়োনো জঞ্জাল
হাল ছেড়ো না বন্ধু, বরং কণ্ঠ ছাড়ো জোরে
দেখা হবে তোমায় আমায়.......”

না:, “অন্য গানের ভোরে” তিনি গাইলেন না। গাইলেন না
থামলেন। ফের মিচকি হাসি।  

গান থামিয়ে, সুমন বলে চললেন:
“ জানেন, একটা জিনিষ না থাকলে, আমাদের কিচ্ছুটি হবে না, কিচ্ছুটি না। সেই ব্যাপারটা না থাকলে আমার আপনার কোনওদিন কিছু হবে নাসেইটা না থাকলে কোনও ব্রাদার-ইন-লয়ের ক্ষমতা নেই আমাদের জন্যে ভালো কিছু করে
ওই একটি ব্যাপার থাকলে সমস্ত সুন্দর হয়ে যাবে। কিন্তু ওইটি না থাকলে যে কিস্যুটি নেইবলুন তো কোন জিনিষ সেটা ?
ভালোবাসা, ভালোবাসা না থাকলে আমাদের কোনওদিন কিস্যুটি হবে না, আপনারা এটা নিশ্চিত জানবেন বন্ধুরা; ভালোবাসা ছাড়া আমাদের কোনও গতি নেই, আমাদের কোনও উপায় নেই। ভালোবাসুন বন্ধুরা, ভালোবাসুন

আমার সামনের দুটি দর্শকাসনে বসে থাকা এক বৃদ্ধ দম্পতি; ঠিক সেই মুহূর্তে বৃদ্ধার মাথাটি অলস ভাবে বৃদ্ধের কাঁধে নেমে এলো।

সুমন গাইলেন:

“হাল ছেড়ো না বন্ধু, বরং কণ্ঠ ছাড়ো জোরে
দেখা হবে তোমায় আমায় ভালোবাসার ভোরে”


( ছবিটি "কবীর সুমন লিরিক্স"য়ের সৌজন্যে )

Comments

খুব ভালো লাগলো! সুমন আর শ্রোতা - এই দুয়ের মধ্যে একটা অদৃশ্য টাগ অফ ওয়ার চলতে থাকে। হঠাত একটা হ্যাচকা টান দিয়ে উনি খুব হেলায় গানের গতিপথটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেন। শ্রোতারা হার মেনে বিব্হল হয়ে ওঠেন! এইটে স্রেফ অনার পক্ষেই সম্ভব।
Anirban Halder said…
It's just wonderful to have 'Guru' back in action. He needs to do at least one odd solo concert once in a while. There are scores of his fans worldwide to ensure a full house. I just can't have enough of his track in 'Jagorone jai bibhabori' in 'Ranjana Aami Aar Ashbona'. Loved this first person's account. Well written, mate.
Anirban Halder said…
It's just wonderful to have 'Guru' back in action. He needs to do at least one odd solo concert once in a while. There are scores of his fans worldwide to ensure a full house. I just can't have enough of his track in 'Jagorone jai bibhabori' in 'Ranjana Aami Aar Ashbona'. Loved this first person's account. Well written, mate.

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু