(ঘটনাটি অথবা দুর্ঘটনাটি ঠিক এক বছর পুরনো)
সকাল সকাল বোমা। ব্রেকফাস্ট নেই। হোয়াট? এনার্কি নাকি? বউ’য়ের কাছে এনকোয়েরী করতেই মালুম হলো কেস : করওয়া চৌথ! আধা-কম্যুনিষ্ট বউ বলে কী! এসব তো উত্তর ভারতীয় ব্যাপার-স্যাপার!তায় উপোস করে থাকার নিয়ম হলো স্ত্রী’দের’; স্বামী’দের আয়ু-বৃদ্ধির অভিপ্রায়ে। এসবের মধ্যে গোদা-বাঙালি পুরুষ-সিংহ আমি ফাঁসলাম কেমন করে? ভাত-ডাল-চচ্চড়ি-ঝোল গিলে অফিসে বেরোনো অভ্যেস; এদিকে এক আনফোরসিন দুর্যোগ এসে হাজির।
বউ বুঝিয়ে বলায় কেস খোলসা হলো। রীতি-রেওয়াজের
মুখে কেরোসিন; এই বঙ্গ-করোয়া চৌথটা হলো নব্য সামাজিক ফ্যাশন-বিশেষ।
বাঙালির দেশি-কসমোপলিটিয়ানা
অর্জনের দিকে আর একটি পদক্ষেপ; বউয়ের বান্ধবী-মহলে
সবাই নাকি ব্যাপারটা জাতি নির্বিশেষে গ্রহণ করেছে। গতবার বউয়ের খপ্পড়ে পরে ধানতেরাসে পকেট-ত্রাস উত্সব
পালন করতে বাধ্য হয়েছিলাম। এবারে করওয়া চৌথ’য়ের পাল্লায় পড়লাম। আমার উপোসের কারণ হচ্ছে স্ত্রী-মুখী সমব্যথা। যেহেতু বউ উপোস যাবে; সেহেতু বর’ও উপোস যাবে; রোম্যান্সের
হিসেব তাই বলে; বউ’এর বান্ধবীদের বরেরা
নাকি স্বেচ্ছায় উপোস যাচ্ছে। লে হালুয়া। কখন সন্ধ্যেবেলা বউ চালুনি দিয়ে চাঁদ দেখবে, তারপর সে খাবে; এবং বলি-নায়কের
মত আমারও Chivalry’র কেতা মেনে তার পরেই জল-স্পর্শ করা উচিত।
আমি আপ্রাণ বোঝাবার চেষ্টা করলাম যে এই উপোস কী ভাবে বাঙালি জাতির মেরুদণ্ড ভেঙ্গে
দিতে পারে; কিন্তু কে শোনে কার কথা। অবশেষে নির্জলা অবস্থায় অফিস-মুখো হলাম
।
।
অফিসে কোনও রকমে দাঁতে দাঁত চেপে বেলা
পার করছি। প্রেসার মনে হচ্ছে লো হয়ে যাচ্ছে, গা গুলিয়ে
উঠছে ক্ষীদের চোটে, জিভ শুকিয়ে যাচ্ছে;
যে কোনও মুহূর্তে মনে হচ্ছে কোল্যাপ্স করে যাবো। লাঞ্চে সবাই যখন ক্যান্টিন-মুখো; আমি প্রায় ভেঙ্গেচুরে তপস্যা লাটে
তোলার মুখে। কোনওরকমে মন শক্ত করলাম। বউ বেচারী আমার জন্যে হোক বা FDI’য়ের প্রতি মরাল সাপোর্টের খাতিরে হোক উপোস করে আছে; আমার কী একটা দায়িত্ব নেই? আমি কী এমনই পাষণ্ড?
সহকর্মী বচু-দা লাঞ্চে যাওয়ার আগে চিংড়ি মালাইকারী অফার করে
গেলেন; বচু-বৌদির
হাতের মালাইকারী যে অমৃত-সমান সেটা আমার জানা ছিলো। ইচ্ছে হচ্ছিল বউ ডিভোর্স করলে করবে, মেরে দিই মালাইকারী। বহু কষ্টে সামলাতে হলো। নিজেকে অনুপ্রাণিত করবার জন্যে একটু নিরবিলি মুহূর্তে
মানিব্যাগ থেকে বউ’য়ের পাসপোর্ট সাইজ ফটো বার করে একটু হামি খেয়ে নিলাম; আহা রে, আমার জন্যে কেউ না খেয়ে আছে। পারবো, আর কয়েক ঘন্টা
আমি না খেয়ে থাকতে পারবো। জয় আন্না।
বিকেল পাঁচটা নাগাদ, যখন প্রায় আধ-মরা
হয়ে গেছি; পাল্স ঢিলে হয়ে এসেছে; আমার মিষ্টি-নরম
বউ’টির জন্যে মন কেমন করে উঠলো; সেও তো
অফিসের কাজ ঠেলছে সেই সকাল থেকে উপোস থেকে। বৌ’য়ের খবর নিতে ফোন
করলাম।
- “ হেল্লো সোনা, কেমন
আছো?”, আমি বিগলিত কন্ঠে শুধোলাম।
- “খারাপ থাকবো কেনো?” বউ
সটান।
- “ না মানে অফিসের কাজে কোনও অসুবিধে হচ্ছে না তো?”
- “কেনো? অসুবিধে কেনো
হবে?”
- “না মানে, গোটা
দিন উপোস করে আছো কী না....”
- “উপোস? এইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইই......যা:!
দেখেছো কান্ড! অফিসে হাজার কাজের চাপে তো ভুলেই গেছিলাম করওয়া চৌথের কথা আর সেই ভুলে
কল্যিগদের সঙ্গে লান্চ করে ফেলেছি। যাক! এখন থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত আর কিচ্ছুটি খাবো না, ওকে ডিয়ার? এবার বলো, করওয়া চৌথে তুমি আমায় কী গিফ্ট দেবে! ভালো
গিফ্ট দেওয়াটা কিন্তু একটা নিয়ম আজকের দিনে, জানো তো? একটা হীরের...”
খটাং করে কাটলাম ফোন!তুরন্ত বেরোলাম অফিস থেকে। টার্গেট দুটো! প্রথমত: আরসালন, দ্বিতীয়ত : ডিভোর্স লইয়ার!
শালা!
Comments