Friday, November 2, 2012

দু:স্বপ্ন


মধুময় ধড়মরিয়ে উঠে বসলেনচারিদিকে চেয়ে দেখলেন আর কেউ নেইখাটের ওপর তিনি একাপরনের গেঞ্জিটা ঘামে চুপচুপ।মান্ধাতা আমলের ফ্যানটা ঘটঘট শব্দে ঘুরে চলেছে, সাথে দেওয়াল ঘড়ির টিকটিক। নাইট-বাতির আবছা আলোর চেয়ে রাতের গাঢ় অন্ধকারই বেশি স্পষ্টতবে অন্ধকারে কিছুক্ষণ চোখ সইয়ে নিয়ে টের পেলেন যে স্বপ্নটা নিদেন স্বপ্ন ছিলো নাশিয়রের কাছের ইজি-চেয়ারে যে ছায়ামূর্তিটি বসে আছে সেটার অবয়ব দেখে মধুময় নিশ্চিন্ত হলেন যে ওটা বাবাপ্রতিবেশিরা বার বার বলা সত্বেও কাশী গিয়ে পিন্ড না দিয়ে আসাটা যে গোয়ার্তুমি হয়েছে সেটা স্পষ্ট বুঝতে পারলেন মধুময়আসলে যৌবনে আত্মস্থ করা কম্যুনিজ্মের পোকাটা এই ষাট বছর বয়সেও জ্যান্ত ছিলো। মধুময় বুঝলেন যে এই বয়সে এসে অন্তত এইটুকু মালুম হলো যে দৈবিক-ভৌতিক ব্যাপারটা নেহাত লোক ভোলানো বাতেলা নয়; নইলে বাবার দেখা এইভাবে পাওয়া যেতো না।

-   তুমি কি ভয় পেয়েছো মধু?, বাবার স্পষ্ট কণ্ঠস্বর

-   “বাবা?”, মধুময় যাচাই করতে চাইলেন

-   “চিনতে অসুবিধে হচ্ছে?”

-   “না মানে, ইয়ে , ভয় নয়, একটু ভেবড়ে গেছি...আপনি এতদিন তো...”

-   “এতদিন দেখা দিই নি, আজ দিচ্ছি, সঙ্গত কারণ আছে বলেই দিচ্ছি”

-   “কেমন আছেন?”

-   “ঠাট্টা করছো?”

-   “ইয়ে, মানে আমি মোটামুটি....”

-  “তোমার হাল-হকিকত আমার জানতে বাকি নেই। ভাগ্গিস বে-থা করোনি; নয়তো তোমার উড়ন-চন্ডিপনার জন্যে আর পাঁচটা জীবন জলে যেতো”

-   “বকছেন?”

-   “তুমি বকাবকির উর্ধে বাপ, চিরকালই”

-   “কি একটা সঙ্গত কারণ বলছিলেন, আজ দেখা দেওয়ার...”, মধুময় উসখুস করে ওঠেন।

-   “কারণ একটাই, যে এতদিনে তুমি আমায় এ অবস্থায় দেখার যোগ্য হয়েছ

-   “মানে?”

-   “অত্যাধিক খাওয়ার লোভই তোমার কাল হবে আমি জানতাম।গতরাতের চিংড়ি-মাংসের ওভার-ডোজ সহ্য হয়নি তোমার।  দুই ঘন্টা আগেই তুমি এই পারে চলে এসেছো মধু, ঘুমের মধ্যে আচমকা দড়াম করে বেড়ে যাও ব্লাড-প্রেশার তোমার ওই কোলেস্টেরলের ডিপো মার্কা হার্ট সাসটেন করতে পারেনি। এতদিন বাদে ছেলে আমায় দেখতে পাবে, আমি ছুটে আসবো না?আজ যে আমি কি খুশি মধু তোমায় বলে বোঝাতে পারবো না, তাড়াতাড়ি চল; তোমার মা পথ চেয়ে বসে আছেন” 

No comments: