Skip to main content

দু:স্বপ্ন


মধুময় ধড়মরিয়ে উঠে বসলেনচারিদিকে চেয়ে দেখলেন আর কেউ নেইখাটের ওপর তিনি একাপরনের গেঞ্জিটা ঘামে চুপচুপ।মান্ধাতা আমলের ফ্যানটা ঘটঘট শব্দে ঘুরে চলেছে, সাথে দেওয়াল ঘড়ির টিকটিক। নাইট-বাতির আবছা আলোর চেয়ে রাতের গাঢ় অন্ধকারই বেশি স্পষ্টতবে অন্ধকারে কিছুক্ষণ চোখ সইয়ে নিয়ে টের পেলেন যে স্বপ্নটা নিদেন স্বপ্ন ছিলো নাশিয়রের কাছের ইজি-চেয়ারে যে ছায়ামূর্তিটি বসে আছে সেটার অবয়ব দেখে মধুময় নিশ্চিন্ত হলেন যে ওটা বাবাপ্রতিবেশিরা বার বার বলা সত্বেও কাশী গিয়ে পিন্ড না দিয়ে আসাটা যে গোয়ার্তুমি হয়েছে সেটা স্পষ্ট বুঝতে পারলেন মধুময়আসলে যৌবনে আত্মস্থ করা কম্যুনিজ্মের পোকাটা এই ষাট বছর বয়সেও জ্যান্ত ছিলো। মধুময় বুঝলেন যে এই বয়সে এসে অন্তত এইটুকু মালুম হলো যে দৈবিক-ভৌতিক ব্যাপারটা নেহাত লোক ভোলানো বাতেলা নয়; নইলে বাবার দেখা এইভাবে পাওয়া যেতো না।

-   তুমি কি ভয় পেয়েছো মধু?, বাবার স্পষ্ট কণ্ঠস্বর

-   “বাবা?”, মধুময় যাচাই করতে চাইলেন

-   “চিনতে অসুবিধে হচ্ছে?”

-   “না মানে, ইয়ে , ভয় নয়, একটু ভেবড়ে গেছি...আপনি এতদিন তো...”

-   “এতদিন দেখা দিই নি, আজ দিচ্ছি, সঙ্গত কারণ আছে বলেই দিচ্ছি”

-   “কেমন আছেন?”

-   “ঠাট্টা করছো?”

-   “ইয়ে, মানে আমি মোটামুটি....”

-  “তোমার হাল-হকিকত আমার জানতে বাকি নেই। ভাগ্গিস বে-থা করোনি; নয়তো তোমার উড়ন-চন্ডিপনার জন্যে আর পাঁচটা জীবন জলে যেতো”

-   “বকছেন?”

-   “তুমি বকাবকির উর্ধে বাপ, চিরকালই”

-   “কি একটা সঙ্গত কারণ বলছিলেন, আজ দেখা দেওয়ার...”, মধুময় উসখুস করে ওঠেন।

-   “কারণ একটাই, যে এতদিনে তুমি আমায় এ অবস্থায় দেখার যোগ্য হয়েছ

-   “মানে?”

-   “অত্যাধিক খাওয়ার লোভই তোমার কাল হবে আমি জানতাম।গতরাতের চিংড়ি-মাংসের ওভার-ডোজ সহ্য হয়নি তোমার।  দুই ঘন্টা আগেই তুমি এই পারে চলে এসেছো মধু, ঘুমের মধ্যে আচমকা দড়াম করে বেড়ে যাও ব্লাড-প্রেশার তোমার ওই কোলেস্টেরলের ডিপো মার্কা হার্ট সাসটেন করতে পারেনি। এতদিন বাদে ছেলে আমায় দেখতে পাবে, আমি ছুটে আসবো না?আজ যে আমি কি খুশি মধু তোমায় বলে বোঝাতে পারবো না, তাড়াতাড়ি চল; তোমার মা পথ চেয়ে বসে আছেন” 

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু