আজ এ শহরে এক মধ্যবয়স্ক দম্পতী ছুটে আসছেন। একে অপরকে সামলে রাখবার প্রবল চেষ্টা করে চলেছেন
দুজনে। তবু সমস্ত কিছু চোখের সামনে ভেসে যাচ্ছে। দাউ দাউ আগুনে চামড়া গলে যাওয়ার যন্ত্রনা।
বুকের রক্তে ঠান্ডা জল মিশে যাওয়ার আভাস। কষ্ট শব্দটি কী আলখেল্লা। মানুষ মারা যাওয়ার
সময় কেমন কষ্ট হয় ? দু:খ
টের পাওয়া যায় ? স্বামী-স্ত্রী সযত্নে ভাবতে চাইছেন। ভেসে যেতে
চাইছেন। চুরমার হতে চাইছেন। মারা যেতে চাইছেন।
এই মূহুর্তে, যখন
আমরা কেউ অফিসে ব্যস্ত, কেউ রাস্তায়, কেউ
চাকরির খোঁজে, কেউ ঘরের আরামে, কেউ দুপুর
ঘুমে; দুইজন মানুষ সুতীব্র ভাবে ধেয়ে আসছেন কোলকাতার দিকে। ছুটছেন, অথচ পৌছতে চাইছেন না
।
।
বুকের নরমে,ওমে বেড়ে
ওঠা এক মুঠো স্নেহ রয়ে গেছে কলকাতায়। শহরে। চাকরির আশ্বাসে। নিশ্চিন্ত হতে। সেই স্নেহ আজ বাইপাসের ধারে রক্ত মাখা পিন্ড হয়ে
হারিয়ে গ্যালো। সায়ন্তনি আর পাঁচটা সাধারণ ঘটনা হয়ে চলে গেলেন কোলকাতার রাস্তা ধরে। সায়ন্তনি’র বাবা-মা কলকাতা
ছুটে আসছেন অসহায় ভাবে নিজেদের শেষটুকু দেখতে; আমাদের সঞ্চিত
কোনও আশ্বাস বাণী নেই। তাঁদের আমরা অবশ্যই ব্যক্তিগত
ভাবে চিনি না, কিন্তু এ দুর্যোগের শহরে; আমাদের সমস্ত সহ্য করে যাওয়া
হাড়গিলে এ হৃত্পিণ্ড-গুলোর অলিখিত নাড়ির টান ভারী নিবিড়।
আমরা শুধু চিনি শহরের এই তামাম রাস্তাগুলোকে, বিশেষ করে
বাইপাসের যন্ত্রনা কে; যে কিছুদিন আগেই নিকেশ করেছিলো এক তরুণ-দম্পতিকে। সায়ন্তনি’র বন্ধু সোমেশ্বরের স্বগোক্তি ছুরি হয়ে বসে থাকুক নিরুত্তাপ এই
শহরের বুকে : “ Governments come and go but I guess we are destined to remain scared
all our life” ।
ভালো থাকুন সায়ন্তনি, প্রার্থনা করি সেই অন্য জগতে যেন ই এম বাইপাস না থাকে।
Comments