Saturday, November 25, 2023

মানুষের পাল্লায়

- হালুম!

- কী চাই?

- ও কী৷ ভয় পেলেন না যে।

- কী ব্যাপার? আপনি কে? অমন সাদা কাপড়ে নিজেকে মুড়ে নাচনকোঁদন করছেন কেন?

- আঁমিঁ ভুঁত! আঁপঁনাঁর স্বঁপ্নে এঁসেছিঁ, এঁ'বাঁর আঁপঁনাঁর পিঁলে চঁমকেঁ দেঁব...।

- যাচ্চলে। ভূতে আবার হালুম করে নাকি?

- ও৷ করে না, তাই না?

- করা উচিৎ না।

- এ তো মুশকিল হল৷ আর এই যে নাকে নাকে কথা বললাম, তা'তেও সামান্য হাড় হিম হয়ে হয়ে যায়নি কি?

- আরে ধুর৷ এ'টা কি ছেলেবেলার ট্রেনে বাবার কিনে দেওয়া ভূতের গল্পের বই নাকি৷ তা'তে মনে পড়ল, আরে আমি তো ফ্লাইটে বসে ঝিমোচ্ছিলাম। স্বপ্নটা এলো কী করে!

- এই ন্যাকামি করবেন না৷ ঝিমোচ্ছিলেন, নাকি? আরে আপনি নাক ডাকছেন মশাই। আশেপাশের প্যাসেঞ্জাররা খাপ্পা হয়ে গেছে।

- এহ্ হে৷ যাক গে। তা', উড়ন্ত প্লেনেও ভূতটূত হানা দেয়?

- প্লেন ব্যাপারটা আমাদের জন্য খুবই কমফর্টেবল।

- আর আপনারা ডাইরেক্ট ভয় না দেখিয়ে স্বপ্নে হানা দেন?

- ডাইরেক্ট ভয় দেখাতে খুব কম ভূতই পারে৷ তার জন্য গভীর সাধনার প্রয়োজন। আমার মত বেশিরভাগ ভূতই এ'রকম স্বপ্নে স্বপ্নে ঘুরে বেড়ায়। তবে স্বপ্নে উদয় হওয়াটাও চাট্টিখানি কথা নয়। বেশ পরিশ্রম লাগে।

- তা, ভয়ের ব্যাপারটা যখন কেঁচেই গেলো, একটা কথা বলুন৷ জ্যান্ত অবস্থায় আপনার পরিচয়টা কী ছিল?

- এক্সকিউজ মী৷ জ্যান্ত অবস্থায় মানেটা কী! এখন দিব্যি জ্যান্ত আছি৷ ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছি৷ আপনাদের স্বপ্নে এসে ফোঁপরদালালি করছি৷ অল ইজ ওয়েল।

- না মানে আমি ইনসাল্ট করতে চাইনি..জন্মিলে মরিতে হবে..।

- অমর কে কোথা কবে! তাই তো৷ তা আমরা ভূতরা মরি তো৷ ইন ফ্যাক্ট মরে যাওয়ার পরেই আমরা মানুষ হয়ে ছটফট করে পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াই, সে'টা কে না জানে।

- আরে৷ ধুর৷ মানুষ মরে ভূত হয়৷ উল্টোটা নয়। আপনি তো আচ্ছা গাম্বাট।

- কী আজগুবি ব্যাপার৷ এ তো মহামাকাল মানুষ৷ আরে মৃত্যু মানে কী৷ সুপিরিয়র ফর্ম থেকে ইনফিরিয়র ফর্মে যাওয়া; সে'টাই তো? ভূতেরা জন্মের পর থেকেই হেসে-খেলে বেড়ায়৷ আজ এ'খানে কাল সে'খানে, শখের প্রাণ গড়ের মাঠ। এক্কেবারে হাইভোল্টেজ ফুর্তি অনবরত। তারপর মারা গিয়ে আমরা মানুষের দেহে বাঁধা পড়ি৷ তারপর বিস্তর হয়রানি৷ আর বজ্জাতি৷

- এই শুনুন! ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেব কিন্তু আমার স্বপ্ন থেকে৷

- নিজের স্বপ্নের ওপর যদি অতই কন্ট্রোল থাকত, তা'হলে তো সহজেই এই এলেবেলে মানুষ ফর্ম ছেড়ে হাইক্লাস ভৌতিক জগতে চলে আসতে পারতেন। সে ক্ষমতা তো নেই।

- আপনি বলছেন ভূতজন্ম মানবজন্মের থেকে সুপিরিয়র?

- আলবাত!

- আপনাদের ইলিশ পাতুরি আছে? শীর্ষেন্দুর অদ্ভুতুড়ে সিরিজ আছে? থাক। অহেতুক এ'সব প্রশ্ন করে আপনাকে বিব্রত করতে চাই না। এ'বার মানেমানে আমার স্বপ্ন থেকে কেটে পড়ুন দেখি৷ ঘুমটা সবে জমে উঠেছে। লেট মি ফোকাস।

- মানুষবাবু। আপনার প্রশ্নগুলো অহেতুক কিনা জানি না৷ তবে এ'বার আমি একটা কথা বলি। আপনার কথাই বলি৷ আপনি নিজের মেয়েকে দেখতে উড়ে যাচ্ছেন৷ আপনার খুকির সদ্য বিয়ে হয়েছে, শিক্ষিত পরিবারের সুপ্রতিষ্ঠিত পাত্রের সঙ্গে। সে ভদ্রপরিবারে আপনার সেই ফুলের মত মেয়েটিকে রোজ খোঁটা শুনতে হয় কারণ তার বাবা নাকি বিয়েতে যথেষ্ট খরচ করেনি। সেই অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সামাল দিতে আর মেয়ের সম্মান বাঁচাতে আপনি ছুটেছেন দু'বাক্স উপঢৌকনসহ। যদিও তা'তেও শেষরক্ষা হবে বলে মনে হয়না। আপনার কি সতিই ধারণা যে মানুষের মরে ভূত হওয়ার প্রসেসটা আসলে সুপরিয়র থেকে ইনফিরিয়র প্লেনে নেমে যাওয়া?

- আমার..আমার কেমন ভয় করছে ভূতবাবু৷ গলাটা শুকিয়ে আসছে, বুকের ভিতর কেমন একটা..কেমন একটা আনচান। আমার ঘুমটা ভাঙিয়ে দেবেন প্লীজ?

- ভয় পাওয়াতেই এসেছিলাম বটে। তবে, এ'ভাবে নয়। আপনি ঘামছেন মানুষবাবু; আমার মত ভূতের ভয়ে নয়, মানুষের ভয়ে৷ যাক। নো হার্ড ফিলিংস প্লীজ। এই মাত্র একটা টার্বুলেন্সে ফেলে দিচ্ছি এই প্লেনটাকে৷ স্বপ্ন ভেঙে যাবে। আর, খুকিকে ভালো রাখবেন, কেমন? আমি আসি।

No comments: