Skip to main content

পুরীতে পল্টুবাবু



- এই যে, পল্টুবাবু।

- যাহ্‌!

- খামোখা ফাঁকি দিয়ে কোথায় আর যাবেন বলুন।

- ধ্যাচ্ছাই। গেল, সব গেল।

- এই, মদনমোহন খাবেন?

- ধুত্তোর। কী কুক্ষণেই না...।

- ওই যে ছোকরা যাচ্ছে? ওই ও'দিকে দেখুন। ওর নাম শ্রীনিবাস। স্বর্গদ্বারে যারা মিষ্টি বিক্রি করে, তাদের মধ্যে ওর প্রডাক্টই সবচেয়ে বেশি অথেন্টিক।

- আরে ধ্যার্‌ রে বাবা।

- অত বিরক্ত হচ্ছেন কেন পল্টুবাবু?

- আমি মদনমোহন খেতে চাইনা।

- মাছ ভাজা? মনোজ পাত্রের দোকানেই পাবেন ফ্রেশ মাছের গ্যারেন্টি। চলুন, মিনিট দুয়েক হাঁটতে হবে, ওই নীলাচলের দিকটায় মনোজের দোকান। খুব মাইডিয়ার ভদ্রলোক, মাছভাজার উপরি গপ্পআড্ডাও জুটে যাবে।

- আমার বয়ে গেছে মাছভাজা খেতে।

- মদনমোহন নয়। মাছভাজা নয়। বেশ, একটা মাঝামাঝি রফা করা যাক। চলুন, লেবু চা আর শিঙাড়া খাওয়া যাক। এদের শিঙাড়াগুলো চিমসে কিন্তু ভারি মুচমুচে।

- দেখুন গোলকবাবু, আমি এই মুহূর্তে কোনও কিছুই খাওয়ার দরকার দেখছি না।

- বেশ। তাহলে হাওয়া খাওয়াটাই হোক। আপনার পাশেই থাকি না হয় খানিকক্ষণ।

- আমি কি রোমান্টিক নায়িকা? আমার পাশে থাকার কী হল?

- আরে মশাই, পুরীতে দেখা হল। এরপর আমি চা শিঙাড়া পমফ্রেটভাজা সাঁটিয়ে ঘুরব, আর আপনি খিটমিটে মুখ নিয়ে একা বসে থাকবেন। তা কী করে হয়।

- উফ, কথাবার্তায় গা জ্বলে যায়।

- খুব মনখারাপ পল্টুবাবু?

- বিরক্তি। আর বিরক্তিটা টোটালি আপনার ওপর কনসেন্ট্রেটেড।

- আচ্ছা, বেশ। বিরক্তি কাটানোর একটা শিওরশট উপায় আমার জানা আছে। চলুন, এক বোতল হুইস্কি কিনে বাড়ি ফেরা যাক। দু'পাত্তর পেটে পড়লেই দেখবেন বিরক্তি হাওয়া।

- আপনি মদ খান?

- সন্দেশ ব্যাপারটাই ফার্স্ট প্রেফারেন্স যদিও।

- গোলকবাবু। আধঘণ্টা বসি না।

- বসুন না, তাড়া কিন্তু সত্যিই নেই। মদনমোহনের অফারটা কিন্তু জেনুইন ছিল।

- কী'ভাবে জানলেন আমি পুরীতে?

- গতবার কী'ভাবে জেনেছিলাম আপনি দেওঘরে? তার আগেরবার শ্রীরামপুরে? নেটওয়ার্কের গুণে পল্টুবাবু।

- দারোগা হিসেবে আপনার এলেম আছে। কী জানেন, আরও দিন দুয়েক থাকার বড় ইচ্ছে ছিল। পুরী জায়গাটা সত্যিই বড় চার্মিং।

- বেশ তো, পরেরবার ওই দেওঘরটেওঘর না গিয়ে এ'খানেই আসবেন।

- আর অমনি আপনি টপ করে এসে আমায় অ্যারেস্ট করে নিন আর কী।

- এ'বারে দাঁওটা বেশ বড়ই হাঁকিয়েছেন। এক্কেবারে ব্যাঙ্কের লকার!

- দেখুন, এ বয়সে তো আর টাকার লোভে লাইনে নামি না। তবে একটু এক্সারসাইজের মধ্যে না থাকলে ফিটনেস কমে যাবে। যাক গে। পুরী এসে ভেবেছিলাম দিন চারেক গা-ঢাকা দিয়ে, এই সমুদ্র উপভোগ করা যাবে। গোলকদারোগা যে' এ'ভাবে সব মাটি করে দেবে তা ভাবতে পারিনি।

- সরি। কী করি বলুন, আপনার আর্টের প্রতি একটা আলগা রেস্পেক্ট আমার আছে বটে। তবে পুলিশ হয়ে জীবন কেটে গেল তো, অভ্যাস কাটানো সম্ভব নয়।

- বেশ। আর কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। চলুন। তা ট্রেনে ফেরত নিয়ে যাবেন না ভ্যানে পুরে?

- পল্টুবাবু।

- ট্রেন না ভ্যান?

- সে'টা এখনও ঠিক করিনি। ভাবছি তাড়াহুড়ো করব না।

- মতিগতি ভালো বুঝছি না আপনার। চোরছ্যাঁচড় মানুষকে আশা করি এনকাউন্টারে উড়িয়ে দেবেন না। অবশ্য আপনার যেমন আলাভোলা মাস্টারমশাই টাইপ পার্সোনালিটি, ও'সব আপনার ধর্মে সইবে না।

- পল্টুবাবু। ইয়ে, একটা অপ্রাসঙ্গিক কথা। একটা বিশ্রী অসুখের পাল্লায় পড়া গেছে।

- কত বিশ্রী?

- কী রোগ জিজ্ঞেস করবেন না?

- আমি তো আপনার শ্যালক নই। ইয়ারদোস্তও নই।

- তা বটে।

- কত বিশ্রী? গোলকবাবু?

- কপাল ভালো হলে মাস দশেক। কপাল মন্দ হলে...।

- এই সেরেছে। এর মধ্যে আপনি চোর ধরতে বেরোলেন?

- হেহ্‌। ওই যে। আপনি আমার শালা নন, বন্ধুও নন। অথচ আমাদের পরিচয় কদ্দিনের। আমার আশা, আপনি অন্তত হা-হা করে উঠবেন না। সে ভরসাতেই আপনাকে খুঁজে বের করা। কদ্দিন এমন কাউকে পাইনা যে আমার সিচুয়েশনটা পাত্তা না দিয়ে আমার সঙ্গে গল্প করতে পারে। সে'টাই অবশ্য তাঁদের ভালোবাসা। কিন্তু কী জানেন পল্টুবাবু...।

- ভালোবাসা-টালোবাসা তো অনেক হল। এ সময়ে তার চেয়েও বেশি দরকার হল মদনমোহন, শিঙাড়া আর মাছভাজা ভাগ করে নেওয়ার পার্টনার। তাই তো?

- হে হে হে। তবে ইয়ে, অ্যারেস্টটা কিন্তু করতেই হবে। প্রফেশনাল কমিটমেন্ট বলে কথা। তবে অ্যারেস্টের ব্যাপারটা কাল দুপুর নাগাদ সারলেও হবে।

- বেশ। সে হবে'খন। দেখুন, আপনি কিন্তু ভাববেন না যে আমার বিরক্তি কমে গেছে। নেহাত পড়ে পাওয়া পুরীতে একটা এক্সট্রা বেলাকে সম্পূর্ণ উপভোগ করতে চাইছি।

- এই তো বাঘের বাচ্চার মত কথা পল্টুবাবু।

- কাল দুপুরে হাতকড়া পরাবেন। বেশ। ঠিক হ্যায়। মানে বড়জোর ওই আঠেরো ঘণ্টা মত সময় আছে। চালিয়ে খেলতে হবে দেখছি। তা, চট করে আপনার ওই মদনমোহনওলা কে ডাকুন দেখি। তারপর আপনাকে একটা সুঁড়িখানায় নিয়ে যাই।

- মদ খেয়ে আউট হব পল্টুবাবু?

- এ সুঁড়িখানার নাম কাকাতুয়া মিষ্টান্ন ভাণ্ডার। দু'পাত্তর রাবড়ি, নীট। দেখবেন হাইক্লাস ঝিমঝিম কাকে বলে।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

ব্লগ-বাজ

আর চিন্তা নেই । বাঙালিকে আর রোখা যাবে না । আর সামান্য (সম্ভবত কিঞ্চিত গোলমেলে ) কবিতা ছাপাবার জন্যে সম্পাদক কে তোল্লাই দিতে হবে না । আর প্রেমে লটরপটর হয়ে ডায়েরি লিখে প্রাণপাত করতে হবে না। পলিটিক্স কে পাবলিক-জন্ডিস বলে গাল দেওয়ার জন্য আর “প্রিয় সম্পাদক” বলে আনন্দবাজারের ঠ্যাং ধরতে হবে না। কেন ?  হোয়াই? বাঙালি ব্লগিং শিখে গ্যাছে যে। ঘ্যাচাং ঘ্যাচাং করে শাণিত তলোয়ারের মত “ পোস্ট”-সমূহ জনতার ইন্টেলেক্ট এসপার-ওসপার করে দেবে ; হাতে-গরম গায়ে-কাঁটা। বাঙালি মননের নব্য জিস্পট ; ব্লগ-স্পট । কে বলে যে বাঙালি ব্রিগেডে বুক্তুনি দিয়ে আর ফুটবল মাঠে খেউড় করে খতম হয়ে গ্যাছে ? কে বলে যে বাঙালির ঘিলু কফি হাউসে ভাত ঘুমে মগ্ন ? বাঙালিকে একবার ব্লগখোর হতে দিন , সমস্ত অভিযোগ ভ্যানিশ হয়ে যাবে । পোপ থেকে পরশুরাম ; ডেঙ্গু থেকে মশাগ্রাম ; বং-ব্লগের দাপট রইবে সর্বত্র । বাঙালির সমস্ত আশা-ভরসা-জিজ্ঞাসা এইবারে ব্লগ মারফত্‍ পৌছে যাবে ট্যাংরা ট্যু টেক্সাস । তোপসে মাছের স্প্যানিশ ঝোলের রেসিপি কী ? বাঙাল-ঘটি মিল মহব্বত-হয়ে গেলে কি বাঙ্গালিয়ানা চটকে যাবে ? নেতাজী কি এখ

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু