Skip to main content

পোলাপানের মাইনেপত্তর



প্রথম মাইনে নিয়ে ছেলেবেলা থেকেই আকাশকুসুম কত কী ভেবেছি৷ এই করব, সেই করব৷ মা-বাবাকে দারুণ কিছু একটা কিনে দিয়ে তাক লাগিয়ে দেব৷ প্রেমিকাকে এমন একটা ইস্পেশ্যাল উপহার দেব যে সে মনেমনে বলে ফেলবে "এইত্তো আমার উত্তমকুমার"৷ নিজের জন্য এমন কিছু একটা নেব যে'টা চিরকাল থেকে যাবে। বুড়ো বয়সে বসে সে'টার দিকে তাকিয়ে বুকের মধ্যে তোলপাড় হবে; 'ফার্স্ট ইনকামের' আউটকাম বলে কথা৷ এ'বাদে একটু ভালোমন্দ খাওয়াদাওয়া, একটু নবাবী৷ এই আর কী৷

নবাবীটুকু মুলতুবি থাকলেও, প্রথম মাইনে দিয়ে সে'সব জরুরী ইচ্ছেগুলোর বাকেট লিস্টে বেশ কয়েকটা দাগ দেওয়া গেছিল। আসলে ওই বয়সের শখেরপ্রাণগড়েরমাঠ টেম্পারামেন্টটা যে কী দামী৷ তারপর যা হয় আর কী৷ ক্রমশ ওই, খামচাখামচির শুরু৷ জুড়ে যায় মিউচুয়ালফান্ডসহিহ্যায় গোছের অঙ্ক৷ আর বয়সের অলংকার হিসেবে আসে নিউ-জেনের প্রতি "আরে, এরা আর কী জানে" গোছের হিংসে-চাপা দেওয়া উষ্মা।

তা এ অভিযোগটা একদম ভিত্তিহীন নয়৷ আমাদের কোম্পানির মধ্যপ্রদেশ অফিসের এই কিছু ছেলেছোকরাদের কথাই ধরা যাক৷ সদ্য কলেজ পেরনো দলবল; ক'দিন আগে এরা প্রথম স্যালারি পেলো৷ তা ফুর্তি কর, আমাজনের সেলে মোবাইল কেন, প্রেমিকাকে কানের দুল কিনে দে। তা না। পুরো মাইনেটাই জাস্ট উড়িয়ে দিল সরকারি স্কুলের ছেলেমেয়েদের বইখাতা কিনে দিয়ে৷

(সুনীল। হর্ষ। সৌরভ। রণজয়। রাহুল৷ আশুতোষ। অভিষেক-১। অভিষেক-২। দীপেন্দ্র। অঙ্কিত৷ আমি ওদের সহকর্মী ভেবে যে কী ভীষণ গর্ব হচ্ছে৷ নতুন ছেলেমেয়েরা এ'ভাবেই আমাদের পালটে দেবে। আর ইয়ে, আমার একটা দুশ্চিন্তাও আছে। এরা বোধহয় আমাদের শুধু দূরে দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে ফস্কে যেতে দেবে না।)

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু