Skip to main content

মুদীখানার অ্যাপয়েন্টমেন্ট



( পুরনো গল্পের পরের কিস্তি) 

-  কী ব্যাপার? কী চাই ? তখন থেকে দাঁড়িয়ে আছেন অথচ কী চাই কিছু বলছেন না। দোকানের ভ্যিউ ব্লক করে কাস্টোমার টার্নওভার কমিয়ে দিন, আর কী!

- ইয়ে, চৌধুরীবাবুর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম।

- অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে?

- অ্যাপয়েন্টমেন্ট? মুদীখানার দোকানে অ্যাপয়েন্টমেন্ট?

- কী বিশ্রী ক্লাসিস্ট মেন্টালিটি আপনার ভাবুন। উইলিয়ামসন, হজেস অ্যান্ড কোম্পানিতে ঢুকে একজন ক্লার্কের দর্শনের আশায় দশটা টেবিল ঘুরে ঘুরে তদ্বির করা বাঙালি, সে মুদীর দোকানে এসে বাঘের বাচ্চা।

- আহ, এ'সব কড়া কড়া কথার কী দরকার ভাইটি।

- ভাই? ভাইটি? বাহ বাহ্‌! মুদীর দোকানের কাউন্টারের অন্যদিকে দাঁড়িয়ে গেঞ্জি আর লুঙ্গি পরে আড়াইশো মুগডাল ওজন করছি বলে আমি আপনার ভাইটি? আর রাস্তায় আপনার মোটরবাইক দাঁড় করানো কনস্টেবলকে ইয়েস স্যার, রাইট স্যার, নো স্যার? আপনি জানেন আমার পলিটিকাল সায়েন্সে অনার্স আছে?

- বয়সে তো তুমি ছোটই, তাই ভাই বলে ফেলেছিলাম আর কী। 

- থামুন মশাই। পাড়ার h  বয়সে আপনার থেকে বছর পাঁচেক ছোট হলে তাকে ভাইটু বলে হাত নাড়তেন? করলে বুঝতেন কত ধানে কত চাল।

- সরি স্যার। ইয়ে, আপনি কি দোকানে নতুন?

- ইন্টার্নশিপ করছি। কাকার দোকানে শেখার স্কোপ প্রচুর। হাতেকলমে শিখছি। কাস্টোমার এক্সপিরিয়েন্স কী'ভাবে এনহ্যান্স করতে হয় সে'টাও তো জানা দরকার তো। আফটার অল, পলিটিকাল সাইন্সও একধরণের কাস্টোমার ম্যানেজমেন্ট। 

- তাই তো। এ'ব্যাপারটা তো একদমই ভেবে দেখিনি। 

- ভাবুন, ভাবা প্র্যাকটিস করুন। আর চাল, ডাল, স্নো, পাউডার কিছু কেনার না থাকলে মানে মানে সরে পড়ুন। টার্নওভারে জল ঢালবেন না।

- শুনুন না ভাই, থুড়ি স্যার। চৌধুরীবাবুর সঙ্গে দরকারটা খুব আর্জেন্ট।

- আমায় স্যার বলার দরকার নেই। আমি এ'সব ক্লাস পলিটিক্সের ঊর্ধ্বে। আমি ভাস্কর। ওই নামেই আমায় ডাকবেন। কাল থেকে একটা নেমপ্লেটের ব্যবস্থা করতে হবে দেখছি। ভাস্ক্যার চাউড্রি, হেড- কাস্টোমার ইন্টারফেস, মেসার্স বিজিএস। ব্র্যাকেটে ভজহরি জেনারেল স্টোর্স।

- শুনুন না ভাই ভাস্কর। আমার দরকারটা খুবই জরুরী।

- কী'রকম জরুরী শুনি। কোনও পাইকারি অর্ডার ছিল? নাকি আপনি সাপ্লায়ার?

- আমি? ওই সাপ্লায়ার ধরে নিন। আবার ফাইফরমাশও খাটি।

- ও, শুনুন। মাসের শুরুতে আসবেন। এ'সময় ক্যাশ বাড়ন্ত থাকে মশাই। অত ঘ্যানঘ্যান করবেন না। কাকা মাইরি নরম মানুষ, সে সুযোগে সাপ্লায়াররা ক্যাশফ্লো একদম বিগড়ে দিচ্ছে।

- প্লীজ ভাস্কর। চৌধুরীবাবু ওই পিছনের ঘরটার মেঝেতে তোষক পেতে ভাতঘুম দিচ্ছেন তো? জানি। কিন্তু ওঁকে গিয়ে একবার বলো বিনোদ এসেছে। উনি বুঝবেন।

- প্রথমত, ভাতঘুম নয়। ও'টাকে কর্পোরেটের বিদগ্ধ মানুষজন বলে পাওয়ার ন্যাপ। দ্বিতীয়ত , কাকা আমায় কোনও 'বিনোদ আসলে আমায় ডেকে দিস' গোছের মেমো দেয়নি। কাজেই, সরি। এ'বার আপনি আসুন।

- তুমি যদি ডায়রেক্টলি ডেকে দাও ভাই, তা'হলে আমি তোমার ক্যাশবাক্স থেকে কুড়ি মিনিট আগে তিনশো টাকা সরানোর গল্পটা চেপে যাব।

- কী? এ'টা কী ধরণের মিথ্যে অপবাদ! 

- তিনটে একশো টাকার নোট। একটা পাঁচশোও হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করেছিলে। কিন্তু সে'টা পকেটস্থ করার সাহস হয়নি। তুমি জানো চৌধুরীবাবু হিসেবে ক্ষুদিরাম। তিনশোটাকা মেকআপ তুমি দেবে আমি নিশ্চিত। কিন্তু সে'টা গোটা দুপুর কাস্টোমার ঠকিয়ে। কোথাও দু'দশটাকা বেশি, কোথাও দু'দশগ্রাম কম। কিন্তু সন্ধ্যের আগে তিনশো মেকআপ হবে না।

- এই শুনুন...।

- এ'টা সম্ভবত রোজকার স্ট্র্যাটেজি, তাই না? তোমার কাকাকে পাওয়ার ন্যাপে পাঠিয়েই টুক করে টু পাইস কোমরে গুঁজে ফেলা। সে অবশ্য পলিটিকাল সায়েন্সে সে'টা নেহাত আউট অফ সিলেবাস নয়। 

- কাকার উঠবার সময় হয়ে গেছে অবশ্য। আপনার কী নাম বললেন যেন?

- বিনোদ। 

- সারনেম?

- দত্ত।

- ডেকে দিচ্ছি। ইয়ে, চা খাবেন স্যার? এনে দেব?  ওই যে নির্মলের দোকান দেখছে, ওই উলটো দিকে। ফ্যান্টাসটিক মালাই চা বানায়। বেশি মিষ্টি নয়, ভেরি স্মুদ।

- নাহ্‌, এ অবেলায় চায়ের দরকার নেই।

** 

- বলো বিনোদ। 

- চ্যাটার্জীবাবুর কাজটা হয়ে গেছে। কাল রাতেই।

- সে তো বুঝলাম। তবে আমার দোকানে হুটহাট উদয় হওয়াটা কম করো। অন্তত ভাস্কর যদ্দিন গেঁড়ে বসে আছে। ছেলেটা একটু বেশি কিউরিয়াস।

- ইয়ে, চৌধুরীবাবু। খুব চালাকচতুর ভাইপোটি আপনার। ইম্প্রেসিভ।

-  হুম। যাকগে। চাটুজ্জের ব্যবস্থা হল বটে। কিন্তু মূল গলদটাকে এখনও ম্যানেজ করা হয়নি।

- গলদ?

- আমাদের মালগুলো ধরা পড়েছে চ্যাটার্জীর কেয়ারলেসনেসে। কিন্তু ট্র্যাক করেছে আর পাকড়াও করেছে অন্য কেউ। বড্ড বেশি ছোঁকছোঁক শুরু করেছে সে।

- ইন্সপেক্টর ভট্ট?

- সে তো স্রেফ যন্ত্র। আদত যন্ত্রী অন্য কেউ।

- হুঁ?

- হাবিলদার হারাধন হালদার। খবর নাও। ভট্টর যত বাড়, তার সবটাই হারাধনের এক্সপিরিয়েন্স আর ফোঁপরদালালিকে ক্যাপিটাল করে।

- ইয়ে,চৌধুরীবাবু, ইন্সপেক্টর ছেড়ে হাবিলদারে ফোকাস করব?

- ভাস্কর খুব একটা ভুল বলেনি। তুমি নিতান্তই ক্লাসিস্ট।

- হুম। ঠিক আছে। হারাধনকে বাজিয়ে দেখা যাক। আর ইয়ে, ক্লাসিস্ট প্রসঙ্গে মনে পড়ল, আপনি নিয়মিত ক্যাশবাক্স মিলিয়েটিলিয়ে দেখছেন তো? কখন কী'ভাবে খান-তিনেক একশো টাকার নোট সটকে পড়ে, কে বলতে পারে বলুন।  

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু