Skip to main content

কমলবাবুর ভূত



মরে গিয়ে বেঁচে গেছে কমল দত্ত৷ জীবনের অ্যাটিচিউডটাই পালটে গেছে।

কী হলো, এ'তে নাক সিঁটকানোর কী আছে; মরলে কি আর জীবন থাকতে নেই? আজ জ্যান্ত বলে টের পাচ্ছেন না, একদিন ঠিক বুঝবেন; জীবন অত ঠুনকো নয়।

যাকগে। কমল দত্ত প্রসঙ্গে আসি৷ মাস তিনেক আগে সামান্য একটা বিষম খেয়ে অক্কা পেয়েছিলেন বাহান্ন বছরের ভদ্রলোক। গিন্নীর সঙ্গে রোজকার সকালের ঝগড়াঝাটি সেরে, ছেলের সঙ্গে নিয়মমাফিক খানিকক্ষণ খিটখিট করে বাজার করতে বেরিয়েছিলেন৷ নিমাইয়ের পানের দোকানে দাঁড়িয়ে 'একটা ফ্লেক দে দেখি' বলা মাত্রই টুক করে সেই বিষম; অমনি কমল দত্ত সটান রাস্তায়। ওই শেষ৷ 

অমন টাস করে মরে গিয়ে সামান্য মনকষ্টে ছিলেন বটে কমলবাবু৷ আরে মরার একটা তোড়জোড় চলবে তো; কোনও পেল্লায় অসুখ, নিদেনপক্ষে একটা মিনিবাসের ধাক্কা; কোনও একটা ধামাকা-টামাকা। তা নয়, একটা মিউমিউ মার্কা বিষম৷ ধ্যাত্তেরিছাইছাতারমাথা। 

কিন্তু সেই তিতিবিরক্তি ভাবটা দিনকয়েকের মধ্যেই কেটে গেল৷ ক'দিন কলকাতার ওপর দিয়ে ভেসেটেসে বেরিয়ে টের পেলেন যে শরীরটা বেশ ঝরঝরেই আছে৷ ওই দ্যাখো, ফের নাক সিঁটকানো। আরে জ্যান্ত মানুষের লম্ফঝম্পটুকুই শারীরিক ইয়ে হল? কমলবাবু যে হাওড়া ব্রিজের ডগায় পতাকার মত নিজেকে টাঙিয়ে রেখে পতপত করে সন্ধে কাটান, সে হাইক্লাস শরীর কে অ-মড়ার চোখ দেখতে পারছে না বলে তার মূল্য নেই? আছে৷ আলবাত আছে।

মোটমাট পিকনিকের মেজাজে দিন কাটছিল কমলবাবু৷ ভোরের দিকে ঘণ্টাখানেক ভিক্টোরিয়ার সিলিংয়ের গন্ধ শোঁকা, বেলার দিকে মিনিবাসের ভিড়ে পকেটমার খুঁজে খুঁজে কাতুকুতু দেওয়া (বাজে প্রশ্ন করবেন না, ভূতেরা কাতুকুতু দিতে পারে৷ নিজে মরে গিয়ে থাকলে এমন বাতিকগ্রস্ত প্রশ্নগুলোকে আস্কারা দিতেন না), দুপুরবেলা কলেজস্কোয়্যারের জলে ডলফিনের মত দোল-দোল-দুলুনি খেলা, বিকেলের দিকে চট করে একটু পুরীর সমুদ্রের হাওয়া গায়ে লাগিয়ে আসা (আছে। ভূতের গাও আছে, গা ম্যাজম্যাজও আছে) আর রাতটা ওই হাওড়া ব্রিজের পতাকা হয়ে কাটানো। ভালো না থেকে কি উপায় আছে? 

আর মেজাজ সবসময় শরিফ। আর পাঁচটা ভূত মুখোমুখি হলেই কমল দত্ত সাহেবি কায়দায় তাদের "হেল্লো" বলছেন। সঙ্গত না পেলে কারণে অকারণে নিজের সঙ্গে নিজে মাইডিয়ার গল্প জুড়ছেন৷ গত মঙ্গলবার তো নিজেকে এমন একটা চুটকি শোনালেন যে বিস্যুদ পর্যন্ত হাসি থামেনি ভদ্রলোকের। চুটকিটা পুরনো, কিন্তু এমন বিউটিফুল স্টাইলে ব্যাপারটাকে সাজিয়ে দিয়েছিলেন, যে কমলবাবু নিজেই অবাক৷ কতবার ভাবলেন, "আহ্, বেঁচে থাকতে যদি অফিসের জমায়েতে এমন দু'চার পিস ছাড়তে পারতাম"। অবশ্য সে'টা ঠিক আফশোস নয়৷ কমল দত্ত জানে যে গুণীমানুষ সৃষ্টি করবেন নিজের তৃপ্তির জন্য, অন্যের বাহবা কুড়োতে ছুটবে পাতি পাবলিক। 

মোট কথা; এই মারাত্মক কনফিডেন্স ব্যাপারটা বেঁচে থাকতে টের পাননি কমলবাবু৷ কিন্তু এখন? এখন তাঁকে পায় কে৷ মরার আগের দিন পর্যন্ত গিন্নীকে গল্প করতে ডাকতেও কিঞ্চিৎ নার্ভাসনেস বোধ করতেন৷ অথচ আজ তাঁর বড় ইচ্ছে রবীন্দ্রনাথ বা সুভাষবাবুর আত্মাকে পাকড়াও করে একটু আড্ডা দেওয়ার৷ কাজেই মরে গিয়ে তার আনন্দের সীমা নেই৷ 

সেই আনন্দের স্রোতে গা ভাসিয়ে এক বৃষ্টির বিকেলে গঙ্গার ওপর উড়ে বেড়াচ্ছিলেন৷ এমন সময় ধাক্কা৷ কনফিডেন্সের জন্য ধাক্কা ব্যাপারটা মোটে ভালো নয়৷ কমলবাবুর ধারণা ছিল ধাক্কা ব্যাপারটা ভূতেদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়৷ কনফিডেন্সটা আরও কয়েক ইঞ্চি নেমে গেল যখন কমলবাবু বুঝলেন যে ধাক্কাটা লেগেছে আর এক ভূতের সঙ্গে৷ কিন্তু মারাত্মক ব্যাপারটা অন্য জায়গায়; এই নতুন ভূতটাও কমলবাবুই৷ 

রবীন্দ্রনাথকে দেখতে পেলে অসুবিধে ছিল না৷ কিন্তু নিজেকেই দেখতে পেয়ে কমল দত্তর গলা-বুক শুকিয়ে গেল (শুনুন, ভূতের গলা নেই, বুক নেই বলে ঘাবড়ে গেলে গলা-বুক শুকোবে না; এমন একগুঁয়ে বস্তাপচা ওপিনিওন আঁকড়ে বসে থাকবে না প্লিজ)। 

- এ কী! এ কী! আমার যমজ ভাইটাই ছিল নাকি?

- এক পিসই তো কমল দত্ত ভাই৷ নো যমজ বিসনেস৷ 

- তা'হলে?

- তা'হলে কী?

- আমি না হয় কমল দত্ত ভূত৷ কিন্তু আপনি স্যার?

- মানুষ একটা বলে ভূতও একটা হবে নাকি?

- হবে না?

- মোটেই না৷ কমল দত্তের অজস্র ভূত মার্কেটে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে৷ এই যেমন আমি নিজেই হলাম গিয়ে বাইশ নম্বর ভূত।

- ব্যাপারটা বড্ড সাসপিশাস ঠেকছে। 

- এ'পাড়ায় নতুন তো, তাই অবিশ্বাস আর বাতিক এখনও ঝেড়ে ফেলতে পারেননি৷ ক'দিন যাক, একটু সেঁকা হয়ে গেলেই এই ব্যাপারগুলো নিয়ে আর কনফিউশন থাকবে না৷ 

- ইয়ে, তা'হলে একটা কমল দত্ত মরে কতগুলো ভূত তৈরি হল?

- আরে এ কি সোনার গয়না নাকি যে একটা বালা গলিয়ে গণ্ডাখানেক দুল গড়াবেন৷ ভূত তৈরি হওয়ার জন্য কমল দত্তকে অক্কা পেতে হবে কেন?

- বাহ্, বিষম খেয়ে মারা যাওয়ার পরেই তো আমার ভূত হওয়া৷

- কত শখ মাইরি৷ সামান্য গ্যাস-অম্বল। নেকু একটা বিষম৷ তা'তে নাকি একটা একটা গোটা মানুষ পটল তুলবে৷ আরে মামারবাড়ির মোয়া নাকি৷ ও বুকে-পিঠে গ্যাসের ধাক্কায় একটু মাথা ঘুরে গেছিল আর চোখে অন্ধকার৷ তা'তেই মাঝরাস্তায় ধপাস৷ মুখে জল দিতেই যে কমল দত্ত সে কমল দত্ত৷ 

- আমার কেমন মাথাটা ঝিমঝিম করছে।

- তা ভূত বলে তো কেউ মাথার দিব্যি দেয়নি যে মাথা ঝিমঝিম করবে না৷ করছে করুক৷ 

- কমল দত্ত বেঁচে আছে? তা'হলে আমি আপনি এলাম কোথা থেকে? এ কী বিশ্রী ব্যাপার।

- ভাইটি৷ হৃৎপিণ্ডের থেমে যাওয়াটাই কি একমাত্র মৃত্যু?  

- নয়? আরও ভ্যারাইটি আছে?

- প্রতিট মানুষ যে বেঁচে থাকতে থাকতেই কতবার মারা যাচ্ছে৷ এই যেমন আমি। গ্যাস্ট্রিকের প্রবল জ্বালায় যে'দিন থেকে কমল দত্তকে তেল-ঝাল-মশলা-শিঙাড়া-তেলেভাজা ছাড়তে হল; কমল দত্তের ভিতরের কবি মানুষটা জাস্ট মরে গেল৷ ডেড, ডিমলিশড৷ খতম৷ ব্যাস, ওই ট্র‍্যাজেডি থেকেই আমার যাত্রা শুরু। 

- জাস্ট ভেবড়ে যাচ্ছি। 

- বডি শ্মশানে যাচ্ছেনা বলে কি সে মৃত্যুগুলো এলেবেলে ভাই? ইন্সুরেন্স ক্লেম করা যাচ্ছে না বলে কি সে' মড়ার দাম নেই? আছে। দাম আছে৷ আর মৃত্যু থাকলেই ভূত৷ এই যেমন আমি। কমল দত্তের গ্যাস্ট্রিককে কাঁচকলা দেখিয়ে গোটা সকালটা কাটাই ওই স্টেশন বাজারের দত্ত সুইটসের কচুরিভাজার কড়াইয়ে বাটারফ্লাই স্ট্রোক দিয়ে৷ বেলার দিকে জগিং, জগার রোলের চাটুর ওপর৷ দুপুরের প্রাণায়ামটা সারি চ্যাটার্জিদের রাঁধুনি রমাকান্তর রান্না করা কোনও আইটেমের মধ্যে সেঁধিয়ে। লোকটা যা তেলমশলা দিয়ে রাঁধে; চ্যাটুজ্জ্যেদের বংশ নির্বংশ হতে আর বেশি দেরী নেই৷ সন্ধ্যের দিকে আবার গণশার তেলেভাজার দোকানে..।

- থাক থাক৷  বুঝেছি। কিন্তু যে'টা বুঝছি না সে'টা হল কোন কমল দত্তের গোপন লাশের ওপর আমি তৈরি হলাম।  

- সব জানবে ভাই৷ ক'দিন আর হল৷ 

***

হাসি মুখে বাজারের থলেটা গিন্নীর হাতে দিয়ে ছেলের ঘরের দিকে এগিয়ে গেলেন কমল দত্ত। 

"সমু, কাল রাতের খেলাটায় কে জিতল রে"? দরজায় উঁকি দিয়ে মিহি গলায় প্রশ্ন করেন কমলবাবু। সমু একটা ইংরেজি নভেলে মগ্ন, একরাশ বিরক্তি নিয়ে বলে; " ক্রোয়েশিয়া"। 

"তোর আজ কলেজ নেই"?
এ'বার আর উত্তর এলো না।

" সমু, আজ ফ্যান্টাস্টিক পাবদা এনেছি রে"। 
সমু এ'বার একটু দাঁত খিঁচিয়ে ওঠে; "সকাল সকাল বাজে না বকলেই নয়? খাওগে যাও পাবদা"।

"সরি সরি। সত্যিই, মন দিয়ে কিছু পড়ার সময় কানের কাছে কেউ ভ্যানরভ্যানর করলে কী বিচ্ছিরি যে লাগে৷ তুই পড়৷ আমি বরং রেডি হই"।

বারান্দায় দাঁড়িয়ে মিনতি সবই শোনে৷ আচমকা মানুষটার জন্য একটু কষ্ট হয়৷ মাসখানেক ধরে কী যেন হয়েছে ওর। কী ভীষণ জমজমাট তর্কবাগীশ এক মানুষ ছিল, নানারকম শখ আহ্লাদে ভরপুর। সংসারের ঠেলা সামলাতে শশব্যস্ত মিনতির প্রায়ই বিরক্ত লাগত বড়৷ এত বছর সংসার করার পরে কমলের এই শখের প্রাণ মার্কা স্বাভাবটাকে প্রায়ই অসহ্য লাগত মালতির৷ সবসময় সে নিজের খেয়ালে ব্যতিব্যস্ত। ইন্স্যুরেন্সের প্রিমিয়াম বাকি রয়েছে অথচ বাবু পাড়ার ছেলেদের পিকনিক করাতে নিয়ে যেতে চান নিজের গ্যাঁটের পয়সা খরচ করে৷ মালতি বলছে মেজপিসির মেয়ের বিয়েতে না গেলেই নয়, কমল বলছে 'ধুর, চলো দীঘা যাই'। সমুর সঙ্গেও হাজার রকমের তর্ক লেগেই থাকত। আবার ভুল করলেও তর্কে ঘাটতি নেই৷ ইদানিং ঝগড়াটা বড্ড বেড়ে গেছিল।

কিন্তু গত মাস তিনেকে এক ঝটকায় যেন সব পালটে গেল৷ কোনও কথায় আর না নেই কমলের। যে কোনও ব্যাপারে মানিয়ে নিচ্ছে৷ সবসময় শান্ত, মুখে স্মিত হাসি। হুজুগের আর বালাই নেই। মিনতির অবাক লাগে৷ কখনও মনে হয় যাক, এদ্দিনে লোকটা সংসারী হল৷  আবার মাঝেমধ্যেই মনকেমনও হয়৷ কোথায় গেল চেনা মানুষটা? কোথায় সেই চেনা হুজুগে কমল দত্ত?

মালতির বুকের ভিতরটা কেমন যেন মুচড়ে ওঠে।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু