Skip to main content

শান্তনু চৌধুরী হালহকিকত



- চাউড্রি, ওয়েল ডান।
- থ্যাঙ্কিউ স্যর।
- এত ডিটেলড প্রেজেন্টেশন আমি খুবই কম দেখেছি। ডিরেক্টরস ওয়্যার ভেরি প্লীজড।
- যাক, খাটাখাটনি সার্থক।
- ইউ লুক একটু টায়ার্ড। কী ব্যাপার? রিল্যাক্স মাই বয়। আজ সন্ধেবেলা তোমায় এমন জ্যাপনিজ স্কচ খাওয়াব যে...।
- আসলে স্যর, ঠিক ভাল লাগছে না...।
- সে কী! আন্ডার দ্য ওয়েদার?
- ইয়ে মানে, শরীর ঠিকই আছে...আসলে...।
- ক্লান্তিটা অবশ্য ন্যাচরাল, স্ট্রেস তো কম গেল না। তবে এই উইকেন্ডটা একটু রিল্যাক্স করো, দেখবে এভ্রিথিং উইল বি ফাইন। ঈট ওয়েল। গো অন আ লং ড্রাইভ। আর লেটস সি...ইকিগাই বইটা পড়েছ? বড্ড সুদিং। লাইফের পার্স্পেক্টিভ এমন ভাবে পালটে দেবে...।
- হুম, দেখি।
- কিন্তু আজ সন্ধের গেট-টুগেদারটা ভুলো না। ডায়রেক্টরসরা থাকবে। ওদের সঙ্গে একটু গল্প আড্ডা না জুড়লে চলবে কেন?
- আসলে...। মনটা না কেমন যেন...।
- ইউ আর অ্যান অ্যাসেট চাউড্রি। রিল্যাক্স...। তোমার একটু ফুর্তি দরকার...।
- ফুর্তি দরকার...তাই না?
- ঠিক তাই। সন্ধেবেলার পার্টিটা ভুলো না। ওউক্কে?
- ওকে।

***

- হ্যালো! বলো।
- বলছিলাম কী সুমি...।
- তোমার প্রেজেন্টেশন কেমন গেল?
- এক্সেলেন্ট। এক্সেলেন্ট। সবাই খুব প্রশংসা করলে।
- ভেরি প্রাউড অফ ইউ। কংগ্রাচুলেশনস।
- আরে ধুস।
- প্রশংসাটা তুমি ডিজার্ভ করো মিস্টার চৌধুরী।
- ডিজার্ভ করি। তাই না?
- নিশ্চয়ই করো। এত খাটছো। ফল পেতেই হবে।
- তাই তো। ঠিক তাই।
- অত মিইয়ে কথা বলছ কেন?
- ইয়ে, মনটা না...কেমন কেমন করছে।
- সে কী! কারুর সঙ্গে ঝগড়াটগড়া হল নাকি?
- কই, না তো।
- তুমি বড্ড টায়ার্ড শান্তনু। ভালো করে দু'দিন রেস্ট নাও। ঘুমোও। চলো কোথাও ঘুরে আসি। ইউ উইল ফীল গুড।
- তোমার তাই মনে হচ্ছে?
- স্পষ্ট।
- হুম।
- আর শোনো, হাঁড়িমুখ করে বসে থেকো না প্লীজ। দিস ইজ আ বিগ মোমেন্ট, এঞ্জয় করো। অফিসে তোমার খুব প্রশংসা হচ্ছে নিশ্চয়ই...।
- তা হচ্ছে।
- মুহূর্তটা উপভোগ করো প্লীজ।
- উপভোগই করি বরং। তাই না?
- একদম!
- যাক।
***
- হ্যালো, বসন্ত?
- আর ভাই শান্তনু, কদ্দিন পর ফোন করলি! তুইই একটা পেল্লায় চাকরী করিস বটে! পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করারও টাইম নেই।
- হ্যাঁ রে, তোর অভিযোগটা ঠিক ফেলনা নয়য়। অনেকদিন কল করা হয় না...।
- তা হঠাৎ আজ কী মনে করে?
- কিছু মনে করে ঠিক নয়। এমনি । হঠাৎ কেমন ইচ্ছে হল...।
- আরে ভাই, পুরনো ইয়ারদোস্তদের ভুললে চলবে কেন?
- ভুলিনি রে। এই দ্যাখ না, আজ মনটা কেমন হ্যাঁচোড়প্যাঁচোড় করছিল, টুক করে কল করে ফেললাম।
- কী ব্যাপার ব্রাদার, মনের মধ্যে ইয়ে তো ভালো ব্যাপার নয়।
- ভাল নয়, তাই না?
- আদৌ নয়। তা, কনজুগ্যাল ইয়েটিয়ে নয় তো? গোপন প্রেম-ট্রেম?
- ধুস। সে'সব কিছু নয়।
- ওহ, বুঝেছি। বড় চাকরির বড় হ্যাপা। তা'তেই শান্তনুবাবু ঘায়েল।
- ঘায়েল, তাই না?
- এক্কেবারে। কনক্রিট ডায়াগোনিসিস। ইমিডিয়েট ট্রিটমেন্ট দরকার।
- ট্রিটমেন্ট?
- হবে। হবে। বসন্তদার আড্ডায় শনিবার চলে আয়। খেজুরে-আলাপ হবে, গান বাজনা হবে। দু'হাত তাসও হবে। দেখবি, মন এক্কেবারে ফ্রেশ।
- ফ্রেশ হয়েই যাবে, কী বলিস?
- গ্যারেন্টি। তাছাড়া তোকে অরূপদার দোকানের ফিশফ্রাই খাওয়াব। ও জিনিস একজোড়া খেলে দেখবি মন বাবাজি টগবগিয়ে ছুটছে।
- বাহ্‌, বাহ্‌।
- তা'হলে শনিবার দেখা হচ্ছে। দেখিস, ফের ফাঁকি দিসনা। আমি বসন্তদাকে বলে রাখব। এখন আসি ভাই। ছেলেকে জিওমেট্রি পড়াতে হবে। মারাত্মক ফাঁকিবাজ হয়েছে।
- আয়।
**
- ও মশাই। ও মশাই!
- হুঁ?
- বেঞ্চিতে আর কতক্ষণ ঘুমোবেন? দোকান বন্ধ করার সময় হয়ে গেল তো।
- ওহ। সরি। উঠছি।
- আরে এখনও বসতে পারেন মিনিট দশেক। ছেলেপিলেগুলো বাসন মাজা শেষ করুক। তারপর তো।
- তা, আমার কত টাকা হল?
- চার কাপ চা, ছ'টা বিস্কুট, একটা সিঙ্গল ডিমের মামলেট। নব্বুই টাকা।
- এই যে। ইয়ে, আপনার চায়ের কোয়ালিটি খুব ভালো।
- আপনি তো ওই বড় টাওয়ারের অফিসে কাজ করেন, তাই না? আপনাকে আগেও দেখেছি এক'দু'বার। আপনি তো নির্ঘাত চাইলেই দার্জিলিং চা টেবিলে আনিয়ে নিতে পারেন। আমার এই বারবার জ্বাল দেওয়া চা ভাল লেগেছে? মাইরি?
- মাইরি। এক্সেলেন্ট কোয়ালিটি। ঘন। দুধ-চিনিতে কিপটেমো নেই।
- আর এক কাপ খাবেন? সসপ্যানে আছে, ঠাণ্ডা না। টাটকা। এই সদ্য নিজের জন্য বানালাম।
- দেবেন? দিন।
- মিন্টু, এক গেলাস চা আগে এ'খানে দিয়ে যা। তারপর সসপ্যান ধুতে নিয়ে যাস।
- থ্যাঙ্ক ইউ। তা'হলে আরও দশ টাকা তো?
- এই কাপের দাম দিতে যাবেন না প্লীজ।
- ওহ, হে হে। ধন্যবাদ। তা, আপনার নামটা কী?
- আমি বিজয় সমাদ্দার।
- আমি শান্তনু চৌধুরী।
- কিছু মনে করবেন না, শান্তনুবাবু। আমি খেজুরে আলাপের লোক ঠিক নই। তবু, একটা প্রশ্ন করব?
- করবেন? করুন।
- আপনার কি মনখারাপ?
- আমার মনটা সত্যিই খারাপ, তাই না?
- ও মা, সে তো আপনি বলবেন।
- আজ দুপুর থেকেই জানেন, সত্যিই কেমন যেন...মনটা ম্যাদা মেরে আছে।
- কেন বলুন দেখি?
- কে জানে। ঠাহর করতে পারছি না। তবে মনটা ভার, জানেন।
- মন ভারের কোয়ালিটিটা কেমন বলবেন?
- মানে, কী বলি...যেন কেউ ঘাড়ের ওপর একটা বড় ওজন চাপিয়ে রেখেছে। বুকের মধ্যে থেকে হাওয়া শুষে নিয়েছে। মুখটা তিতকুটে। অত যত্ন করে মামলেটটা বানিয়ে দিলেন, সে'টাতেও স্বাদ পেলাম না।
- বড্ড মন খারাপ শান্তনুবাবু?
- বড্ড।
- কারণটা টের পাচ্ছেন?
- বাকিরা জানে বটে, আমার মনখারাপ কেন।
- আপনি জানেন?
- না। আমি কাঁচকলা কিছুই জানি না।
- আপনি আর একটু বসবেন এই বেঞ্চিতে?
- বাহ, আপনি দোকান গোটাবেন না?
- আজ না হয় ট্রেন না নিয়ে ট্যাক্সি ধরব। ভালো বিজনেস হয়েছে গোটা দিনে। কাজেই আর একটু রাত হলে ক্ষতি নেই।
- বাহ্‌, এই লাস্ট রাউন্ড চা'টা মারাত্মক ভালো হয়েছে তো!
- থ্যাঙ্কিউ। একটু এলাচ দিয়েছি ও'টায়।
- তা, এ'বার আমি বলি? মনখারাপের ব্যাপারটা?
- নিশ্চয়ই।
- হ্যাঁ, যা বলছিলাম...। মনখারাপের নেচারটা ভারি কিউরিয়াস বুঝলেন...।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু