Skip to main content

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে



- মিস্টার চ্যাটার্জী...।

- কে?

- আমার নাম বিনোদ।

- আমি তো আপনাকে ঠিক...।

- আমায় বস পাঠিয়েছেন।

- ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...।

- বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব।

- আসুন, ভিতরে আসুন।

- আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে।

- যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না?

- এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে।

- প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই।

- কী দরকার বলুন জামা পালটে।

- দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন।

- ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে।

- ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...।

- মিতুল আপনার...।

- ওয়াইফ। গতবছর একটা আচমকা অ্যাটাকে...। যাক গে। আসুন না।

***

- বাহ্‌, জামাটায় কিন্তু জেল্লা আছে মিস্টার চ্যাটার্জী।

- থ্যাঙ্কিউ। মিতুল বলেছিল পরলে নাকি আমার বয়স বছর পাঁচেক কমে যেতে বাধ্য। আমায় ইয়ং রাখার জন্য যে ও কতকিছু করত।

- মিসেসরা তো তাই চায়, হাসব্যান্ডরা যাতে চট করে ঢ্যাপস বুড়ো না হয়ে যায়।

- আপনার মিসেসও বুঝি...।

- হে হে...নয়ত কি আর এই লাল নীল চেক টিশার্ট আমি নিজে শখ করে কিনেছি নাকি মশাই।

- ভেরি নাইস ভেরি নাইস। আপনাকে খুব মানিয়েছে এই জামাটায়।

- থ্যাঙ্ক ইউ। ইয়ে, একটু পা চালিয়ে। রেলের মাঠের দক্ষিণের দিকটা ফাঁকা, নিরিবিলি। ও'খানেই কাজ সেরে নেব।

- ও হ্যাঁ। জায়গাটা সত্যিই বড় নিরিবিলি। রাতবিরেতে ধারেকাছে কেউ ঘেঁষে না। ইয়ে বিনোদবাবু, এই ব্যাপারটাকে কি না করলেই নয়?

- দেখুন, বসের হুকুম নড়চড় হওয়ার উপায় নেই।

- মানে, না হয় একটা সামান্য ভুল করে ফেলেছি। তার জন্য এত বড় একটা শাস্তি...।

- সামান্য? বসের তিনটে ট্রাক পুলিশে ধরেছে আপনার একটা ছোট্ট ভুলে। মিনিমাম চার কোটির লস। বসের রাইট হ্যান্ড ম্যান গুপ্ত পুলিশের হেফাজতে। ছোট্ট ভুল?

- ছোটো নয়, তাই না?

- সরি মিস্টার চ্যাটার্জী। রিয়েলি সরি। আপনি মানুষ খারাপ না। কিন্তু আমাদের কাজকর্মগুলো ঠিক ভালোমানুষি দিয়ে হয়না। এ'সব লাইনে আপনি এসেই ভুল করেছেন।

- আসলে, ক্রিয়েটিভ অ্যাকাউন্টিংয়ে আমার এলেম আছে। তাই ভাবলাম প্রতিভাটা ইউটিলাইজ করি। আমি কিন্তু টাকার জন্য এ লাইনে আসিনি জানেন। স্রেফ একটা অদম্য আগ্রহ...।

- আগ্রহের বসে মানুষ এভারেস্ট চড়তে চায়। বুড়ো বয়সে গান শেখার ক্লাসে ভর্তি হয়। আপনি ভিড়লেন স্মাগলারদের খাতা লেখার কাজে। মিস্টেক, মিস্টেক।

- আসলে মিতুল চলে যাওয়ার পর মাথাটা ঠিক...। বিনোদবাবু, কোনও উপায়ই কি নেই?

- কোনও উপায় নেই।

- তা, আপনার প্রসেসটা কী হবে?

- রিভলভার, পকেট ঢিপি হয়ে আছে দেখছেন না? সে'জন্যই তো এমন জায়গা দরকার যে'খানে নিশ্চিন্তে গুড়ুম করা যাবে। আড়াই সেকেন্ডের যন্ত্রণা। তারপর নিশ্চিন্দি।

- বুলেট? ইয়ে, সায়ানাইড টাইপ কিছু নেই? বুলেট ব্যাপারটা একটু ব্রুটাল।

- কিন্তু এফেক্টিভ। ঝামেলা কম। পয়জনটা ঠিক আমার এরিয়া নয়। ওতে বিস্তর পড়াশোনা করতে হয়।

- আই সি। যাক গে। আড়াই সেকেন্ডের হ্যাপা, তাই তো?

- আড়াই। দুইও হতে পারে। কিন্তু তিন হবে না। এ ব্যাপারে এক্সপিরিয়েন্স তো কম হল না।

- বিনোদবাবু, আমরা রেলের মাঠের দিকে যাচ্ছি তো?

- হ্যাঁ।

- আধ কিলোমিটার ঘুরে গেলে আশা করি কিছু মাইন্ড করবেন না? একবার রথতলার বাজার হয়ে গেলে ভালো হত।

- চালাকি করছেন না তো?

- মাইরি না। রথতলার বাজারে মিঠুনের ফুচকা খেতাম দু'রাউন্ড।

- ফুচকা?

- প্লীজ, না করবেন না। মিতুলের জন্যই ইচ্ছেটা। আসলে হপ্তায় মিনিমাম দু'দিন আমি আর মিতুল মিঠুনের কাছে ফুচকা খেতাম। আমি ম্যাক্সিমাম ঝাল, মিনিমাম টক। মিতুল মিনিমাম ঝাল, ম্যাক্সিমাম টক।

- ওহ, আমারও আবার বৌদির মত কেস। মিনিমাম ঝাল, ম্যাক্সিমাম টক।

- তা'হলে চলুন না বিনোদবাবু। মিঠুন বেশ রাত পর্যন্ত থাকে। চলুন না। লাস্ট উইশ।

- বাটিকের শার্ট আপনার শেষ ইচ্ছে ছিল।

- এ'টা সত্যিই ফাইনাল। প্লীজ।

- ফাইনাল কিন্তু! দু'রাউন্ড ফুচকা।

- মাইরি। প্লীজ। আর ইয়ে, আপনাকেও না খাইয়ে ছাড়ছি না কিন্তু।

***

- মিঠুনদা!

- খাবেন? আসুন তাড়াতাড়ি। এ'বার ঝাঁপি বন্ধ করব...।

- এইতো খেয়ে গেলাম আধঘণ্টা আগে।

- হুঁ?

- বাহ্‌, ওই যে, ওই বাটিক শার্ট পরা ভদ্রলোককে নিয়ে এলাম। দু'জনে তিরিশ তিরিশ ষাটটাকার ফুচকা খেলাম। আমি টক বেশি ঝাল কম, বাটিক ভদ্রলোক ঝাল বেশি টক কম।

- অ। তা কিছু ফেলে গেছেন?

- খানিকটা সে'রকমই।

- কী জিনিস?

- সামান্য অন্যমনস্ক থাকায় আমি আর সেই বাটিক-জামা-দাদা আমাদের ফাউ ফুচকা চাইতে ভুলে গেছিলাম। সে'টার জন্যই ফিরে এসেছি। তা বাটিকদাদাটি বিশেষ অসুবিধের কারণে আসতে পারলেন না। ওই দু'জনের ফাউটাই আপনি আমায় দিয়ে দিন প্লিজ।

- কী?

- দু'জনের ভাগের ফাউ ফুচকা, আমায় দিন। চটপট। হাত চালিয়ে। আমার আবার পৌনে এগারোটার লোকালটা ধরতে হবে।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

ব্লগ-বাজ

আর চিন্তা নেই । বাঙালিকে আর রোখা যাবে না । আর সামান্য (সম্ভবত কিঞ্চিত গোলমেলে ) কবিতা ছাপাবার জন্যে সম্পাদক কে তোল্লাই দিতে হবে না । আর প্রেমে লটরপটর হয়ে ডায়েরি লিখে প্রাণপাত করতে হবে না। পলিটিক্স কে পাবলিক-জন্ডিস বলে গাল দেওয়ার জন্য আর “প্রিয় সম্পাদক” বলে আনন্দবাজারের ঠ্যাং ধরতে হবে না। কেন ?  হোয়াই? বাঙালি ব্লগিং শিখে গ্যাছে যে। ঘ্যাচাং ঘ্যাচাং করে শাণিত তলোয়ারের মত “ পোস্ট”-সমূহ জনতার ইন্টেলেক্ট এসপার-ওসপার করে দেবে ; হাতে-গরম গায়ে-কাঁটা। বাঙালি মননের নব্য জিস্পট ; ব্লগ-স্পট । কে বলে যে বাঙালি ব্রিগেডে বুক্তুনি দিয়ে আর ফুটবল মাঠে খেউড় করে খতম হয়ে গ্যাছে ? কে বলে যে বাঙালির ঘিলু কফি হাউসে ভাত ঘুমে মগ্ন ? বাঙালিকে একবার ব্লগখোর হতে দিন , সমস্ত অভিযোগ ভ্যানিশ হয়ে যাবে । পোপ থেকে পরশুরাম ; ডেঙ্গু থেকে মশাগ্রাম ; বং-ব্লগের দাপট রইবে সর্বত্র । বাঙালির সমস্ত আশা-ভরসা-জিজ্ঞাসা এইবারে ব্লগ মারফত্‍ পৌছে যাবে ট্যাংরা ট্যু টেক্সাস । তোপসে মাছের স্প্যানিশ ঝোলের রেসিপি কী ? বাঙাল-ঘটি মিল মহব্বত-হয়ে গেলে কি বাঙ্গালিয়ানা চটকে যাবে ? নেতাজী কি এখ