Skip to main content

দলিল



- কী রে, কাল রাত থেকে কিছু খেয়েছিস?
- হুঁ?
- এই ঠোঙায় দু'স্লাইস বাটার টোস্ট আছে৷ খা।
- রাখ৷ খেয়ে নেব খানিক পরে।
- জ্যেঠু এখন কেমন আছেন অনি?
- কেমন আছে বলতে পারব না৷ তবে জেনারেল ওয়ার্ড থেকে আইসিইউ তে সরানো খুব দরকার।
- ডাক্তার কী বলছে?
- আর পাঁচটা সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার যা বলে। ভ্যাকেন্সি নেই, লিখে দিচ্ছি; প্রাইভেট নার্সিংহোমে নিয়ে যান।
- চেষ্টা করবি না?
- আমার অবস্থা তো জানিস মিনু।
- যদি আমি কিছু..।
- চেষ্টা করছি৷ একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে কালকের মধ্যে আশা করি৷ তারপর না হয়..।
- দেরী হয়ে যাবে না?
- তুই দুম করে চলে এলি..স্কুল ছুটি?
- স্কুল পালিয়ে এসেছি।
- দিদিমণিরাও স্কুল কাটে তা'হলে।
- অনি। টাকাটা আমি দিই না৷ কাল-পরশু সুরাহা হলে না হয়..।
- কই, দে দেখি মাখন-রুটির ঠোঙাটা। খিদেটা চাগাড় দিয়েছে।
- অনি, আমার থেকে টাকা নিতে না চাইলে তোর কাকার কাছে যা। প্লীজ, কথা বলে দেখ অন্তত।
- গতকাল রাত্রে ফোন করলাম কাকাকে, বাবাকে ভর্তি করতে হয়েছে বলে। তারপর থেকে একবারও খোঁজ নিলনা।
- দরকারটা তোর অনি। বাবা তোর।
- আমি একটা ইউসলেস।
- বেশ। এ'বার আগে খেয়ে নে।
**
- হ্যালো।
- মিনু, ব্যবস্থা হয়ে গেছে। বাবাকে প্রাইভেটে নিয়ে যাচ্ছি৷ মেডিপাওয়ার নার্সিংহোম৷ সে'টা জানাতেই ফোন করেছিলাম৷
- যাক৷ টাকার ব্যবস্থা হল কী'ভাবে?
- কাকাই দিল৷
- তবেই দ্যাখ, তুই খামোখা বদনাম করছিলিস৷
- হেহ্। তা ঠিক৷
- জ্যেঠু ভালো হয়ে যাবেন, দেখিস।
- দেখি।
- অনি, নিজের প্রতি অত অযত্ন কেন রে তোর? চেহারাটা কী হয়েছে দেখেছিস? খাওয়াদাওয়া বাদ দিয়ে ফ্যাফ্যা করে ঘুরলেই হবে?
- তুই ভাবিস না।
- আমি ভাবার কেউ নই অবশ্য৷ তবে..আমি মাঝেমধ্যে যাব৷ তোকে দেখতে।
- স্কুল ফাঁকি দিয়েছিস, সে'টা ঠিক আছে৷ সংসার ফাঁকি দিসনা যেন৷ তোর দায়িত্ব তো কম নয়।
- থাক৷ যাব না৷ তবে দরকারে খবর দিস৷
- দেব।
- অনি, সময়মত খাওয়াদাওয়াটা করিস। কেমন?
- করব। এখন রাখি?
- আয়।
**
- কাকা, এই দলিলটা দিতে এসেছিলাম৷ আর ওই কাগজগুলোতেও সই করে দিয়েছি। দেখে নাও৷
- দ্যাখ অনি, দাদার প্রতি একটা দায়িত্ব যে আমার আছে তা অস্বীকার করছিনা৷ তবে দুম করে অতগুলো টাকা কী'ভাবে জোগাড় করি বল..তা'ছাড়া মিতুল জয়েন্ট দেবে এ'বছর..এত আনসার্টেনটি..।
- ও তুমি বেশি ভেবোনা কাকা৷ বাবা যদি নাই থাকে তা'হলে এ বাড়ির প্রতি আমার টানই বা কী৷
- না মানে, তোকে ভিটেছাড়া করার ইনটেনশন আমার নেই৷ তোর যদ্দিন ইচ্ছে; থাক না৷ লীগাল ওনারশিপ পাল্টাছে মানে তো আর তোর মর্যাল রাইট চলে যাচ্ছে না৷ আফটার অল তুই বংশের ছেলে। তবে কী জানিস, দাদার যা সিচুয়েশন; খামোখা প্রাইভেটে নিয়ে গিয়ে অতগুলো টাকা ওয়েস্ট করলি। কোনও আশা আছে বলে তো মনে হয়না।
- আমি আসি কাকা। এখনই না বেরোলে নার্সিংহোম পৌঁছতে দেরী হয়ে যাবে৷
****
বাবার শোওয়ার ঘরের স্টিলের আলমারিটা খুলে নীল ফোলিওব্যাগটা বের করল অনি৷ এই ব্যাগের মধ্যেই বাবা দলিলটা রাখত৷
নীল রঙটা অনেকটাই ফ্যাকাসে হয়ে এসেছে৷ তবে দলিল রাখা ব্যাগটাই বাবার সবচেয়ে 'প্রাইজড পজেশন' ছিল৷ বাড়িটা গেল। আসবাবপত্রের প্রতিও আর বিশেষ মায়া নেই অনির৷ শুধু বাবার স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে এই ফোলিওব্যাগটা সঙ্গে রাখতে ইচ্ছে হল৷
দলিল ছাড়া ব্যাগটা বড়া ফাঁপা লাগছিল৷ কাজেই দিন সাতেক পুরনো কাগজের ঠোঙটা সযত্নে পকেট থেকে বের করে, দু'ভাঁজ করে সেই ব্যাগের মধ্যে পুরে নিল অনি৷ ওই ঠোঙায় এখনও মাখন-পাউরুটি আর মিনুর সুবাস লেগে আছে; জরুরী দলিল বইকি।

Comments

Unknown said…
খুব ভালো লেখা

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু