Skip to main content

জনসেবা



প্রিয় সুমি,

হাসপাতাল থেকে লিখছি। মন ভার৷ জিভ বিস্বাদ৷ গা-হাত-পা ব্যথা৷ যা হোক, নিজের দুঃখকে কোনওদিনই তেমন বড় করে দেখিনি, আজও দেখব না৷ মানুষের ভালো করতে চেয়ে এ বন্ধুর পথ আমি নিজেই বেছে নিয়েছি, সামান্য দু'একটা চোরকাঁটা বা সেফটিপিনের খোঁচায় দমে গেলে চলবে কেন?

যাক গে। যা বলতে কলম ধরলাম।আজকাল আর অসহায় মানুষদের কথা কেউ মন দিয়ে ভাবে না৷ কত সহায়সম্বলহীন মানুষ যে সহমর্মিতার অভাবে দুর্ভাগ্যের অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছে তার ইয়ত্তা নেই৷

এই আমার কথাই ধরো৷ সাধারণ মানুষের জন্য তো কম করলাম না এ'কবছরে৷ এ'পাড়ায় টিউবওয়েল চাই, ও'পাড়ায় ডিসপেনসারিতে ভালো ডাক্তার চাই, অমুক অঞ্চলে রাস্তার মেরামতি দরকার, তমুক অঞ্চলে তেলেভাজার দোকান বসানো দরকার৷ নেতা মানুষের কাজ কি কম সুমি? অথচ দেখ, এত কিছু করিয়ে দেওয়াটা কেউ দেখল না৷

এরা দেখে শুধু কে আমায় জোর করে সামান্য কমিশন গছিয়েছে, কে ভালোবেসে ক্ষীরকদমের বাক্সে পুরে তোমার জন্য চোদ্দ ভরির হার দিয়েছে৷ চারদিকে নেগেটিভ মাইন্ডসেট৷ ওরে বাবা টিউবওয়েল সাপ্লায়ার আমার বাড়ির চারতলার ঘরের মেঝে মোজায়েক করে দিয়েছে কি দেয়নি; তা জেনে পাবলিকের কী লাভ? আরে টিউবওয়েল তো জায়গা মত বসেছে, নাকি! ঠিক আছে, সাত মাসের মধ্যে বার পাঁচেক সে টিউবওয়েল খারাপ হয়েছে বটে, কিন্তু তার ফলে টিউবওয়েল রিপেয়ার করনেওলা কন্ট্র‍্যাক্টর যে বাড়তি ব্যবসা পেল, তা'তে তো আখেরে ইকনমিরই উপকার; তাই নয় কি? লোকে সে'সব অ্যাপ্রিশয়েট করবে না, গণ্ডমূর্খের দল যত৷ শুধু খুঁত ধরবে। টিউবওয়েল সাপ্লাইয়ের কন্ট্র‍্যাক্টর আর টিউবওয়েল রিপেয়ার করার কন্ট্র‍্যাক্টর, তারা ভালোবেসে আমায় ছোটখাটো সামান্য কী'সব বাড়ি, গাড়ি দিয়েছে; তা'তে লোকের গাত্রদাহের শেষ নেই৷ কী জেলাসি ভাবতে পারো? এ জন্যেই বাঙালির আজ এই দুর্দশা। 

একটু মনপ্রাণ দিয়ে জনতা-জনার্দনের সেবা করব, সে'উপায় আর রইল না৷ অকারণ অদরকারী ব্যাপারস্যাপার নিয়ে টানাটানা করে, আমার পিছনে খামোখা টিকটিকি লাগিয়ে এক বিচ্ছিরি ব্যাপার করল৷ আরে ঠিক আছে, জেরা করবি কর। সে ব্যাপারটায় একটা আলগা রোম্যান্স আছে বইকি। তা'বলে  স্যাট গ্রেপ্তার করার কী আছে? বাধ্য হয়ে বুকের ব্যথার রেফারেন্সটা দিতে হল৷

যাকগে, পার্টি ব্যাপারটা সামলে দেবে। আমায় নিয়ে তুমি ভেবোনা, ডাক্তার বলে গেছে আমার বুক চিনচিনটা সারাতে একমাত্র পথ্য হলো মাটনকষা আর বাসন্তী পোলাও৷ হাসপাতালে ক'দিন সে'সবই চলবে। সঙ্গে নেটফ্লিক্স।  জামিনের ব্যবস্থাটা হয়ে গেলেই  আবার ওই স্ট্যু আর ম্যানিফেস্টোতে ফিরে যাব'খন৷ আফটার অল ওয়েলথ ইজ হেলথ। 

তুমি সাবধানে থেকো। জনতার স্বার্থে, দেশের স্বার্থে; আমি শিগগিরই ফিরে আসছি৷ 

জয় হে। জয় হে। জয় হে।

ইতি,

সুমির আমি।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

ব্লগ-বাজ

আর চিন্তা নেই । বাঙালিকে আর রোখা যাবে না । আর সামান্য (সম্ভবত কিঞ্চিত গোলমেলে ) কবিতা ছাপাবার জন্যে সম্পাদক কে তোল্লাই দিতে হবে না । আর প্রেমে লটরপটর হয়ে ডায়েরি লিখে প্রাণপাত করতে হবে না। পলিটিক্স কে পাবলিক-জন্ডিস বলে গাল দেওয়ার জন্য আর “প্রিয় সম্পাদক” বলে আনন্দবাজারের ঠ্যাং ধরতে হবে না। কেন ?  হোয়াই? বাঙালি ব্লগিং শিখে গ্যাছে যে। ঘ্যাচাং ঘ্যাচাং করে শাণিত তলোয়ারের মত “ পোস্ট”-সমূহ জনতার ইন্টেলেক্ট এসপার-ওসপার করে দেবে ; হাতে-গরম গায়ে-কাঁটা। বাঙালি মননের নব্য জিস্পট ; ব্লগ-স্পট । কে বলে যে বাঙালি ব্রিগেডে বুক্তুনি দিয়ে আর ফুটবল মাঠে খেউড় করে খতম হয়ে গ্যাছে ? কে বলে যে বাঙালির ঘিলু কফি হাউসে ভাত ঘুমে মগ্ন ? বাঙালিকে একবার ব্লগখোর হতে দিন , সমস্ত অভিযোগ ভ্যানিশ হয়ে যাবে । পোপ থেকে পরশুরাম ; ডেঙ্গু থেকে মশাগ্রাম ; বং-ব্লগের দাপট রইবে সর্বত্র । বাঙালির সমস্ত আশা-ভরসা-জিজ্ঞাসা এইবারে ব্লগ মারফত্‍ পৌছে যাবে ট্যাংরা ট্যু টেক্সাস । তোপসে মাছের স্প্যানিশ ঝোলের রেসিপি কী ? বাঙাল-ঘটি মিল মহব্বত-হয়ে গেলে কি বাঙ্গালিয়ানা চটকে যাবে ? নেতাজী কি এখ

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু