Skip to main content

পার্লামেন্টারি



- দোলগোবিন্দবাবু!

- *ফুড়ুৎফুড় নাক ডাকার শব্দ*

- ও দোলগোবিন্দবাবু! এই যে! মিস্টার দোলগোবিন্দ গোলদার! 

- এই! কে! ডাকাত নাকি? এই পুলিশ ডাক! এই কেউ আমার ফলস দাতটা নিয়ে আয়। এই কেউ আমার বন্দুকটা নিয়ে আয়। আর ট্যাপা, সবার সমানে ফ্যাট করে বলে দিসনা এ'টা তোর খেলনা  রাইফেল!

- আপনার লজ্জা করেনা দোলগোবিন্দবাবু?

- অ্যা! ও, ওহ। সরি সরি! সরি ইওর অনার! আমি ভাবলাম ড...ডাকাত পড়েছে। তবে খামোখাই ভয় পেয়ে গেছিলাম মশাই। আমি তো আর চোরছ্যাঁচোর নই যে আমার মেজানাইন ফ্লোরে রাখা ডিভানের গদির পেটে কোটিকোটি কালোটাকা পোরা রয়েছে। আমার আবার ভয় কীসের।

- ইওর অনার আবার কী! আপনি মাঝেমধ্যেই নিজেকে কাঠগড়ায় দেখতে অভ্যস্ত তাই না? 

- ওহ, তাই তো। এ'টা তো পার্লামেন্ট। সরি। সরি। একটু চোখ লেগে এসেছিল তো। তাই গুলিয়ে গেছিল। যাকগে, বলুন স্পীকারবাবু।

- বলবেন আপনি। সে'জন্যই আপনাকে ডাকাডাকি।

- ওহ হো। আগের ভদ্দরলোকের ওই ভ্যান্তেরা শেষ হয়েছে এতক্ষণে? উফ, বাপ রে বাপ। কী বাজে কথা রে বাবা...।

- এ'খানে একটা ডেকোরাম আছে। এ'টা পরনিন্দাপরচর্চার জায়গা নয়। জরুরী ডিসকাশন চলছে। বিরোধী হিসেবে আপনার কী বক্তব্য আছে সে'টাই বলুন। প্লীজ স্টিক টু দ্য টপিক। 

- জো হুকুম ধর্মাবতার...।

- এই সেরেছে...।

- সরি। সরি। ধন্যবাদ স্পীকার মহাশয়। এ'বারে যা বলছিলাম...এই যে বিল নিয়ে জলঘোলা হচ্ছে এত...। 

- দোলগোবিন্দবাবু...পার্লামেন্টে বসে ঘোঁতঘোঁত করে ঘুমোলে এই হবে। কিছুই তো জানেন না! জলঘোলা শব্দটা এ'খানে ব্যবহার করা নিষেধ।

- আজ্ঞে?

- নিষেধ।

- অ। তা ঠিক। তাই এ বিল নিয়ে এত কচকচি চলছে মশাই...।

- কচকচি? হাউ রিডিকুলাস। নাকচ।

- যাচ্চলে। যাকগে। এই বিল নিয়ে এই যে এত কেলোর কীর্তি...।

- আপনাকে আজ লাল কার্ড দেখতে হবে মশাই...।

- ধুত্তোর। যাক গে। আব্বুলিস। নতুন করে শুরু করছি। সরকারপক্ষ এই যে একটা বিটকেল বিল এনেছেন...। 

- এ'সব কী ভাষা? বিটকেল?

- আচ্ছা বেশ। রক্ষে করুন স্পীকারদাদা। এই যে  চমৎকার বিল পার্লামেন্টে আনা হয়েছে, তা'তে যে দশের এবং দেশের আখেরে ক্ষতি, সে'টা কি কেউ ভেবে দেখেছেন? আমি একটা রিপোর্ট কোট করছি...।

- এই দাঁড়ান দাঁড়ান দাঁড়ান। ক্ষতি? ক্ষতি তো নেগেটিভ শব্দ। আনপার্লামেন্টারি। ও'সব চলবে না। 

- লে হালুয়া।

- ও'টাও চলবে না। লে হালুয়াও বাদ। আপনি কি পার্লামেন্টারি এটিকেটের বইটা বেচে দিয়েছেন দোলগোবিন্দবাবু?

- বেচে দেওয়া ব্যাপারটা বোধ হয় পার্লামেন্টারি, তাই না?

- সারকাজম ? ফের নাকচ।

- ধেরছাই ছাতার মাথা।

- ছাতা শব্দটা ঠিক ছিল। ছাতার মাথাটা অফেন্সিভ। ছাতার বাট দিয়ে আক্রমণ করা আয়। আপনার মতলব ভালো বুঝছি না দোলগোবিন্দবাবু।

- এ তো আচ্ছা ঝামেলায় পড়া গেল। 

- ঝামেলা। ফের আনপার্লামেন্টারি।

- বেশ। বুঝলাম। আমি একটা কথাই বলতে চাই। বিলটা দারুণ হয়েছে। এক্কেবারে অপূর্ব! এ'বার যথেষ্ট পার্লামেন্টারি হয়েছে কি?

- এইবারে একশোয় একশো পেয়েছেন।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

ব্লগ-বাজ

আর চিন্তা নেই । বাঙালিকে আর রোখা যাবে না । আর সামান্য (সম্ভবত কিঞ্চিত গোলমেলে ) কবিতা ছাপাবার জন্যে সম্পাদক কে তোল্লাই দিতে হবে না । আর প্রেমে লটরপটর হয়ে ডায়েরি লিখে প্রাণপাত করতে হবে না। পলিটিক্স কে পাবলিক-জন্ডিস বলে গাল দেওয়ার জন্য আর “প্রিয় সম্পাদক” বলে আনন্দবাজারের ঠ্যাং ধরতে হবে না। কেন ?  হোয়াই? বাঙালি ব্লগিং শিখে গ্যাছে যে। ঘ্যাচাং ঘ্যাচাং করে শাণিত তলোয়ারের মত “ পোস্ট”-সমূহ জনতার ইন্টেলেক্ট এসপার-ওসপার করে দেবে ; হাতে-গরম গায়ে-কাঁটা। বাঙালি মননের নব্য জিস্পট ; ব্লগ-স্পট । কে বলে যে বাঙালি ব্রিগেডে বুক্তুনি দিয়ে আর ফুটবল মাঠে খেউড় করে খতম হয়ে গ্যাছে ? কে বলে যে বাঙালির ঘিলু কফি হাউসে ভাত ঘুমে মগ্ন ? বাঙালিকে একবার ব্লগখোর হতে দিন , সমস্ত অভিযোগ ভ্যানিশ হয়ে যাবে । পোপ থেকে পরশুরাম ; ডেঙ্গু থেকে মশাগ্রাম ; বং-ব্লগের দাপট রইবে সর্বত্র । বাঙালির সমস্ত আশা-ভরসা-জিজ্ঞাসা এইবারে ব্লগ মারফত্‍ পৌছে যাবে ট্যাংরা ট্যু টেক্সাস । তোপসে মাছের স্প্যানিশ ঝোলের রেসিপি কী ? বাঙাল-ঘটি মিল মহব্বত-হয়ে গেলে কি বাঙ্গালিয়ানা চটকে যাবে ? নেতাজী কি এখ

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু