Skip to main content

আমার জানলা দিয়ে যায় না দেখা



- কী বুঝছ ভায়া৷

- অ..অদ্ভুত৷

- ভূতের মুখে অদ্ভুত শব্দটা কেমন লাগে যেন।

- বেঁচে থাকতেও আমি ভূতে বিশ্বাস করতাম বটে৷ কাজেই ফস্ করে মরে গিয়েও যখন দেখলাম পুরোপুরি হাপিস হয়ে যাইনি, তখন চমকে যাইনি৷ কিন্তু এই সারপ্রাইজটা তখনও এক্সপেক্ট করিনি অমলদা।

- আরে আমারও তো মরার পর সে' অবস্থাই হয়েছিল ভাই বিনোদ৷ ভূত হয়ে দেদার ঘুরব, টেনশন-ফেনশন থাকবে না ভেবে দিব্যি ছিলাম৷ ইচ্ছে ছিল মাঝেমধ্যে এর ওর পিলে চমকে দেওয়ার৷ অথচ দেখ কত হ্যাপা৷ এর চেয়ে বেঁচে থাকার যন্ত্রণা কম৷

- অনেক কম। এমন জানলে নিজের শরীরটার অনেক যত্ন নিতাম৷ হাবিজাবি খেতাম কম৷ নিয়মিত যোগব্যায়াম করতাম৷

- কিন্তু এ পাপ থেকে তো মুক্তি পেতে না৷ কয়েক বছর এ'দিক ও'দিক হত৷

- ব্যাপারটা এখনও কেমন অবিশ্বাস্য ঠেকছে অমলদা৷ সত্যিই কি তাই?

- নতুন ভূতদের পুরনো ভূতরা গাইড করে দেয়৷ তোমাকেও ভালো মনে আমি বুঝিয়েপড়িয়ে নিচ্ছি৷ ঠকাব কেন বলো৷

- ছিঃ ছিঃ, আমি তা বলতে চাইনি৷ কিন্তু মানুষ মারা যাওয়ার পর তাদের ভূত টাইম ট্র্যাভেল করে জন্মের সময়ে ফিরে যায়, এমনটা কেমন যেন...কেমন যেন..।

- বিদঘুটে৷ তাই না?

- তাই তো।

- জন্ম থেকে মৃত্যু লূপে দেখে যেতে হবে৷ হাজার হাজার বছর ধরে৷ যদ্দিন না ডিভাইন সাইকেল ভেঙে গিয়ে মুক্তি পাচ্ছ৷ আমি সতেরো বার নিজের লাইফ রিওয়াইন্ড করে দেখে ফেললাম ভাই৷ এমন ভূতদেরও চিনি যারা বাহান্ন হাজারবার দেখেছে৷ আবার কেউ নাকি দু'তিনবার দেখেই মায়া কাটিয়ে হাওয়া হয়ে যায়৷ তারা অবিশ্যি মহাপ্রাণ৷

- মায়া?

- মায়া নয়? নিজের জীবনের প্রতি মুহূর্ত বারবার দেখতে পাওয়া৷ নিজের জন্ম, বেড়ে ওঠা, চোট-আঘাত-প্রেম-ভালোবাসা, দুঃখ, হতাশা, যন্ত্রণা, স্নেহ৷

- অমলদা, আমার জীবন বেশ বোরিং ছিল কিন্তু৷ প্রাইভেট ফার্মের ক্লার্ক৷ গতে বাঁধা সব কিছু৷ শেষবয়সে রোগেভোগে যাচ্ছেতাই একটা ব্যাপার..।

- সেই ফেলে আসা রুটিনের মায়া এ'বারে টের পাবে৷ এ সিনেমা বার বার দেখেও সাধ মিটবে না৷ সবচেয়ে বড় কথা, এ সিনেমার নায়ক তুমি নিজেই৷ যা কিছু বোরিং মনে হয়েছে বেঁচে থাকতে, এখন দেখবে সে'গুলো কী দুরন্ত৷ যত দুঃখ বয়ে বেরিয়েছ, সে'গুলোকে এখন বারবার পোষা বেড়ালের মত আদর করতে ইচ্ছে করবে৷ দূর থেকে নিজের হতাশার মুহূর্তগুলোকে দেখে মনে হবে, "উফ, বাঁচার মত বেঁচে নিয়েছি বটে"৷ এ এক অদ্ভুত ম্যাজিক ভাই বিনোদ।

- মিস্টিরিয়াস৷ কিছুই তো ছাই বুঝছি না৷ আচ্ছা, এই মাঝরাত্তিরে আমরা এই জানালাটার সামনে এসে দোল খাচ্ছি কেন? আমি কই?

- এ'টা হাসপাতালের জানালা বিনোদ৷ জানালার ও'পাশে তোমার মা শুয়ে৷ পাশে তোমার বাবা৷ ডাক্তাররাও আছেন৷ নার্সের কোলে তুমি৷

- ও'টাই...আমার মা? বাবা? ওরা আছে? ওদের দেখতে পাব? উফ অমলদা..।

- মায়া৷ মায়া৷ মনে রেখো, দেখা ছাড়া তোমার আর কোনও ভূমিকা নেই৷ আর যে'দিন দেখার ইচ্ছেটুকু যাবে, সে'দিন মুক্তি৷

***

ডাক্তার যখন খোকাকে সুতপার কোলে দিল, এক মুহূর্তের জন্য সুতপার মনে হলে রাতের জানালার বাইরে যেন কেউ আছে৷ তবে অন্যমনস্ক ভাবটা এক ধাক্কায় কেটে গেল, খোকা চিলচিৎকার জুড়েছে৷ 

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু