Sunday, August 21, 2022

আমার জানলা দিয়ে যায় না দেখা



- কী বুঝছ ভায়া৷

- অ..অদ্ভুত৷

- ভূতের মুখে অদ্ভুত শব্দটা কেমন লাগে যেন।

- বেঁচে থাকতেও আমি ভূতে বিশ্বাস করতাম বটে৷ কাজেই ফস্ করে মরে গিয়েও যখন দেখলাম পুরোপুরি হাপিস হয়ে যাইনি, তখন চমকে যাইনি৷ কিন্তু এই সারপ্রাইজটা তখনও এক্সপেক্ট করিনি অমলদা।

- আরে আমারও তো মরার পর সে' অবস্থাই হয়েছিল ভাই বিনোদ৷ ভূত হয়ে দেদার ঘুরব, টেনশন-ফেনশন থাকবে না ভেবে দিব্যি ছিলাম৷ ইচ্ছে ছিল মাঝেমধ্যে এর ওর পিলে চমকে দেওয়ার৷ অথচ দেখ কত হ্যাপা৷ এর চেয়ে বেঁচে থাকার যন্ত্রণা কম৷

- অনেক কম। এমন জানলে নিজের শরীরটার অনেক যত্ন নিতাম৷ হাবিজাবি খেতাম কম৷ নিয়মিত যোগব্যায়াম করতাম৷

- কিন্তু এ পাপ থেকে তো মুক্তি পেতে না৷ কয়েক বছর এ'দিক ও'দিক হত৷

- ব্যাপারটা এখনও কেমন অবিশ্বাস্য ঠেকছে অমলদা৷ সত্যিই কি তাই?

- নতুন ভূতদের পুরনো ভূতরা গাইড করে দেয়৷ তোমাকেও ভালো মনে আমি বুঝিয়েপড়িয়ে নিচ্ছি৷ ঠকাব কেন বলো৷

- ছিঃ ছিঃ, আমি তা বলতে চাইনি৷ কিন্তু মানুষ মারা যাওয়ার পর তাদের ভূত টাইম ট্র্যাভেল করে জন্মের সময়ে ফিরে যায়, এমনটা কেমন যেন...কেমন যেন..।

- বিদঘুটে৷ তাই না?

- তাই তো।

- জন্ম থেকে মৃত্যু লূপে দেখে যেতে হবে৷ হাজার হাজার বছর ধরে৷ যদ্দিন না ডিভাইন সাইকেল ভেঙে গিয়ে মুক্তি পাচ্ছ৷ আমি সতেরো বার নিজের লাইফ রিওয়াইন্ড করে দেখে ফেললাম ভাই৷ এমন ভূতদেরও চিনি যারা বাহান্ন হাজারবার দেখেছে৷ আবার কেউ নাকি দু'তিনবার দেখেই মায়া কাটিয়ে হাওয়া হয়ে যায়৷ তারা অবিশ্যি মহাপ্রাণ৷

- মায়া?

- মায়া নয়? নিজের জীবনের প্রতি মুহূর্ত বারবার দেখতে পাওয়া৷ নিজের জন্ম, বেড়ে ওঠা, চোট-আঘাত-প্রেম-ভালোবাসা, দুঃখ, হতাশা, যন্ত্রণা, স্নেহ৷

- অমলদা, আমার জীবন বেশ বোরিং ছিল কিন্তু৷ প্রাইভেট ফার্মের ক্লার্ক৷ গতে বাঁধা সব কিছু৷ শেষবয়সে রোগেভোগে যাচ্ছেতাই একটা ব্যাপার..।

- সেই ফেলে আসা রুটিনের মায়া এ'বারে টের পাবে৷ এ সিনেমা বার বার দেখেও সাধ মিটবে না৷ সবচেয়ে বড় কথা, এ সিনেমার নায়ক তুমি নিজেই৷ যা কিছু বোরিং মনে হয়েছে বেঁচে থাকতে, এখন দেখবে সে'গুলো কী দুরন্ত৷ যত দুঃখ বয়ে বেরিয়েছ, সে'গুলোকে এখন বারবার পোষা বেড়ালের মত আদর করতে ইচ্ছে করবে৷ দূর থেকে নিজের হতাশার মুহূর্তগুলোকে দেখে মনে হবে, "উফ, বাঁচার মত বেঁচে নিয়েছি বটে"৷ এ এক অদ্ভুত ম্যাজিক ভাই বিনোদ।

- মিস্টিরিয়াস৷ কিছুই তো ছাই বুঝছি না৷ আচ্ছা, এই মাঝরাত্তিরে আমরা এই জানালাটার সামনে এসে দোল খাচ্ছি কেন? আমি কই?

- এ'টা হাসপাতালের জানালা বিনোদ৷ জানালার ও'পাশে তোমার মা শুয়ে৷ পাশে তোমার বাবা৷ ডাক্তাররাও আছেন৷ নার্সের কোলে তুমি৷

- ও'টাই...আমার মা? বাবা? ওরা আছে? ওদের দেখতে পাব? উফ অমলদা..।

- মায়া৷ মায়া৷ মনে রেখো, দেখা ছাড়া তোমার আর কোনও ভূমিকা নেই৷ আর যে'দিন দেখার ইচ্ছেটুকু যাবে, সে'দিন মুক্তি৷

***

ডাক্তার যখন খোকাকে সুতপার কোলে দিল, এক মুহূর্তের জন্য সুতপার মনে হলে রাতের জানালার বাইরে যেন কেউ আছে৷ তবে অন্যমনস্ক ভাবটা এক ধাক্কায় কেটে গেল, খোকা চিলচিৎকার জুড়েছে৷ 

No comments: