Skip to main content

মৃণাল সামন্তের ছক



মন্ত্রী অমল ব্যানার্জীর সেক্রেটারি মৃণাল সামন্ত শশব্যস্ত হয়ে নিজের অফিসের লাগোয়া বারান্দায় পায়চারি করছিলেন৷ মন্ত্রী মশাই একটা মোক্ষম গোল পাকিয়েছেন৷ অবিশ্যি উঁচু দরের মানুষরা গোলমাল পাকাবেন বলেই মাইনে দিয়ে সেক্রেটারি রাখেন৷ সে'দিক থেকে ভেবে দেখলে মন্ত্রীদের অল্পবিস্তর গোলমাল পাকাতে না দিলে সেক্রেটারীর চাকরী রাখা মুশকিল৷ কিন্তু এ'বারের সমস্যাটা একটু উদ্ভট৷

এক বিটকেল শখের পাল্লায় পড়ে একটা এয়ারগান কিনেছিলেন অমলবাবু৷ সে এয়ারগান তিনি ব্যবহার করেন না, তবে রোজ সকালে সে'টা হাতে নিয়ে ইজিচেয়ারে আধঘণ্টা বসে মেডিটেট করেন৷ আজ সকালে, সামনের মাসের ইলকেশনের কথা ভাবতে ভাবতে আচমকা এয়ারগানের ট্রিগারে আঙুল পড়ে যায়৷ তা'তে বিশেষ ক্ষতি হয়নি, শুধু কাছেপিঠে উড়ে বেড়ানো একটা কাক খামোখা মারা যায়৷ এ পর্যন্ত সব ঠিকঠাক ছিল৷ পশুপ্রেমীদের থেকে সামান্য হুজ্জুত আশা করেছিলেন সেক্রেটারি সামন্ত৷ ও'সব 'ইস্যু' চেপে দিতে তিনি সিদ্ধহস্ত৷ আর সামান্য যে'টুকু নেগেটিভ পাবলিসিটি হবে, পলিটিক্সে সে'টা বেশ উপকারি৷

কিন্তু সমস্যাটা দাঁড়ালো অন্য জায়গায়৷ মন্ত্রীর ব্যালকনি থেকে এয়ারগান ছোঁড়া হল, সে গুলি হজম করে একটা সে কাক ঢ্যাপাৎ করে ব্যালকনির সামনের রাস্তায় পড়ে গেল; অথচ সে'টা কোনও গসিপবাজ রিপোর্টারের চোখে পড়ল না? সামনেই ইলেকশন, এ'দিকে একটা কাক নিকেশ করেও কোনও কাগজের পাঁচ নম্বর পাতার হেডলাইনেও আসতে পারলেন না মন্ত্রীবাবু? রামোহ্! অথচ এইত্তো, এই সে'দিনই অপোজিশনের সমীর সমাজপতি সাবুর খিচুড়ি খেয়ে তিন মিনিটে চারটে ঢেঁকুর তুলেছিলেন বলে অন্তত পাঁচজন রিপোর্টার ফলাও করে 'স্টোরি' করেছিল৷ মিডিয়া ফোকাসের বাইরে চলে যাওয়া হল পলিটিকাল প্লেগ৷ আরে বাবা কাজকর্ম করবে আমলারা, নেতা বাতেলা-বক্তৃতা ছেড়ে কাজ-কাজ করে কীর্তন শুরু করলেই সমূহ বিপদ৷ আর সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা অন্য জায়গায়; সামনের ইলেকশনে সমাজপতির ব্যাটা জিতলে সেক্রেটারি সামন্তর আন্ডার দ্য টেবিল টু পাইস আসাটাও বন্ধ হয়ে যাবে৷

নাহ্৷ কাকহত্যাটা এত সহজে হাওয়ায় মিলিয়ে গেলে চলবে না৷ একটা খতরনাক আইডিয়া ভেবে না বের করলেই নয়৷

**

- অমলবাবু, নিউজ আঠারো ঘা-তে আপনাকে স্বাগত জানাই৷ আচ্ছা স্যার, আপনি কোনওদিন ভেবেছিলেন যে একজন মন্ত্রীর পদ থেকে হুট করে আপনি সোজা চীফমিনিস্টারের চেয়ার হাঁকিয়ে বসবেন?

- দেখুন, রিপোর্টাদের আমি ফ্র্যাঙ্ক ওপিনিওন দিতেই পছন্দ করি৷ কাজেই আপনাকে বলি, কয়েক মাস আগেও এ'টা ভাবনি৷ তাছাড়া, মানুষের হয়ে কাজ করে যাওয়াটাই আমার একমাত্র ফোকাস৷ চেয়ারটেয়ার নিয়ে ভাবিনা৷ তবে আজ মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসে বেশ ভালোই লাগছে৷ আর এই দায়িত্বের গুরুভারটাও সামাল দিতে হবে৷ তাই না?

- ভোটের মাসখানেক আগে, সেই বিদেশী উগ্রপন্থীদের পাঠানো ড্রোনটাকে নিজের হাতে গুলি করে নামানোটাই কিন্তু টার্নিং পয়েন্ট ছিল, তাই না?

- আমি তো নিমিত্ত মাত্র৷ ওপরওলা দেশের এবং দশের দায়িত্ব এ অধমের কাঁধে চাপিয়ে পাঠিয়েছেন৷ যতটুকু ক্ষমতায় কুলোয়, করার চেষ্টা করি৷ আর ওই ড্রোন ইন্টারসেপ্ট করার দিনটা আজও স্পষ্ট মনে আছে৷ ব্যালকনিতে বসেই সেই কাকটাকে আমি স্পট করি৷ খানিকক্ষণ অবজার্ভ করতেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে, যে' ও'টার মুভমেন্ট আর পাঁচটা কাকের মত নয়৷ বেশ যান্ত্রিক একটা ব্যাপার রয়েছে, ঠিক যেন কেউ রিমোটে কন্ট্রোল করছে সে'টাকে৷ নিজের এক্সপিরিয়েন্স থেকে বুঝতে পারলাম, যে' ও'টা কাক নয়, ড্রোন৷ আর ডেফিনিটলি কোনও বদ উদ্দেশ্য নিয়ে আসা ড্রোন৷ তখন কি আর পুলিশকে কনটাক্ট করার সময় ছিল?

- ছিল না, তাই না?

- আলবাত সময় ছিল না৷ অগত্যা এয়ারগানটা হাতে নিয়ে নিজেকেই একটা চেষ্টা করতে হল৷ অবশ্য, একটার বেশি ফায়্যার করতে হয়নি৷ ছেলেবেলায় আমার গুলতির টিপও মার্ভেলাস ছিল যে৷

- গোটা শহরের মানুষ আপনার কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবে৷ অমন খুনে একটা টেররিস্ট আউটফিটের পাঠানো ড্রোন৷ উফ, আপনি যদি সে'টাকে না নামাতেন..। ভাবলেই শিউরে উঠতে হয়!

- সবই ওপরওলার কৃপা মশাই৷ হু অ্যাম আই? মিস্টার নো-বডি। আমি তো নগন্য একজন৷ অতি পাতি! মানুষের ভালোবাসায় আজ চীফ মিনিস্টার হয়েছি, তারা জোরজার করলে কাল প্রধানমন্ত্রীত্বের দায়িত্বও কাঁধে তুলে নিতে হতে পারে। জনতাজনার্দনের সেবা করতে পারছি, সে'টাই বড় কথা৷। তাই না?

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু