Skip to main content

পিলুর দাদা



- কী রে পিলু৷ ঘুমোসনি?

- নাহ্ রে দাদা৷ ঘুমটা ঠিক..ঠিক জুতসই ভাবে আসছে না।

- ঘাপটি মেরে পড়ে থেকে কী হবে বল৷ বরং উঠে টেবিল ল্যাম্পটা জ্বেলে বই পড়৷ তাক ভর্তি তো না পড়া বই৷

- সত্যিই৷ কত যে না পড়া আর আধপড়া বই। তবে কাল অফিস তো, তাই বেশি দেরী করে ঘুমোলে..।

- শুয়ে থেকেও ঘুমোতে পারছিস কি আদৌ? বরং খামোখা আরও টেন্স হয়ে পড়ছিস। একটু অন্যদিকে মন দিলে ঘুমটা আসবে বরং। বই না পড়িস, গান শোন। নিদেন পক্ষে পায়চারি কর খানিকক্ষণ৷ 

- নাহ্, গান বা হাঁটাহাঁটির চেয়ে বরং বইই ভালো৷ একটা চমৎকার বই পড়ছি, জানিস দাদা৷ শেষের দিকে আছি৷ 

- কোন বই রে পিলু?

- টারা ওয়েস্টওভারের আত্মজীবনী,  এডুকেটেড৷ বেশ ইন্সপ্যায়ারিং৷ আর কয়েক পাতাই বাকি আছে৷ সে'টাই বরং শেষ করি গিয়ে৷ 

- সেই ভালো৷ ঘুম নিয়ে যত টেন্স হবি, ঘুম তত কাঁচকলা দেখিয়ে দূরে সরবে৷ তার চেয়ে এই ভালো।

- নাহ্। বিছানায় শুয়ে ছটফট করার চেয়ে এই ভালো৷ 

- তবে! বললাম তো৷ 

- তা হ্যাঁ রে দাদা, তুই এই অসময়ে এ'খানে যে?

- ভেবে দেখ দেখি৷ আমি কেন এসেছি। 

- এক মিনিট৷ সত্যিই তো! তুই কেন এসেছিস? দাদা?

- কেন এসেছি? তোর টানেই যে ভাই৷ 

- দাদা, তোকে আমি দেখতে পারছি কেন? তোকে তো আমার দেখতে পাওয়ার কথা নয়৷

- এ'বার থেকে দেখতে পারবি৷ আর তো আমাদের কোনও তফাৎ রইল না৷ তাই ঝুপ করে এসে পড়লাম৷ আমি জানতাম একটা বই মাত্র কয়েক পাতাই পড়া বাকি আছে তোর৷ পিলু, ঘটনাটা সদ্যই ঘটেছে৷ পেজমার্ক দেওয়া বই শেষ করার সুযোগ পাওয়া যায় রে, আমি জানি। এ'বার চট করে বইটা শেষ করে ফেল৷ ততক্ষণ আমি অপেক্ষা করছি না হয়৷ তারপর দুই ভাই মিলে সরে পড়ব'খন৷ 

ওয়েস্টওভারের বইটা যখন খুলে বসল পিলু, তখন খাটে শুয়ে থাকা নিজের শরীরটার দিকে তাকিয়ে শিরশিরে একটা ভূতের ভয় অনুভব করতে পারল যেন৷ আর ব্যাপারটার বিটকেলপনায় নিজেই ফিক করে হেসে ফেলল সে।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু