Skip to main content

তেলাপিয়া


- আইয়ে বেগমসাহিবা, আইয়ে। 

- কী ব্যাপার? মেজাজ চনমন?

- রীতিমত। হাতের কাছে কাগজ কলম থাকলে কবিতাঠবিতাও লিখে ফেলতে পারতাম। বাড়ির পাশে এভারেস্ট থাকলে সামিটে গিয়ে আনন্দবাজার পড়তাম। 

- সর্বনাশ! ব্যাপারটা কী? বারো নম্বর টিউশানি জোটালে নাকি? তা'হলে তো কেল্লা ফতে, বাপুজি কেকে মোরব্বার টুকরো।

- গোটাদিন অফিস অফিস করে তোমার মেজাজটা একদম মার্সিনারি হয়ে গেছে। যাচ্ছেতাই৷ গা জ্বালানো।

- তা'হলে কী ব্যাপার জনাব? গোপন প্রেমিকাট্রেমিকা কেউ? গোলাপি কাগজে চিঠি লিখেছে?

- আমি স্পেসশিপে বার্থ রিজার্ভ করেছি আর তুমি পড়ে আছ হাওড়া স্টেশনের লোকাল ট্রেনের টিকিটের লাইনে।

- অফিস থেকে সবে ফিরলাম। সাসপেন্স সহ্য হচ্ছে না৷ ব্যাপার কী? মেজাজ এমন ফুরফুরে? খোলসা হোক। 

- আজ বাজার গেছিলাম। রুটিন বহির্ভূত ট্রিপ। আর তারপর রান্নাঘরে একটা ম্যাজিকাল স্পেল। আজ আর রুটি আলু চচ্চড়ি নয়৷ ও'দিকে ইয়ে শাম থা মস্তানি আর এ'দিকে রাত শবনমি।

- মাসের মধ্যিখানে এত নবাবি? স্পেশ্যাল বাজার সফর? রান্নাঘরে আলু চচ্চড়ির বদলে সারপ্রাইজ? 

- মেগা সারপ্রাইজ।

- বলো না গো, আরো টিউশনি পেয়েছ?

- আগে সারপ্রাইজটা বলি? ফ্রম রান্নাঘর?

- আমি আন্দাজ করি?

- শুট।

- ইলিশ। কিলোর বেশি ওজনের? বিয়ের আংটি বিক্রি করে দিয়েছ?

- নাহ্। হয়নি।

- পাঁঠা এনেছ? হোমমেড বিরিয়ানি? আরসালানের বাবা? 

- হলনা। ফের ফেল।

- গলদা? রিয়েলি? ওই সাহেবি রেসিপিতে?

- ধ্যাত্।

- তবে?

- তেরে লিয়ে পিয়া। তেলাপিয়া। মাছটার কোনো কদর নেই জানো, কেউ এলিট বলে মেনে নিল না। অথচ সর্ষেবাটায় যে কী অপরূপ স্বাদ। পাবলিকে এলিট না বলুক, জানপ্রাণ লড়িয়ে দিয়েছি সর্ষে বাটতে। মাইরি, ঠিক যেমন ফোকাস নিয়ে সেকেন্ড ইয়ারে তোমায় চিঠি লিখতাম। আর তারপর অবিকল মায়ের রেসিপিতে। 

- কেয়াব্বাত! সঙ্গে ভাত?

- দুধেরসর। আলবাত।

- জাদুকরের ফুরফুরে মেজাজের আড়ালে মনখারাপ? কী ব্যাপার?

- নন্তু ঝন্টুর বাবার ট্রান্সফার হয়ে গেছে জানো, আমার দু'টো টিউশানি আরো কমে গেল। আজ মায়ের জন্মদিন, মা ইলিশ ভালোবাসতেন। ভাবছিলাম সে অনারে আজ..। কিন্তু, কোথায় ইলিশ। তেলাপিয়াতেই হাফ-ফতুর হয়ে গেলাম। তবে খেয়ে দেখো...এ-ক্লাস।

- জানি বর। তোমার হাতের তেলাপিয়ার কাছে কোথায় লাগে বেগুনদেওয়া ইলিশের ঝোল।

- বেগুন দেওয়া ইলিশের ঝোল? 

- অফিস ফেরতা নিয়ে এলাম। মায়ের জন্মদিন। মনে ছিল। মায়ের ইলিশ বেগুনের রেসিপির সিক্রেট এক্স-ফ্যাক্টরও মনে আছে। সে'টা আমি বরং কাল রাঁধব 'খন। আজ তেরে সাথ পিয়া; তেলাপিয়া।

- হেহ্। টিউশনি মাটি, মাটি টিউশনি। পুজোর আগে আরো খান তিনেক পেয়েই যাব, কী বলো?

- বাড়তি তিনটে টিউশনি পেলে পুজোয় ঘাটশিলা কিন্তু৷ টানা তিনদিন।

- বেগমজান, ঘাটিশিলায় তেলাপিয়া পাওয়া যায়? 

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু