Skip to main content

দরদাম

দরদাম করাতে বাবার জুড়ি নেই। বাবার বিশ্বাস কাস্টোমার দরদাম না করলে মার্কেট বখে যায়। চশমায় নতুন লেন্স বসানোর জন্য বেশ ঝলমলে গ্লোসাইনওলা একটা দোকানে নিয়ে গেলাম বাবাকে। লেন্স ঠিকঠাক হল। শৌখিন সুরে 'ইয়েস স্যার' 'রাইট স্যার' বলা সেলসপার্সন শুধোলেন;

- "বিল করি স্যার"?
- "কেন"? বাবা সুট করে কাউন্টার করল। সেলসদাদা ঠিক তৈরি ছিলেন না।
- "এই যে স্যার, পছন্দ করলেন। এই লেন্স। বিদেশী। বিল করি"?
- " পছন্দ করেছি, তা বলে বিল করবেন কেন"?
- "করব না"?
- " দাম ঠিক হোক"।
- " ওই যে বললাম স্যার। দশ পার্সেন্ট অন এম আর  পি"।
- "ওহ৷ না৷ দশ পার্সেন্টে নেওয়া যাবে না"।
- " আমাদের ফিক্সড রেট স্যার। ওই যে দেখুন৷ দেওয়ালে লেখা আছে"।
- "রাইটিং অন দ্য ওয়াল"।
- " ইয়েস স্যার, বিল করি"?
- "আপনারা কখনও দরদাম করেন না"?
- "নেভার স্যার। রেপুটেশন আছে আমাদের একটা। আমি আপনাকে আমাদের বিলবই দেখাচ্ছি। নিজের চোখে দেখুন"।
- "লাস্ট দু'তিন বছরের বিল বই দেখব। মিনিমাম দুই"।
- " তা কী আর সম্ভব স্যার, প্রচুর বিল"।
- "আপনি দেখাবেন বললেন কিন্তু"।
- "স্যার, আপনি সিনিয়র। ঠিক আছে, আপনার জন্য আমি দশের জায়গায় বারো পার্সেন্ট অফার করছি"।
- "বারো"?
- " দুই পারসেন্ট বেশি। স্যার। বিল করি"?
- "দেওয়ালে লিখে রেখেছেন কেন? দরদাম হয় না! দিব্যি দশ থেকে বারো হলো"।
- " স্পেশ্যাল কেস স্যার। প্লীজ, বিল করি"?
- "কুড়ি পার্সেন্ট। আর দেওয়ালে এ'সব কথা লিখতে নেই। আপনি জানেন মিসাইল কেনা বেচাতেও দরদাম হয়"?
- " হয়"?
- "লিঙ্ক পাঠাবো। নম্বর দেবেন। পড়ে হাঁ হয়ে যাবেন। দরদাম ছাড়া কিস্যু হয় না। দিন৷ কুড়ি পার্সেন্ট"।
- " স্যার, পনেরো। প্লীজ স্যার। আর নয়"।
- "বেশ। পনেরো। বিল করুন। তবে একটা। দু'নম্বর চশমাটা থাক"।
- " থ্যাঙ্ক ইউ স্যার। থ্যাঙ্ক ইউ। পনেরো পার্সেন্ট কিন্তু হেফটি ডিসকাউন্ট স্যার। কোত্থাও পাবেন না৷ আর একটা করিয়ে নিতে পারেন কিন্তু"।
- "ইকনমিক্স দেখুন, একটা লেন্সের প্রয়োজন আর দ্বিতীয় লেন্সের প্রয়োজন এক নয়৷ একই দামে কী করে নিই"?
- "ইকনমিক্স। মিসাইল। স্যার, চা খাবেন"?
- " কফি"।
- "অফ কোউর্স, অ্যাই  দু'টো কফি আন। স্যার৷ পরেরটা বিল করে দিই? পরেরটায় সাড়ে সতেরো পার্সেন্ট কিন্তু"।
- " কফি ক্যান্সেল করুন। সাড়ে সাতেরো? এ'টা কোনো কথা হল? সাড়ে বাইশ দিলে ভাবব। আপাতত একটাই থাক"।
- "স্যার, আপনি না..। আচ্ছা বেশ, পরেরটা কুড়ি পার্সেন্ট ডিসকাউন্টে"।
- "নাহ, আপনার কথাও থাক। আমার কথাও থাক। পরের লেন্সটা কুড়ি পার্সেন্ট ডিসকাউন্ট। আর প্রথম লেন্সটা আপনার কথা মতই হোক; সাড়ে সতেরো"।
- " স্যার", ভদ্রলোকের গলা মিইয়ে এসেছিল।
- "কফিটা একটু তাড়াতাড়ি আনলে ভালো হয়"।

সেলসদাদা আর কথা না বাড়িয়ে বিলিং করে দিলেন; সাড়ে সতেরো পার্সেন্ট আর কুড়ি পার্সেন্ট ডিসকাউন্টে। দেওয়ালে "দরদাম করিবেন না" মার্কা একটা কাটআউটের পাশের ক্যালেন্ডারে রামকৃষ্ণ দিব্যি একগাল হাসি নিয়ে বসেছিলেন।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু