Skip to main content

চুলের যত্ন

খুব মন দিয়ে চুল আঁচড়াচ্ছিলেন মনোময়বাবু।

শালিমার আর চৌবাচ্চার জলে ভেজা চকচকে চুলকে প্রথমে পাট করে কপালের সামনে এনে জড়ো করা। তা'তে গেল দশ মিনিট। তারপর সিঁথিটা মাথার বাঁ দিকে ভালো করে কাল্পনিক রুলারে মেপে বসিয়ে নেওয়া, তা'তে আরও মিনিট পাঁচ। এরপর কপালের সামনের পাট করা চুল টেনে এনে শুইয়ে দেওয়া মাথার ডান দিকে। তা'তে আরও দশ মিনিট। তারপর দু'মিনিট মাথার বাঁদিক আঁচড়ে নেওয়া। শেষের মিনিট পাঁচ মাথার তালু থেকে ঘাড় পর্যন্ত  চিরুনি নেমে আসবে বারবার।

আধ ঘণ্টা পেলেই চুল আঁচড়ানোটা মনমত হতে পারে। কিন্তু তার উপায় নেই।

অফিস থেকে ফিরে স্নানটান করে আয়নার সামনে দাঁড়াতেই খোকার হোমওয়ার্ক বুঝিয়ে দাও বলে ঘ্যানঘ্যান, গিন্নীর বাজারের ফর্দ নিয়ে বাতিকগ্রস্ত বকরবকর, প্রতিবেশী নির্মলবাবুর "শুনেছেন মশাই?"গোছের যত ঝামেলা এই সময়। মনোময়বাবুর মনঃসংযোগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মেজাজ তিতকুটে হয়ে আসে। জ্যামিতির হিসেবে চুল যখন এলোপাথাড়ি, তখনই রণে ভঙ্গ দিয়ে ড্রেসিং টেবিলে চিরুনি নামিয়ে রাখতে হয়।

**

- কিছুতেই কিছু হল না ডাক্তার! আপনার ওষুধ সার্জারি সমস্ত ফেল। আমার আর কিছু হওয়ার নয়...।

- অমন মিইয়ে গেলেন কেন মশাই। পাশুপত অস্ত্রটা যে এখন ছাড়ব মনোময়বাবু...।

- এখনও অস্ত্র বাকি আছে আপনার আরসেনালে?

- ব্র‍্যান্ডনেম এমনি এমনি তৈরি হয়নি মশাই।

- আমার প্রব্লেম সলভ হবে ডাক্তারবাবু?

- ভরে যাবে! গ্যারেন্টি।

- ভরে যাবে?

- ভরপুর।

- ওষুধ আর ট্রান্সপ্লান্টের বাইরে অস্ত্রটা কী ডাক্তার বাটরা?

- আমি ম্যাজিশিয়ান মনোময়বাবু, আমার কাছে এসে কেউ বিফলমনোরথ হতে পারে না। আমার মূল অস্ত্র...।

- মূল অস্ত্র?

-  হিপনোটিজম।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু