Skip to main content

পোস্টকার্ড

দুপুরবেলা ঘরে খিল এঁটে ড্রেসিংটেবিলের সামনে বসে চিঠি লেখাটা নীলার অভ্যেস। ভাত খেয়ে এক খিলি পান মুখে দেওয়ার মত ব্যাপার। নিত্যনৈমিত্তিক।
এ'দিকে নিজের মনের সমস্ত কথা তো আবার যার তার কাছে উপুড় করে দেওয়া যায় না। চিঠি দেওয়ার জন্য নিজের মনের মত একটা নাম বেছে নিয়েছে সে; অনুপ সামন্ত। নিজের মনের মত একটা ঠিকানাও তৈরি করেছে নীলা। বত্রিশের এ, নাড়ুগোপাল দত্ত লেন, বারাসাত।

পোস্টকার্ডগুলো ডাকবাক্সেই বিসর্জন দেয় রোজ বিকেলে, টিউশন পড়িয়ে ফেরার পথে। ভুল ঠিকানার পোস্টকার্ড নিয়ে ডাকবিভাগ কী করে? ছিঁড়ে ফেলে? পুড়িয়ে ফেলে?

বৃষ্টি থামার পরে ছাদে উঠে গিয়ে হাওয়া চটি খুলে পায়চারি করেন অনুপবাবু।
ভালোবাসেন রাতের শেষ মেনলাইন লোকালের জানালায় মিঠে ফুরফুর।
আর মনে রাখেন পোস্টকার্ড প্রাপ্তি। গোটাগোটা অক্ষরে লেখা ঠিকানার মাথায় নিজের নাম। পোস্টকার্ডে পন্ডসের সুবাস।

"এই হল বত্রিশের নাড়ুগোপাল দত্ত লেন, এ'খানে আমি থাকি, রাইট সমরবাবু"?

"ঠিক"।

"আপনি থাকেন তেত্রিশ নম্বরে। রাইট"?

"ঠিক"।

"আমরা গত বাইশ বছর ধরে প্রতিবেশী, রাইট"?

"অবশ্যই স্বপনবাবু"।

"এই বাইশ বছরে আপনি খেয়াল করেছেন যে বত্রিশ নম্বর আর তেত্রিশ নম্বরের মধ্যে বত্রিশের এ রয়েছে"?

"বলেন কী"?

"একটা নীল রঙের ছোট্ট বাড়ি, একতলা। থাকেন অনুপ সামন্ত বলে একজন। হুগলী না ব্যান্ডেলে কী একটা কাজ করে"।

"সামন্ত, আমার বাড়ির পাশে। নীল বাড়ি। আপনি শিওর"?

"ভোজবাজি। ও বাড়ি নতুনও নয়। সে'দিন বাড়ির মালিককে পাকড়াও করতে অবাক হয়ে জানালে যে সে বহু বছর ধরে এ পাড়ায়"।

"ইয়ে মানে, হয়ত তাই হবে। আজকাল ক'জনই বা আমরা পাড়াপড়শির খবর রাখি। আমিই তো জানতাম আপনার ছেলে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। পরশু গিন্নী করেক্ট করে জানালে আপনার ছেলে হাজরায় ল পড়ছে"।

নীলার পোস্টকার্ড দু'একদিন না এলেই আয়নায় নিজেকে অস্পষ্ট দেখেন অনুপবাবু। বাড়ির পলেস্তরা ঝরে পড়তে শুরু করে। অফিস কামাই করতে শুরু করেন ভদ্রলোক।
"নীলা নিজের হাতের লেখার মতই ছেলে মানুষ", বলে গজগজ করে চলেন তিনি।

তারপর একদিন  পন্ডসের সুবাস মাখা পোস্টকার্ড এসে পড়তেই ফের অনুপবাবুর চনমনিয়ে ওঠা।

নীলার বড় জানতে ইচ্ছে করে ভুল ঠিকানার চিঠিগুলোর কী গতি হয়।

অনুপবাবু ট্রেনের দুলুনির তালে তালে নীলার কথা ভাবেন, মেয়েটা কি একটাও ইনল্যান্ড লেটার পাঠাবে না কোনওদিন?

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু