Skip to main content

ধোঁয়া

- শুনুন, এই যে ভাই, আপনাকে বলছি।

- কী ব্যাপার?

- সিগারেটটা নিভিয়ে ফেলে দিন প্লীজ। আপনার বন্ধুদেরও বলুন তাই করতে।

- আপনি কে?

- নীল আর্মস্ট্রং না হলে সিগারেট নেভানো যাবে না ভাইটি?

- অত বাতিক থাকলে বাড়ির বাইরে বেরোন কেন?

- আপনারা যে কারণে বেরিয়ে এসেছেন। এই প্রতিবাদ সমাবেশে সামিল হতে। এ'বারে সিগারেটটা ফেলুন প্লীজ। প্লীজ।

- রাষ্ট্রের তুঘলকিপনার বিরুদ্ধে প্রটেস্ট চলছে, আমরা সবাই জান লড়িয়ে দিচ্ছি। আর এই আপনি পড়েছেন সিগারেট খাওয়া নিয়ে? সত্যজিৎ রায় পাইপ মুখে দাঁড়ালে তো গলে পড়তেন। ইস্যুতে ফোকাস রাখুন।

- এতগুলো লোক ভাই। আমার মত বুড়োহাবড়াও কম নেই। অনিচ্ছুক লোকেদের ধোঁয়া গিলিয়ে কী লাভ বলুন!

- কে বলুন তো আপনি? সরকারের এজেন্ট নাকি যে কাঠি করছেন?

- ক্যান্সার অ্যাজমা গছানোর ফন্দিকে কাউন্টার করা মানে কাঠি করা?

- দেখে তো মনে হচ্ছে বাংলা সিরিয়াল দেখা মাল। কফি হাউসে গিয়ে কোবরেজি খাওয়া ছাড়া কোনওদিন কিছু করেছেন? লিটল ম্যাগ উলটে পালটে দেখেছেন এ জীবনে? বার্গম্যানের নাম শুনেছেন? গ্রুপ থিয়েটার সম্বন্ধে কতটা ওয়াকিবহাল আপনি? নিকারাগুয়ায় কী ঘটেছিল সে সম্বন্ধে খবর রেখেছেন বাপের জন্মে? ইনি আবার এলেন ক্যান্সার অ্যাজমা দেখাতে। কেটে পড়ুন দেখি। প্রতিবাদের সময় যত্তসব ঢ্যামনামো।

- প্রহিবিশন অফ স্মোকিং ইন পাবলিক প্লেসেস রুলস ২০০৮, শোনা আছে ভাই? জানা আছে?

- ধ্যার্বাল। মটকা গরম হয়ে যাচ্ছে মাইরি কাকা। এ বয়সে আপনি খামোখা ক্যালানি খেলে কাকিমার টেনশন বাড়বে।

- ধুস। এই বাজে তর্কে সব গেল গুলিয়ে, প্রতিবাদ সমাবেশের থীমটাই মাথা থেকে ফসকে গেল।

- এ'সব প্রতিবাদটতিবাদ আপনাদের মত ডোমেস্টিক পেটদের কাপ অফ টী নয় কাকু। কেন স্টাইল মারতে এসে পড়েন? বুদ্ধিতে ধোঁয়া দিন। ফালতু আইনটাইন দেখাতে আসবেন না। আর এ'বার ওই ব্যানারগুলো পড়ুন, ঝালিয়ে নিন আমাদের প্রটেস্টের সাব্জেক্ট। অসহায় মানুষ অত্যাচারিত হচ্ছে অথচ সরকার স্পীকটি নট হয়ে বসে। প্রটেস্ট তার এগেন্সটে।

- আই সী। তাহলে এই প্রতিবাদ সভা হচ্ছে খামোখা ক্যালানির বিরুদ্ধে তাই তো? বেশ বেশ। তবে এখানে থাকলে যা বুঝতে পারছি আমায় খামোখা ক্যালানি আর ক্যান্সারের মধ্যে একটা কিছু বেছে নিতেই হবে। বেশ, আমি আসি। তোমরা বিড়ি খাও। কেমন?

- না মানে আমি সে'ভাবে ঠিক...।

- না না। আমি চলি। তোমাদের বার্গম্যানি ফুসফুসই পারবে ভাই। আমার সিরিয়ালের টাইম হয়ে এসছে। আসি।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু