Skip to main content

ভদ্রেশ্বরের ভাস্কো দা গামা

- শুনুন।
- আমায় বলছেন?
- হ্যাঁ। আপনি কি ব্যান্ডেল পর্যন্ত?
- নাহ্, ভদ্রেশ্বর। আপনি কি বৈদ্যবাটি? প্ল্যাটফর্ম এদিকে পড়বে? সরে দাঁড়াব?
- বৈদ্যবাটিটা ঠিক ধরেছেন। তবে সাফিশিয়েন্ট জায়গা আছে। গলে যাব। সে জন্য আপনাকে ডাকিনি। আসলে আপনার দাড়িটা...বুঝলেন...আর তার সঙ্গে ওই লম্বাটে মুখের গঠনটা...প্লাস গায়ের রঙটায় যে রোদ পোড়া তামাটে ব্যাপারটা রয়েছে সে'টারও ইনফ্লুয়েন্স আছে খানিকটা...।
- তা'তে কী? দাড়ি, লম্বা মুখ, তামাটে রঙ, তা'তে কী এসে গেল?
- আপনাকে অবিকল ভাস্কো দা গামার মত দেখতে।
- ভাস্কো দা গামা?
- দ্য গ্রেট পোর্তুগিজ এক্সপ্লোরার। দুঃসাহসী এবং খুনে মেজাজ সম্পন্ন।
- আপনি জানেন যে ইতিহাসের বইতে ভাস্কো দা গামার যে'সব ছবি রয়েছে তার সবই কল্পিত? ভালো করে চেয়ে দেখবেন, শাজাহানের চেহারাও একই স্টাইলে আঁকা রয়েছে।
- আমাদের দেশে হিস্ট্রি বলে তো রাবিশ গেলানো হয়। সে'সব আনইম্যাজিনেটিভ বইকে বেস করে অতবড় একটা কথা বলে ফেলব ভেবেছেন?
- তবে?
- থাক।
- এ কী! থাকবে কেন?
- না থাক। বাদ দিন।
- আরে বলুন না। বৈদ্যবাটি ঢুকছে।
- আমি গামা সাহেবকে দেখেছি।
- ওহ। আই সী। আপনি বরং মানকুণ্ডুতে নামুন।

**

ডেলিপ্যাসেঞ্জারির হ্যাপার ওপর যদি এমন বাজে বকা নিয়ে কেউ ঘাড়ে চেপে বসে তাহলে কার মাথার ঠিক থাকে? বলে কিনা ভাস্কো দা গামা! এদের নাকে ঝামা ঘষা উচিৎ।

প্ল্যাটফর্মে নেমে কাজলের দোকান থেকে একটা ফ্লেক কিনতে গিয়ে সমস্যাটা মালুম হলো স্বদেশ সান্যালের। মানিব্যাগ সাফ। মানিব্যাগটা আছে, তবে ভিতরে খাঁখাঁ। না, একদম ফাঁকা নয়। একটা ছোট চিরকুট রয়েছে।

"গামা সাহেব,

কালিকটে কম নাস্তানাবুদ করেননি। তবে বিশ্বাস করুন, তার জন্যে রাগ পুষে রাখিনি। যেটুকু যা রাগ ছিল, কয়েকটা জন্মে সে'সব ডাইলুট হয়ে গেছে।

মরিচ মশলার জন্য কী খুনোখুনিটাই না করে বসলেন স্যার। তবে হাজার খুন মাফ করে দিই শুধু এই ভেবে যে আপনি এ দেশে লঙ্কা বয়ে এনেছিলেন। সামান্য ক'টা টাকা নিলাম, আপনার জিভের ডগায় সামান্য ঝালানুভূতি ছড়িয়ে দিতে। ডৌরো নদীর জলে ডৌরো পুজো আর কী।

ভালো থাকুন।

(রাগটাগ কম করুন। নাবিকদের অমন চণ্ডালে হাবভাব মানায়, ডেলি প্যাসেঞ্জারদের নয়)

ইতি,

জামোরিন, কালিকট/বৈদ্যবাটি"।

না হেসে থাকতে পারলেন না স্বদেশবাবু। মোবাইলে পর্তুগাল সম্বন্ধে সার্চ করতে করতে বাড়ির দিকে হাঁটা দিলেন ভদ্রলোক। গুবলুর হিস্ট্রি বইটইগুলো বের করে আজ একটু ভাস্কো বাবুর কীর্তিকলাপ সম্বন্ধে খবর নিতে হবে।

***

- হ্যাঁ গো, তুমি কি নিজের নাকখানা কুচিকুচি করে কেটে হরির লুটের মত পাড়ার রাস্তায় ছড়িয়ে না দেওয়া পর্যন্ত থামবে না?
- তুমি বড় বেশি চিন্তা কর গিন্নী।
- প্রফেসর হয়ে লোকের পকেট মেরে বেড়াও, চিন্তা করব না? পুলিশ এ বয়সে আড়ংধোলাই দিলে আর বাঁচবে গো?
- বত্রিশ বছর ধরে এই ফাইন আর্ট প্র‍্যাক্টিস করছি। আজ পর্যন্ত শুনেছ যে কোনওদিন ঝামেলায় পড়েছি? আর শোনো, আবারও বলি; আমি পকেটমার নই। আমি শিক্ষক। কলেজে ছেলেপিলেরা সিলেবাস বলতে অজ্ঞান। টিউশনেও সেই রোগ দেখে বীতশ্রদ্ধ হয়ে সে'দিকে ঘেঁষিনি। কেউ শিখতে চায় না মাইরি। আমি রোজ লোকের ঘাড় ধরে তাকে শিখতে বাধ্য করি, শেখার ইচ্ছেটা উস্কে দিই। আর তার বদলে সামান্য ফী নিই। ক্ষতি কী? আমি হলফ করে বলতে পারি আমার পকেটমারিতে কেউ মনমরা হয়ে পড়ে না, বরং পড়ে। জ্ঞানপিপাসা ইজ দ্য ফাইনেস্ট ফর্ম অফ আনন্দ গিন্নী। যে'দিন তোমার পকেট কাটতে পারব, সে'দিন বুঝবে।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু