Skip to main content

অমল তালুকদারের ভাবনা ২.০

১.
অমল তালুকদার ভাবার চেষ্টা করছিলেন যে তিনি আর বেঁচে নেই। দিব্যি লাগছিল তেমনটা ভেবে যেতে। খানিকটা সত্যিই লাগছিল ব্যাপারটা।

২.
ডাক্তার একরাশ বিরক্তি নিয়ে রিতাকে জানালেন "দেখুন ম্যাডাম, আপনি বেঁচে নেই। এই এক অদ্ভুত রোগ। দিব্যি মড়া আপনি, হঠাৎ কেন মনে হবে যে বেঁচে আছেন? এ'টা ভূতের দুনিয়া। জ্যান্ত হলে এ দুনিয়ায় আপনি থাকতে পারতেন? যত্তসব"!

৩.
শনিবার রাত্রে মাছ কিনে বাড়ি ফেরার পথে, গলির অন্ধকারে অমল তালুকদার দেখতে পেলেন দত্তদের ভাঙা বাড়ির কার্নিশে পা ঝুলিয়ে বসে একটি সাদা থান পরা ভূত। ভূত দেখে অমলবাবু বেশ নিশ্চিন্ত বোধ করলেন, যাক এর মাঝে নিশ্চই মরেফরে যাওয়া গেছে। বিশ্বাসে মিলায় বস্তু। তিনি আদতে ভূত বলেই এত সহজে ভূত দেখতে পারছেন।

৪.
মাছের ব্যাগ হাতে ভদ্রলোকের গভীর চাউনিতে এক লহমায় প্রেম চিনে নিয়েছিলেন রিতা। অন্ধকারে ভেসে যেতে ইচ্ছে করছিল তার। একজন মানুষ তার প্রেমে পড়েছে মানে সে নিশ্চই ভূত নয়। হারামজাদা থেরাপিস্টকে পেলে তার মাথার ঘিলু চেটে খাওয়া যেত। যদিও সে ব্যাটা স্কন্ধকাটা।

৫.
ঘেমেনেয়ে অস্থির বোধ করছিলেন অমলবাবু। রিতার সঙ্গে তিন মাস প্রেম করে তিনি মোক্ষম বুঝেছেন যে তিনি বেঁচে আছেন। আর রিতা আদতে ভূত।  রিতাকে তিনি সত্যিই ভালোবাসেন, ওর জন্য সুইসাইড করে ভূত হতেও তিনি রাজি। কিন্তু রিতাকে যদি বলা হয় সে ঠিক জ্যান্ত নয়, তাহলে সে রাগেদুঃখে প্রেমট্রেম ভেঙে দেবে। এ'দিকে মানুষে ভূতে প্রেমটা চালানোও সুবিধেজনক মনে হচ্ছে না।

৬.
রিতার নজর এড়িয়ে, আন্তর্জাতিক নোবেল কমিটির তদারকিতে, অতিগোপনে; অমল তালুকদারকে ফিজিক্স আর কেমিস্ট্রির জোড়া নোবেলে ভূষিত করা হয়। তাঁর যুগান্তকারী আবিষ্কার; শ্রডিঙ্গারের প্রেম।

Comments

shobdartho said…
অদ-ভূত সুন্দর :)
Unknown said…
ভাবা যায় না !

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

ব্লগ-বাজ

আর চিন্তা নেই । বাঙালিকে আর রোখা যাবে না । আর সামান্য (সম্ভবত কিঞ্চিত গোলমেলে ) কবিতা ছাপাবার জন্যে সম্পাদক কে তোল্লাই দিতে হবে না । আর প্রেমে লটরপটর হয়ে ডায়েরি লিখে প্রাণপাত করতে হবে না। পলিটিক্স কে পাবলিক-জন্ডিস বলে গাল দেওয়ার জন্য আর “প্রিয় সম্পাদক” বলে আনন্দবাজারের ঠ্যাং ধরতে হবে না। কেন ?  হোয়াই? বাঙালি ব্লগিং শিখে গ্যাছে যে। ঘ্যাচাং ঘ্যাচাং করে শাণিত তলোয়ারের মত “ পোস্ট”-সমূহ জনতার ইন্টেলেক্ট এসপার-ওসপার করে দেবে ; হাতে-গরম গায়ে-কাঁটা। বাঙালি মননের নব্য জিস্পট ; ব্লগ-স্পট । কে বলে যে বাঙালি ব্রিগেডে বুক্তুনি দিয়ে আর ফুটবল মাঠে খেউড় করে খতম হয়ে গ্যাছে ? কে বলে যে বাঙালির ঘিলু কফি হাউসে ভাত ঘুমে মগ্ন ? বাঙালিকে একবার ব্লগখোর হতে দিন , সমস্ত অভিযোগ ভ্যানিশ হয়ে যাবে । পোপ থেকে পরশুরাম ; ডেঙ্গু থেকে মশাগ্রাম ; বং-ব্লগের দাপট রইবে সর্বত্র । বাঙালির সমস্ত আশা-ভরসা-জিজ্ঞাসা এইবারে ব্লগ মারফত্‍ পৌছে যাবে ট্যাংরা ট্যু টেক্সাস । তোপসে মাছের স্প্যানিশ ঝোলের রেসিপি কী ? বাঙাল-ঘটি মিল মহব্বত-হয়ে গেলে কি বাঙ্গালিয়ানা চটকে যাবে ? নেতাজী কি এখ

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু